বর্ষার এই সময়টায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাণচাঞ্চল্য অনেকটাই বেড়ে যায় দক্ষিণের ফ্লোটিং মার্কেটগুলোকে ঘিরে। তাই নিজেকে মুহুর্তেই হারিয়ে ফেলতে পারেন অপরিসীম স্বর্গীয় সৌন্দর্যে।
‘ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল’-এ কথা হরামেশা সবাই শুনে থাকেন। কিন্তু নিজ চোখ না দেখলে বোঝা যাবে না এই নদী-খালের মর্মকথা। নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করা এসব খালে বর্ষার মৌসুমের পাশাপাশি শীতকালেও থাকে পানিপ্রবাহ।
বয়ে চলা নদী আর খালের দুই পাশের কোথাও হাট-বাজার, কোথায় বসতি আবার কোথাও আবাদী ফসলি জমি আর সবুজ গাছপালা দেখলে মনে হবে সবকিছুই ছবির মতো সাজানো।
পানিপ্রধান অঞ্চল বলেই দখিনের জনপদগুলোতে নৌকার ভূমিকা অপরিসীম। আবার হালের পরিবর্তনের সাথে সাথে সে নৌকায় বৈঠার বদলে লেগেছে ইঞ্জিনের ছোয়া। তবে বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি সদর উপজেলার জেলার ভিমরুলিতে, পিরোজপুরের আটঘর-কড়িয়ানা, নাজিরপুরের বৈঠাকাঠা ও বরিশালের বানারীপাড়ার সদর উপজেলা, উজিরপুর উপজেলার হারতা এলাকায় ঘুরলে দেখা যাবে শান্ত জলে মানুষের জীবন-জীবিকায় বৈঠার নৌকার ভূমিকা কতটা প্রবল। আর এসব এলাকায়ই ব্যবসা-বাণিজ্যের বৃহৎ অংশ ঘটে জলে বসে। তাই সময়ের সাথে সাথে বরিশাল, পিরোজপুরে আর ঝালকাঠিতে গড়ে উঠেছে অনেক ভাসমান হাট-বাজার।
ঝালকাঠি জেলার ভিমরুলি হাট মূলত খালের একটি মোহনায় বসে। সারাবছর ধরে প্রতিদিন ধরে চলা এ হাট জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বেশি জমজমাট থাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ হাটে ক্রেতা(পাইকার) ও বিক্রেতা (চাষী) সবাই খালের মধ্যে নৌকা নিয়ে চলাচল করে। পণ্য পছন্দ হলেই দর ঠিক রেখে কিনে ফেলেন পাইকাররা। একইভাবে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠি খালে স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ে হাট বসলেও বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই হাট বসে। তবে এ হাট ভোর হওয়ার আগে শুরু হয়ে সকাল ৯ টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
ভিমরুলি আর আটঘর, কুড়িয়ানা ও জিন্দাকাঠি খালে পেয়ারার মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে উৎপাদিত ফসল, যেমন-শাক-সবজি, লেবু, মরিচ, কচু, ডাব, মিষ্টি কুমড়া, কলা, আমড়া, করল্লাসহ বিভিন্ন ফসল বিক্রি হয়ে থাকে। যে নব পণ্য পাইকাররা কিনে সড়ক নয়তো নৌ-পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।
এদিকে শনিবার ও মঙ্গলবার বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদী ঘিরে বসে ধান-চালের ভাসমান হাট। যেখানে দেশীয় মোটা চালসহ নানান প্রজাতির চাল ও ধান পাওয়া যায়। তবে সকাল ৮টার পরে জমজমাট হয় এসব হাট।
অপরদিকে নাজিরপুরের বৈঠাকাঠা, উজিরপুরের হারতা, মাহমুদকাঠিসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বসে সবজির ভাসমান বাজার। যেগুলোর বেশিরভাগই নির্ধারিত দিনে বসে। যেমন নাজিরপুরের বৈঠাকাঠায় শনি ও মঙ্গলবার আর উজিরপুরের হারতায় রোব ও বুধবার বাজার বসে। এসব ভাসমান বাজারে স্থানীয় মানুষজন তাদের উৎপাদিত শাকসবজি নৌকায় করে নিয়ে এসে নৌকায় করেই বিক্রি করে থাকেন। এবার আসা যাক কিভাবে যাবেন এসব জায়গায়। ঢাকা থেকে বরিশাল-ঝালকাঠি কিংবা বানারীপাড়া-স্বরুপকাঠিতে লঞ্চে করে আসতে হবে। তবে বাসে করেও আসা যাবে। ঝালকাঠি থেকে সড়কপথে ভীমরুলি, আটঘর, কুড়িয়ানাতে এখন বাস ও ভাড়ায়-চালিতে মহীন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। আবার ইঞ্জিনচালিত নৌকাও রয়েছে।
একইভাবে বানারীপাড়া ও স্বরুপকাঠী থেকে সড়ক ও নৌ-পথে ভীমরুলি, আটঘর কুড়িয়ানা যাওয়া যায়। তবে বরিশাল থেকে সড়কপথেই যেতে হবে। এক্ষেত্রে খালে ঘুরে বেড়াতে কিংবা পেয়ারাসহ বিভিন্ন সবজির বাগানে ঘুরতে হলে হাটগুলো থেকে নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে নিতে হবে। অল্প ভাড়ায় ঘোরার জন্য এসব যানবাহনও সেখানে পাওয়া যায়।
আর বানারীপাড়ায় কিংবা উজিরপুরের হারতার ভাসমান হাট দেখতে হলে বরিশাল থেকে সরাসরি সড়কপথে বাসযোগে যাওয়া যাবে। তবে দল বেঁধে এলে ভ্রমণ-খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৭
এমএস/জেএম