ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আহ! নীরব জলের কোমর দোলানো নৃত্য!

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
আহ! নীরব জলের কোমর দোলানো নৃত্য! হাতিরঝিলের মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারা- ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: রাত ৯টা। হাতিরঝিল থেকে বেশিরভাগ মানুষ ফিরে গেছে আপন ঠিকানায়। যাদের বাসা আশপাশে-তারাই কেবল রয়ে গেছে। কেউ কেউ ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এরইমধ্যে বব ডিলান, পীট সিগার, মাইকেল জ্যাকসন ও শাকিরার ভুবন বিখ্যাত কয়েকটি গানের কোলাজ মিউজিক! হাতিরঝিলের পাড়ে স্টিলের মজবুত বক্সে বন্দি সাউন্ড বক্সে পাশ্চাত্য মিউজিকের ঝংকারে মুহূর্তের মধ্যে সবার মনোযোগ ছিনতাই!

যে যেখানে ছিল-সবার দৃষ্টি হাতিরঝিলের গুলশান-১ সার্কেল পয়েন্টের মাঝা-মাঝি মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ার দিকে। আহ! বিদেশি গানের তালে তালে নীরব জলের সে কি কোমর দোলানো নৃত্য!

হাতিরঝিল প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন শিক্ষক সম্প্রতি ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, এ প্রকল্পের লে-আউট যতগুলো সৌন্দর্য উপকরণে মোড়ানো, তার সবগুলো বাস্তবায়ন করা হলে উৎসুক দর্শানার্থীদের জায়গা দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।


হাতিরঝিলের মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারা- ছবি: শাকিল আহমেদ
ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার (২৮ জুন) রাতে বেশিরভাগ দর্শনার্থী ঘরে ফেরার পর ‘মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারায়’ নীরব জলের ওই কোমর দোলানো নৃত্য শুরুর পর হাতিরঝিলের চারপাশে হাজার হাজার চোখ, শত-সহস্র মোবাইলফোনের ক্লিক আর পাড় উপচানো ভিড় বুয়েট শিক্ষকের ভবিষ্যৎ বাণী যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
 
বেগুনি, নীল, আকাশী, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল-এই সাত রংয়ের শাড়ি পরা চিকন কোমরের জলের রাশি যখন উর্বশী নারীর মতো কোমর দুলিয়ে নাচছিল তখন বিমোহিত হাজার হাজার দর্শক। অনেকের চোখেই বিস্ময়!-এই কি সেই মশার প্রজনন ক্ষেত্র হাতিরঝিল? যার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে রোমাল দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না!
 
আজ সেখানে দাঁড়িয়ে সদ্য নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের রাজধানীবাসী দেখছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে হার মানানো ড্যান্সিং ফোয়ারার মনোমুগ্ধকর জলের ভেলকি! যার পাশ দিয়ে লাল-নীল আলো জ্বালিয়ে সহনীয় গতিতে ছুটে চলছে প্রমাণ সাইজের ওয়াটার ট্যাক্সি। যাত্রিরা তাকিয়ে আছে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে।

ঈদের ছুটিতে রাজধানী ছেড়েছে বেশিরভাগ মানুষ। যারা যেতে পারেন নি ছায়া ঢাকা, কোকিল ডাকা পল্লী মায়ের কোলে, তাদের কাছে রাজধানীর হাতিরঝিল এখন প্রধানতম আকর্ষণ। |
হাতিরঝিলের মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারা- ছবি: বাংলানিউজ
তাই ঈদের তৃতীয় দিনও ছিল হাতিরঝিলে উপচেপড়া ভিড়। দুপুরের পর থেকেই মূলত শহরের নানা প্রান্ত থেকে বিস্তৃত পরিসরের হাতিরঝিলে এসে জড়ো হয় লাখো দর্শনার্থী।

এদের মনকে বিনোদিত করতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রথম দফায় দেশীয় সংগীতের তালে তালে নেচে ওঠে মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারা। টানা ২০ মিনিট নৃত্যের পর থেমে যায় নীরব জলে শৈল্পিক নৃত্য। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ফিরে যায় ঘরে।
 
রাত ৯টার দিকে ফের নেচে ওঠে মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারা। এবার পাশ্চাত্য সংগীত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো সব শ্রেণীর দর্শনার্থীদের রুচি ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে সংগীতে নির্বাচনে এই বৈচিত্র্য দেখিয়েছেন।

গুলশান-১ সার্কেল পয়েন্টে হাতিরঝিলের ভাসমান মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারার মনোমুগ্ধকর নৃত্য দেখছিলেন একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ওয়ালিদ হাসান মামুন ও তার বন্ধু শাকিল ফেরদৌস জয়।

অনুভূতি জানতে চাইলে মামুন গেয়ে ওঠেন ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবেই হবে দেখা, দেখা হবে বিজয়ে!’
 
মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারার হৃদয়গ্রাহী ড্যান্সে অভিভূত ওয়ালিদ হাসান মামুনের কণ্ঠে একটি রিয়েলিটি শো’র এই সূচনা সংগীতের সঙ্গে তাল মিলালেন বন্দু শাকিল ফেরদৌস জয়। তিনি গেয়ে উঠলেন-‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয়, আমরা করব জয় একদিন ও…বুকের গভীরে, আমরা জেনেছি, আমরা করব জয় একদিন…

শুধু মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফোয়ারা নয়। হাতিরঝিলের গুলশান-১ নম্বর পয়েন্টে ভাসমান মঞ্চের কাছে শিশু পার্কে আন্ডার ল্যান্ড ফোয়ারাও কম বিস্ময়কর নয়। দল বেঁধে হৈ চৈ করা শিশুদের পায়ের নিচ থেকে হঠাৎ জলের বিচ্ছুরণ যে কাউকে এক টানে নিয়ে যাবে স্বর্গ রাজ্যে-বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা এতো দিন ছিল শুধুই কল্পনা! আজ তা বাস্তব।

বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৭
এজেড/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।