ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তৃতীয় দিনেও জমজমাট রমনা ও শিশু পার্ক

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
তৃতীয় দিনেও জমজমাট রমনা ও শিশু পার্ক রমনা পার্কে বান্ধবীদের নিয়ে সেফলিতে ব্যস্ত এ তরুণী- ছবি- জি এম মুজিবুর

ঢাকা: হামাগুড়ি দিয়ে কুঁজো বুড়ির মতো দাঁড়িয়ে থাকা বয়সী বটগাছটির ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। কংক্রিটে মোড়ানো শেকড় মূলে নারী, শিশু, তরুণ, তরুণী, যুবক, যুবতী, বৃদ্ধ, বৃদ্ধার ভার সইতে তার আপত্তি নেই। তাই বলে বয়সের ভারে ন্যুব্জ ডালগুলোতে পরিণত বয়সের কয়েক ডজন মানুষ ‘বাদুরের’ মতো ঝুলে থাকবে-সেটিও তাকে সইতে হবে?
 

কী আর করার? ঈদের আনন্দ বলে কথা। ইট-কংক্রিট-লৌহ-কাষ্ঠে ঠাসা নগরীর ‘কীট সদৃশ’ মানুষগুলো বছরের এ দিনটিতে ‘ভিমরুলের’ মতো এসে জড়ো হয় তার বেদীমূলে-ছায়াতলে।


 
মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান ও লম্ফঝম্প রাইডে ছোট ছোট শিশুদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস, বড়দের সেলফির হিড়িক, যুগলদের হৃদয় লেনদেনের সাক্ষী এ বটবৃক্ষ ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার (২৮ জুন) দর্শনার্থীদের জন্য হয়ে ওঠে অন্যতম বিনোদন বন্ধু।
 
দুপুরের পর পরই শিশু পার্কে ঢোকা ক্লান্ত মানুষগুলো দু’দণ্ড শান্তির জন্য বেছে নেন বয়সী এ বট গাছটি। বটের ছায়ায় বিছানার চাদর পেতে পুরো পরিবার নিয়ে বিশ্রাম, কংক্রিটের বেদীতে প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডা, কেউ কেউ আবার বটের মগডালে উঠে ‘শাখামৃগ’র মতো আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত ছিলেন!
 
আষাঢ়ের চিমটে গরম, মানুষের ভিড়, মাথার ওপর তেজদীপ্ত সূর্য-কোনো কিছুই দমাতে পারেনি বিনোদন পিয়াসী নগরবাসীর। ছেলে-মেয়ে, সন্তান-সন্ততী, বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে ঈদের তৃতীয় দিন শাহবাগে শিশু পার্কে হাজির হন হাজার হাজার মানুষ।
 
কু ঝিক ঝিক রেলগাড়ি, ফাইটার বিমান, লম্ফঝম্প, ঝোলানো চেয়ার, এসো গাড়ি চড়ি, আনন্দ ঘূর্ণী, ফুলদানী আমেজ, ঘূর্ণয়মান বিমানসহ সবগুলো রাইডের সামনে ছিল দীর্ঘ লাইন।

বিকেলের পর রমনা পার্কে বেড়ে যায় দর্শনাথী
ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অভিভাবকরা ছিলেন বিরক্ত। তবুও লাইন ছেড়ে বাসায় ফিরে যান নি কেউ। ঈদের কষ্টমিশ্রিত আনন্দ উপভোগ করে তবেই বাড়ি ফেরা।
 
কু ঝিক ঝিক রেল গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় নয়াব আলীর সঙ্গে। স্ত্রী সবিতা আলী এবং পুত্র সন্তান আরহান মুরসালিনকে নিয়ে মিরপুর থেকে শাহবাগ শিশু পার্কে আসা নয়াব আলী বাংলানিউজকে বলেন, রাইডে চড়ার জন্য ১০টি টিকিট কেটেছি। এখন পযর্ন্ত ৩টি টিকিট শেষ হয়েছে। রেল গাড়িতে চড়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি চার ঘণ্টা।
 
‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-বাঙালির এ শাশ্বত বাণীর বাস্তব প্রতিফলন চোখে পড়ল ‘আনন্দ ঘূর্ণী’র সামনে। ঈদুল ফিতর’র তৃতীয় দিন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য শিশু পার্কে আসছেন বিকাশচন্দ্র বৈদ্য।
 
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত বিকাশচন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, অন্যদিন এলে হয়তো এতো কষ্ট হতো না, কিন্তু তাতে তো আর ঈদের আমেজটা পাওয়া যেতো না। আনন্দ’র তো আলাদা কোনো রং, স্বাদ বা বর্ণ নেই। কী পূজা, কী ঈদ-সব আনন্দ’ই নির্মল ও সুন্দর।

বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় জমজমাট শিশু পার্ক
লম্ফঝম্প রাইডের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আসা খন্দকার পরিবারের পাঁচ সদস্যর সঙ্গে। সম্পর্কে চাচাতো, মামাতো, ফুপাতো ও খালাতো এ পাঁচ ভাইয়ের প্রত্যেকের বয়স অনূর্ধ্ব ১৩!
 
খন্দকার রাকিব হাসান, খন্দকার আফতাব হাসান মাহি, খন্দকার ঈশা, খন্দকার ইয়াসিন ও খন্দকার রিফাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঘোরাঘুরি করতে ভালো লাগে। শিশু পার্ক বেশি ভালো লাগে। কারণ, এখানে আমাদের মতো সবাই ছোট। বড়রাও আসে। কিন্তু ছোট মানুষই বেশি।
 
শিশু পার্কের বিপরীত পাশে রাজধানীর আরেক বিনোদন কেন্দ্র রমনা পার্কও ছিল জমজমাট। চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় নানা বয়সী মানুষ রমনা পার্কে এসে ভিড় জমিয়েছেন।
 
ঈদের ছুটিতে রাস্তা-ঘাট ফাঁকা থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রমনা পার্কে ঘুরতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। যথারীতি সেলফি ও ছবি তুলে সময় পার করেন তারা।
 
কেউ কেউ এসছেন পুরো পরিবার নিয়ে। পিকনিক মুডে ঘুরতে আসা এসব পরিবার বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার এনে সবাই খেয়েছেন গাছের ছায়ায়। আবার বয়স্ক দম্পত্তিও ঈদের ফাঁকা রাস্তার সুযোগ নিয়ে অনেক দূর থেকে এসেছেন রমনা পার্কে।
 
কথা হয় বনশ্রী থেকে আসা সারোয়ার আলম ও তার স্ত্রীর সঙ্গে। ষাটোর্ধ্ব এ দম্পত্তি বাংলানিউজকে বলেন, ইচ্ছা থাকলেও অন্য সময় এদিকে আসা হয় না। রাস্তা ফাঁকা থাকায় আজ এসেছি। সব মানুষেরই উচিত মাঝে মধ্যে প্রকৃতির কাছে আসা। এতে করে মন-মেজাজ-শরীর ভালো থাকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
এজেড/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।