ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনো বাড়ি ফেরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনো বাড়ি ফেরা!  ঈদের দু’দিন পরও ভিড়ের কারণে চরম ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই বাড়িতে যাচ্ছেন অনেকে। ছবি: শাকিল

ঢাকা: ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন ট্রেনের শেষ বগির করিডোরে। জীবননাশের শঙ্কা থাকলেও চোখে-মুখে তার বাড়ি যাওয়ার আনন্দ-উচ্ছ্বাস। জীবন-জীবিকার কারণে আগে বাড়ি যেতে না পারলেও ঈদের দু’দিন পর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছার কাছে এই ঝুঁকি যেন কিছুই না।

আলী হোসেনের বয়স ৬৫ বছর। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়।

বাড়িতে রয়েছে অবিবাহিত একটি মেয়ে ও ছেলে-ছেলের বৌ। ছেলে বৌ নিয়ে আলাদা হওয়ায় এখনো পরিবার চালাতে হয় তাকেই। অবিবাহিত মেয়েকেও বিয়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায়। তাই এই বয়সেও রাজধানীতে রিকশা চালান।

বগির ভেতরে জায়গা নেই, অনেকেই যাচ্ছেন করিডোরে, এমনকি বাথরুমেও।  ছবি: শাকিলঈদের সময় বাড়তি আয়ের আশায় বাড়িতে যাননি আলী হোসেন। ঈদের পরে যেতে পাননি ট্রেনের টিকিটও। যাত্রীদের বেশি চাপ থাকায় স্ত্রী রেজিয়া বেগমকে নিয়ে ট্রেনের শেষ বগির করিডোরে বসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে।

বুধবার (২৮ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জগামী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসে রওনা দেন আলী হোসেন।

ট্রেনটির যাত্রা শুরুর সময় সকাল সাড়ে ১০টা থাকলেও ১ ঘণ্টা দেরি করেছে। ফলে ট্রেনটিতে ছিল পরিবারের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বাড়িমুখী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। এমন অবস্থা যে, বগিতে জায়গা না পেয়ে অনেক যাত্রীকে বাথরুমে দাঁড়িয়েও যেতে হয়।

ঝুঁকি নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলী হোসনে বাংলানিজকে বলেন, ‘কি করুম বাবা, ভিতরে তো কোনো জায়গা নাই। তাই এহন এইভাবে যাইতাছি।   আর পইড়া যদি মইরা যাই, হেইডা আল্লাহ্‌র ইচ্ছা।   কিন্তু বাড়ি যাইতেই হইবো। আমার মাইয়া-পোলার কাছে ঈদে যাইতে পারছি না, তাদের কিছু কিনাও দিতে পারছি না। । এহন আল্লাহ্‌ যদি বাঁচায় রাহে, বাড়ি গিয়া কিছু কিননের লাইগা টেহা দিমু’।

আলী হোসেনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম বলেন, ‘এতো ভয় কিসের? মানুষ কি এইহানে বইয়া বাড়ি যায় না? কতো মানুষ যায়, তাগো কিছু হয় না, আমগো কি হইবো? এইহানে বইয়াই আরও আরামে যাইতাম পারুম’।

বগিতে দাঁড়ানো কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের আরেক যাত্রী খোকন মিয়া বলেন, ‘মাইনসের মাথা মাইনসে খায়। আগে যদি জানতাম, তাইলে আর ক’দিন বাদে বাড়ি যাইতাম। ভাবছি, ঈদের পরে যাত্রীদের সংখ্যা কম হইবো। এখন দেহি, আরেক তামশা’।

এখনো বাড়িমুখো যাত্রীদেরই ভিড় বেশি কমলাপুর রেলস্টেশনে।  ছবি: শাকিলকমলাপুর রেলস্টেশনে ঘুরে ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো ঘরমুখো যাত্রীদের সংখ্যাই বেশি। দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলগামী মোট ২২টি ট্রেন ঢাকা ছেড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
এমএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।