সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি লাউচাপড়া। গারো পাহাড়ের এ অংশে রয়েছে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ।
একেবারে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পাহাড়ঘেঁষা বিনোদনকেন্দ্রটিতে এসে ভ্রমণপিপাসুরাও খুশি। ঢাকা থেকে আসা যুবক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘এতো সুন্দর জায়গা আমি কখনোই দেখিনি। এখানে এসে প্রাণটা জুড়িয়ে গেছে’।
পাহাড়ের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে আকাশমণি, বেলজিয়াম, ইউক্যালিপটাস, রাবার, কড়ই ও ঔষধি গাছের বাগান ছাড়াও নানা জাতের লতা-গুল্ম। বাহারি এসব গাছ-গাছালিতে ঘেরা সৌন্দর্যমণ্ডিত সবুজের সমারোহে মুগ্ধ টাঙ্গাইল থেকে আসা কলেজছাত্র সাব্বির হোসেন বলেন, ‘সময় পেলে আবার আসবো’।
তিনি বলেন, ‘গারো পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে চোখে পড়েছে পাহাড় আর পাহাড়- যেন সবুজ গালিচায় মোড়ানো প্রকৃতি। সকল পাহাড় ও সবুজের মিলন ঘটেছে এই লাউচাপড়াতেই। ছবির মতো এ ধরনের অনেক দৃশ্যই ছড়িয়ে আছে চারপাশে। মনোরম এ পাহাড়ি পরিবেশে হেঁটে চারদিকে ঘুরে বেড়াতেই বেশি মজা পেয়েছি’।
১৯৯৬ সালে জামালপুর জেলা পরিষদ গারো পাহাড়ের ১৫০ ফুট উঁচু চূড়ায় ২৬ একর জায়গায় নির্মাণ করেছে ‘ক্ষণিকা’ পিকনিক স্পট। এ পিকনিক স্পটে রয়েছে ৬০ ফুট উঁচু সুরম্য টাওয়ার।
প্রতিদিন শতাধিক কার, বাস, মাইক্রোবাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের কলরবে লাউচাপড়ার ক্ষনিকা পিকনিক স্পটটি মুখরিত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও দুই ঈদে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
পর্যটকরা জানান, যাত্রাপথে রাস্তার দু’পাশে চোখে পড়েছে অপূর্ব দৃশ্য। পাহাড়ের পাদদেশে প্রবাহিত হওয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানির অজস্র ঝরনাধারাও মনোমুগ্ধকর।
কোথাও কোথাও গহীন জঙ্গল। আবার কোথাও কোথাও ন্যাড়া পাহাড়। সীমানার ওপারে চোখ মেললে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। বন্যহাতির পালও ঘুরে বেড়ায় লাউচাপড়ায়। তবে খুব কাছাকাছি গেলে জীবননাশের আশঙ্কা রয়েছে।
একটু অদূরেই গারো, হাজং ও কোচ সম্প্রদায়ের বসবাস। কঠোর পরিশ্রমী গারোদের জীবন-যাপন দেখেও পুলকিত হন দর্শনার্থীরা।
লাউচাপড়া বিনোদনকেন্দ্রের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া জানান, তিনি শিশুদের খেলনা সামগ্রী বিক্রি করেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার টাকা হলেও ঈদের দু’দিনে ১০ হাজার টাকা করে বেচা-কেনা হয়েছে।
মুড়ি ব্যবসায়ী জাফর জানান, প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টাকার বেচা-কেনা হলেও ঈদ ও ঈদের পরের দিন ৪ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন।
ঢাকার মহাখালী থেকে বিভিন্ন সার্ভিসের বাস সরাসরি আসে বকশীগঞ্জে, ভাড়া ৩০০ টাকা। সেখান থেকে ৩০ টাকা ভাড়ায় পাহাড়ি আঁকা-বাকা পথ দিয়ে যেতে হয় লাউচাপড়ায়। সরকারি ব্যবস্থাপনা ছাড়াও বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে এখানে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
এএসআর