নেত্রকোনা পৌর শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় দীর্ঘসময়ে চরম দুর্ভোগে থাকা ক্ষুব্ধ নাগরিকদের মুখে অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে বেহাল সড়ক নিয়ে দুর্ভোগ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
গত ৪০ বছরেও নেত্রকোনাবাসী সড়কের এমন করুণ অবস্থা দেখেননি জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি হায়দার জাহান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে পৌর সড়ক নিয়ে নাগরিকরা যে অসহনীয়, অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। হাঁটার পরিবেশ নেই, প্রধান সড়কসহ অলিগলিজুড়ে বড়বড় অসংখ্য গর্তে পানি জমে একেকটি ছোটখাট ডোবায় পরিণত হয়েছে! যানবাহন উল্টে গিয়ে কর্দমাক্ত পানিতে পড়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সড়কের দুরবস্থা নিয়ে পোস্টারিং পর্যন্ত হচ্ছে। ভাবতেও কষ্ট হয় পৌরবাসী নিজেদেরকে কতটুকু অসহায় বোধ করলে সড়ক ব্যবস্থার ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণের জন্য পোস্টারিংয়ের আশ্রয় নিতে হয়!বলছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খান রতন।
তিনি বলেন, ‘নেত্রকোনার উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলন’র পক্ষ থেকে এরই মধ্যে শহরজুড়ে পোস্টার সাঁটা হয়েছিল। সেখানে একটাই দাবি ছিলো, পৌর সড়কের দুর্গতি থেকে মুক্তি। পোস্টারিং, সব শ্রেণিপেশার মানুষের সমালোচনায় তোলপাড় শহর। তারপরও ঘুম ভাঙছেনা কর্তৃপক্ষের!অতীতেও যে সড়ক ব্যবস্থার দুরাবস্থা হয়নি তা কিন্তু না। তবে এখনকার সড়কে জনদুর্ভোগের চিত্র নজিরবিহীন। নেত্রকোনা উন্নয়নে নাগরিক আনন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক খানে আলম বাংলানিউজে বলেন, ‘পোস্টারিং করেছি তবুও যদি পৌরবাসী দুর্ভোগ আর এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পান। সবই ব্যর্থ চেষ্টা। অথচ মেয়র এসব সড়ক দিয়েই পৌর কার্যালয়ে যাতায়াত করেন।
মানুষকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে আওয়ামী লীগ নেতা নেত্রকোনা সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি গাজী মোজাম্মেল হোসেন টুকু মেয়রের কাছে সড়কটির কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি করেন।
এদিকে শহরের বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও পৌরসভা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে ইচ্ছেমত পারমিশন দেওয়ায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে তা গোটা শহরকে অচল করে দিচ্ছে। এমন বেহাল সড়কে হাফ কিলোমিটার পার হতে সময় লাগছে ঘন্টা দেড়েক! আর অদক্ষ অটো রিকশাচালকরা ঘটাচ্ছে একের পর এক দুর্ঘটনা। তারপরও নীরব পৌর মেয়র!
অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে আনা হবে মেয়র এমন ঘোষণা দিলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই।
আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবের মতে, নাগরিকদের যত রকমের দুর্ভোগ দেয়া যায় তিনি (মেয়র) সবই দিয়ে যাচ্ছেন। নগর পরিচালনায় মেয়রের এ ধরনের দায়িত্বে অবহেলা সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিতাকে বিতর্কে ফেলেছে।
আইনজীবী সুভাষ বণিক অজয় প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভাকে নিয়ে উপহাস করে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি নেত্রকোনা পৌরসভাকে ইউনিয়ন পরিষদ করার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার দাবি করেছেন। আর কমেন্ট বক্সে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং লিখেছেন ‘আপনাকে কথা দিলাম, দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে নেত্রকোনাকে আদর্শ একটি ওয়ার্ড করা হবে’।
আইনজীবী শহিদুল্লাহ লিখেছেন ‘লিখে কোন লাভ নেই; এরা পড়তে জানে না’। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আওয়াল শাওন, সহ-সভাপতি ওয়াসিম তালুকদার ও সদস্য ওমর সাইফুল্লাহ্ তারাও মনে করেন নেত্রকোনা পৌর সড়কের এ দুর্গতি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়েছে। ছাত্রলীগ নেতারাও এ চিত্র তুলে ধরে ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিয়ে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের প্রশ্ন, কোনো নেতা বা জনপ্রতিনিধির দায়িত্বে অবহেলার দায়ভার সরকার কেন নেবে! উন্নয়নবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সড়কের কাজের সবধরনের সুযোগসুবিধা ও অর্থের যোগান দিয়ে যাচ্ছে, তারপরও কেন কাজ হচ্ছে না? এ দায় নিশ্চয় সরকারের না।
ওই নেতারা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার দৈন্যদশায় বেহাল সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে সাধারণ মানুষ আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সরকারকে গালমন্দ করেন! কারো দায়িত্বে অবহেলা কিংবা স্বার্থের জন্য যদি কেউ সরকারকে ডোবাতে চায় ছাত্রলীগ তা মানবে না।
যার দায়িত্বহীনতা নিয়ে এতো কথা, তিনি নেত্রকোনা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম খান। মোক্তারপাড়া মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসে তিনি জানান, ‘আগামী দশদিনের মধ্যে পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলোর কাজ শুরু হবে। ’
এখন দেখার অপেক্ষা, তার এই বক্তব্য কতোটার কথার কথা, আর কতোটা কাজের কথা!
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা,জুন ২৮, ২০১৭
জেএম/