ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শিশু পার্কে প্রাণের উচ্ছ্বাস, রমনা-সোহরাওয়ার্দীতে ভিড়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
শিশু পার্কে প্রাণের উচ্ছ্বাস, রমনা-সোহরাওয়ার্দীতে ভিড় শিশু পার্কে প্রাণের উচ্ছ্বাস/ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রেলগাড়ির প্লাটফর্মে পৌঁছাতে পেরেছে ছোট্টমণি সাদিয়া। রেলগাড়ি এলে পিছনের লম্বা লাইনের যাত্রীদের সবার আগে উঠবে সে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বিরক্তি নেই, বরং অন্যান্য শিশুদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকাটাও উপভোগ করছে সাদিয়া।

ছয় বছরের ছোট সাদিয়া তার মা শিউলি বেগমের সাথে এসেছে ডেমরা থেকে, সঙ্গে ছোট ভাই অয়ন। নতুন জামা পরে ঈদের পরের দিন সকালে রাজধানীর শাহবাগে শিশুপার্কে এসেছে তারা।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকাল ১০টা থেকে দর্শনার্থী প্রবেশ শুরুর পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রেলগাড়িতে ওঠার লাইন কয়েক দফা পেঁচিয়ে ছাড়িয়ে গেছে বহুদূর। শত শত শিশু ও অভিভাবক তখন লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায়।

রেলগাড়িতে ওঠার আগে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ছয় বছরের সাদিয়া জানায়, ঝক ঝকা ঝক ট্রেন চলবে, এটাই বেশি মজার। দোলনা ও ম্যাজিক বোটেও উঠবে সাদিয়া।
শিশু পার্কে প্রাণের উচ্ছ্বাস/ছবি: দীপু মালাকার
শুধু ছোটদের এই রাইডটিই নয়, শিশু পার্কে ১১টি রাইডের প্রত্যেকটির সামনে দেখা গেছে ছোট শিশুদের নিয়ে শত শত মানুষের অপেক্ষা। টিকিট কাউন্টারের পর প্রত্যেক রাইডে ওঠার জন্য ১০ টাকার আলাদা করে টিকিট কাটতে হবে। প্রবেশের টিকিট কাউন্টারসহ অন্যান্য রাইডের কাউন্টারের সামনেও তুমুল ভিড়। শিশুদের সাথে সকল বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত শিশুপার্ক।

শিশুদের জন্য আরেকটি আকর্ষণীয় রাইড ‘লম্ফ ঝম্ফ’। এই রাইডটির সামনেও দীর্ঘ লাইন। রাইড থেকে নেমে সাড়ে পাঁচ বছরের মনিরা জানায়, অনেক ভালো লেগেছে। লম্ফ ঝম্ফ করতে আনন্দ পেয়েছি। তবে মাত্র তিন মিনিটের লম্ফ ঝম্ফ করে বিরক্তিও ছিল তার চোখেমুখে।

মিরপুর ১২ নম্বর থেকে আসা মনিরার মা মানজিরা জানান, ব্যস্ততার কারণে ঈদের দিন আসতে পারেননি সন্তানদের নিয়ে। ঈদের পরের দিন তাই সময় করে বাচ্চাদের নিয়ে এসছেন।

রাজধানীর ঘরে ঘরে চার দেওয়ালে বন্দি শিশুরা খানিক বিনোদনের সুযোগ পেয়ে যেন উল্লসিত ছিলো পুরো শিশু পার্কজুড়েই। ম্যাজিক বোটের সামনেও দেখা গেছে শিশুদের নিয়ে মায়েদের অপেক্ষা। রাইডে চড়ে আনন্দ উপভোগ করে তপ্ত দুপুরে রোদের মধ্যে কেউ কেউ বটগাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিচ্ছিলেন।

শিশু পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নবযান, রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, বিস্ময় চক্র, রেলগাড়ি, লম্প ঝম্প, এফ-৬ (জঙ্গি বিমান), ঝুলন্ত চেয়ার, ম্যাজিক বোটে উঠে আনন্দ উপভোগ করছে শিশুরা।

পার্কের ম্যানেজার মো. নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকে। আশা করছি ৫০ থেকে ৬০ হাজার হবে। ঈদের দিন দর্শনার্থী ছিলো ৪০ হাজার ৪৪৬ জন।
শিশু পার্কে বিভিন্ন রাইডের জন্য শিশু ও অভিভাবকদের ভিড়/ছবি: দীপু মালাকার
রাত ৮টা পর্যন্ত শিশু পার্কের প্রবেশদ্বার খোলা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবেশ করা দর্শনার্থীদের বের হতে রাত ১০টা বেজে যাবে।

দর্শনার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও শিশু পার্কের সামনে পুলিশ টহলে রয়েছে বলেও জানান নুরুজ্জামান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন পরিচালিত শিশু পার্কের চাপ সামলাতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে নতুন নতুন রাইড চালু করা হবে। শিশুদের বিনোদনের জন্য অন্যতম স্তান হয়ে উঠবে এই শিশুপার্ক।

অন্যদিকে শিশু পার্ক ছাড়াও পাশের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং রমনা পার্কেও দুপুরের পর ঢল নামে তরুণ-তরুণীদের। এছাড়াও টিএসসি এলাকায় সকাল থেকেই দেখা যায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষকে।

শাহবাগ এলাকার ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিমের দোকানে বেচাকেনাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।