ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জীবন সংগ্রামী আফতাবের ঈদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
জীবন সংগ্রামী আফতাবের ঈদ ষাটোর্দ্ধ আফতাব উদ্দিন। ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: ঈদ শেষ। সোমবার (২৬ জুন) রাত ৮টার মধ্যেই ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে বাড়ি ফিরেছেন অধিকাংশ মানুষ। রাত ৯টার পর থেকে নগরীর পাড়া-মহল্লার সড়কও ফাঁকা হতে শুরু করলো।

খোলা নেই খাবারের দোকানও। যেন ঘুমিয়ে গেছে ময়মনসিংহ নগরী।

রাস্তার বিজলী বাতিগুলোতেও গা ছমছমে আভা।

তবে এরই মধ্যে ব্যতিক্রম একজনের দেখা মিললো। রাত আড়াইটা অবধি তিনি নির্ঘুম চোখে বসে আছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দরিদরিয়ে ঘামছেন। সঙ্গী শুধু সন্তান ইলিয়াস।  

আনন্দঘন এ উৎসবের দিনে নতুন পোশাক পরা, খাওয়া-দাওয়া আর বেড়াতে যাওয়ার ভাবনা কাজ করেনি নগরীর নতুন বাজার মোড় এলাকার আফতাব ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী ষাটোর্ধ্ব আফতাব উদ্দিনের।

জনশূন্য প্রাণহীন নগরীতে পথচারী কিংবা বাড়ি ফেরা মানুষজনকে চাহিদামতো পণ্য সামগ্রীর যোগান দিতেই তার এমন প্রয়াস।

জীবনের এ বেলাতে এসেও সংগ্রামী এ মানুষটি বেচাবিক্রির মধ্যে দিয়েই ক্রেতাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন ঈদের আনন্দ।

রাত আড়াইটার দিকে নিজ দোকানে বসেই নানা ঘাটে বাঁক নেয়া জীবন সংগ্রামের বয়ান তুলে ধরে বয়োবৃদ্ধ আফতাব উদ্দিন জানান, এ দোকান ছাড়াও নগরীর কাঁচিঝুলি রোড এলাকায় লেপ-তোষকের একটা দোকান রয়েছে তার।

এসব ব্যবসার আয় দিয়ে তিন ছেলেকেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

শৈশবের ঈদের সঙ্গে জীবনের এ লগ্নের ঈদের পার্থক্য তুলে ধরেন নিজের জবানিতে। ‘ছেলে বেলায় বাবার সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়ে বাড়িতে এসে খাওয়া-দাওয়া করতাম।

এর আগেই নতুন পোশাক-আশাক কেনা হতো। সালামির আশায় বড়দের সামনে ভিড় জমাতাম। বাড়িতেও রান্না হতো অনেক খাবার-দাবার।

আর এখন নামাজ, খাওয়া-দাওয়ার ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলেও সেই আনন্দ ফিকে হয়ে এসেছে। ঈদের আগের দিন থেকে সোমবার (২৬ জুন) দিনগত রাত আড়াইটা অবধি প্রায় ৪২ ঘণ্টাই কেটেছে দোকানে। বেচাকেনার ভিড় সামাল দিতেই বার বার গলদঘর্ম হতে হয়েছে।

সারাটা দিন দোকানের ভেতরেই কেটে গেলেও কোন দু:খবোধ নেই তার মনে। বয়োবৃদ্ধ আফতাব উদ্দিনের ভাষায়-‘ নগরীর বেশিরভাগ দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।   কিন্তু আমার দোকান খোলা থাকায় পাবলিককে সেবা করতে পারলাম। একই সঙ্গে ব্যবসাও ভালো যাচ্ছে। নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত সব ধরনের ক্রেতার স্বার্থেই আমার দোকান খোলা রয়েছে।

সাধারণত জরুরি বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের ঈদে ছুটি মেলে না। উৎসব আনন্দের আতিশয্যে নিজেদের ভাসিয়ে দেবার পরিবর্তে পরিবার থেকে তাদের থাকতে হয় অনেক দূরে।

কিন্তু আফতাব উদ্দিনের মতো জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেড়ানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পেটের দায়ে ছুটি মেলে না।

বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে থেকেও পরিবার-স্বজন থেকে নিজেকে গুটিয়ে এভাবেই কান্তিহীন পথ চলা। পুরো ঈদের দিন বা সময় দু’টাকা আয় রোজগারের জন্যই কাটিয়ে দিতে হয় তাদের।

পরিপূর্ণ ঈদের সংজ্ঞাটাও তাদের কাছে এমনই। সুখ-দু:খ, অভাব ভাগাভাগি করে নেয়ার ঈদ আফতাব উদ্দিনদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।