ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘নতুন জামা লাগবো না, বাবারে আইন্যা দিলেই অইবে’

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
‘নতুন জামা লাগবো না, বাবারে আইন্যা দিলেই অইবে’  নতুন জামা নয়, বাবাকে ফেরত চায় রহিমা। ছবি: বাংলানিউজ

মঠেরখাল গ্রাম (পাথরঘাটা) ঘুরে এসে: ‘মোর স্বামী ও পোলা দুইডারে সাগরে খাইয়া হালাইছে। সাগরে মাছ ধরতে যাইয়া আর ফিররা আয় নাই তারা। মোগো নতুন জামা-কাপড় লাগবে না, স্বামী-পোলারা থাকলেই অইতো’।

কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের মঠেরখাল গ্রামের রানী বেগম।

রানী বেগমের স্বামী ইসমাইল ফরাজী এবং দুই ছেলে শহিদুল ফরাজী ও সাইফুল ফরাজী সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রচণ্ড ঢেউয়ে ট্রলারসহ ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন তিন বছর আগে।

সেই থেকে মেয়ে রহিমা ও ছেলে রফিকুলকে নিয়ে অভাব-অনটনে কোনোমতে জীবন চলছে তার। স্বজন হারানোর বেদনা প্রতি মুহূর্তে কাঁদায় রাণী বেগম ও ছোট সন্তান দু’টিকে।

৮ মাসের ছেলে আবদুল্লাহ ও স্ত্রীকে রেখে একই ট্রলারে নিখোঁজ হন শূন্যভাগী মো. ফরিদ মিয়াও। এখনকার প্রায় চার বছর বয়সী সেই আবদুল্লাহ হেসে-খেলে বেড়ালেও বাবার অভাব বুঝতে পারেনি। তবে বাবার আদর-স্নেহ ও মায়া থেকে যে বঞ্চিত, তা বুঝতে পেরেছে অবুঝ শিশুটি।

ঈদের নতুন জামা-কাপড়ের জন্য নানী ফতেমা বেগম আবদুল্লাহকে কোলে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়ে হইছে বিধবা, আবদুল্লাহ হইছে বাবাহারা। ঈদের জন্য নতুন জামা কেনারও টাকা নাই। এজন্য মানুষের কাছে হাত পেতেছি’।

বাবার অভাব না বুঝলেও আদর-স্নেহ বঞ্চনা বুঝতে পেরেছে আব্দুলালাহ।  ছবি: বাংলানিউজ২০১৪ সালের মে মাসে ট্রলারটি ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হন ওই চারজনসহ আরও অনেকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরিবারের একমাত্র রোজগারের ব্যক্তি না থাকায় বছরের পর বছর ধরে অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছে এই পরিবারগুলো। সরকারিভাবে কোনো সহায়তাও পায়নি নিখোঁজ ইসমাইল ও ফরিদের পরিবার।

প্রতিদিন পাথরঘাটাসহ উপকূল থেকে শতাধিক ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। প্রতিটি ট্রলারে ১৫ থেকে ১৮ জন জেলে সপ্তাহ ধরে ঘুরে ঘুরে মাছ শিকার করেন। মাছ ধরা অবস্থায় ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল বা দুর্যোগের কবলে পড়ে প্রায়ই নিখোঁজ হন তাদের অনেকে। মাঝে-মধ্যে দু’একজনের মরদেহ পাওয়া গেলেও অধিকাংশই নিখোঁজই থেকে যান।

নিখোঁজ ইসমাইল ফরাজীর স্ত্রী রানী বেগম আরও বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজন বলতে বাবা-মা, শাশুড়ি ও শিশু ছেলে-মেয়ে দু’টি ছাড়া কেউ নেই আমার। স্বামীকে ছাড়া ৮ ও ১২ বছরের সন্তানকে নিয়ে আমি কিভাবে বাঁচবো। ৩ বছরেও সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। মেম্বারের কাছে বার বার গেলেও সহায়তা করেননি, উল্টো তাড়িয়ে দিয়েছেন’।

আবদুল্লাহ, রফিকুল ও রহিমাও এখনো বাবার অপেক্ষায় আছে। ৮ বছরের শিশু রহিমা জানায়, ‘নতুন জামা-কাপড় লাগবো না, মোর বাবারে আইন্যা দিলেই অইবে’।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।