ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অন্যরকম ঈদ, আনন্দটাও ভিন্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
অন্যরকম ঈদ, আনন্দটাও ভিন্ন শাহবাগ থানায় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যরা- ছবি- দিপু মালাকার

ঢাকা: ঘড়িতে সময় সকাল ৮টা ছুঁই ছুঁই। রাজধানীর শাহবাগ থানায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো প্রায় ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য বসে আছেন ডিউটি অফিসারের কক্ষের সামনে। কথা বলে জানা গেলো তারা রিজার্ভ পুলিশ সদস্য। জরুরি প্রয়োজনে মাঠে নামতে প্রস্তুত। 

এদিকে নিয়মানুযায়ী এরইমধ্যে নতুন কর্মদিবস শুরু করেছেন অন্য পুলিশ সদস্যরা।

স্বাভাবিকভাবে একটি থানার প্রাত্যহিক সকালের চিত্র এমনটাই।

তবে পেশাদারিত্বের বাইরে বিবেচনা করলে আজকের সকালটি অন্য আর দশটি সকালের মতো নয়। আজ ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সব মুসল্লি দল বেধে ছুটছেন ঈদগাহের পানে। ধনি-গরিব, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই আজ মেতে উঠেছেন ঈদের খুশিতে।
 
সোমবার (২৬ জুন) ঈদ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অন্যতম ব্যস্ত শাহবাগ থানার ব্যস্ততা যেন আরো বেশিই দেখা গেলো। কারণ জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এ থানা এলাকাতেই।
 
ডিউটি অফিসারের কক্ষে ওয়ারলেসে ভেসে আসছে ঈদগাহের সার্বিক পরিস্থিতির বর্ণনা। ঈদ জামাতকে ঘিরে পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং, নির্দেশনা, আর প্রত্যেক সদস্যের তৎপরতা কতোটা কঠোর ছিল তা বুঝতে বাকি নেই।

জাতীয় ঈদগাহের সামনে দায়িত্ব পালনরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা
কথা প্রসঙ্গে ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবরাজ চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, সরাসরি জনগণের সেবা করার সুযোগ আমাদের এ পেশায়। যেকোনো সময় দায়িত্বপালনে প্রস্তুত থাকতে হয় আমাদের। তাই আমাদের কোনো সরকারি ছুটিরই হিসেব থাকে না।
 
তিনি বলেন, আমরা ছুটি উপভোগ করলে জনগণ ছুটি উপভোগ করবে কীভাবে? ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে ভোর থেকেই আমাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। থানার কর্মকর্তাসহ বেশিরভাগ সদস্যরাই জাতীয় ঈদগাহ কেন্দ্রীক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। অল্প কয়েকজন সদস্য ছুটি পেলেও বাকিরা প্রতিদিনের মতো নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
 
বিশেষ দিন উপলক্ষে থানার ক্যান্টিনেই আজ সেমাই আয়োজন করা হয়েছে। সুবিধা অনুযায়ী যে যার মতো সেমাই খেয়ে আসছেন।
 
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পাশের মসজিদেই নামাজ আদায় করে এসেছেন টেলিফোন অপারেটর মো. রইস। নামাজ শেষে থানায় এসে সবার সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।
 
তিনি বলেন, আমাদেরতো ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায়ের সুযোগ নেই। তাই সুযোগ বুঝে পাশের মসজিদেই নামাজ আদায় করেছি। ঈদে ইচ্ছে করলেইতো আর ছুটিতে যাওয়া যায় না। কারো না কারো ডিউটি করা লাগবেই। তাছাড়া ডিউটিতে একলা থাকলে কষ্ট লাগতো, এখন অনেকেই আছি, তাই খারাপ লাগে না।
 
এ ফাঁকেই চাঁদপুরের একটি পরিবার ঢাকা মেডিকেলে রোগী মৃত্যুজনিত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে এসেছেন। এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এসআই দেবরাজ।
 
সোয়া ১০টা নাগাদ ওয়ারলেসে শোনা গেলো ডিএমপির সব থানা এলাকায় ঈদের জামাত শেষ। শুধুমাত্র বায়তুল মোকাররমে একটা জামাত বাকি আছে। ততক্ষণে ঊর্ধ্বতনরা থানায় আসছেন। নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে পেরে তাদের চোখেমুখে কষ্টের বদলে যেন স্বস্তির ছাপ।
 
থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ভোর ৫টা থেকে আমরা রমনা বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) নেতৃত্বে জাতীয় ঈদগাহ এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছি। সব মুসল্লির নামাজ আদায় নিশ্চিত করতে পুরো ঈদগাহ এলাকা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেস্টনির মধ্যেই ছিল।
 
সবাই নামাজ আদায় করছে আর আপনি দায়িত্ব পালন করছেন? এ বিষয়ে কথা বলতেই তিনি বলেন, আমাদের পরিশ্রমের কারণে অন্যরা সবাই নামাজ আদায় করতে পেরেছেন, তাই কষ্টের চেয়ে আনন্দটাই বেশি।  
 
তার ভাষায়- ‘আসলে ঈদটা আমাদের কাছে একটু অন্যরকম, আনন্দটাও অন্যরকম। ’
 
বাংলাদেশ সময়:১৫৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।