ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের ক্ষোভ-অভিমানের ঈদ

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের ক্ষোভ-অভিমানের ঈদ বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের ক্ষোভ-অভিমানের ঈদ/ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ঈদের দিন ভোর থেকেই সন্তানের প্রিয় খবার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মায়েরা। বাবারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সন্তানের ঈদের দিনটিকে রাঙিয়ে ‍তুলতে। দিনরাত সন্তানের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা সেই বাবা-মা যখন বৃদ্ধ হয়ে যান তখন যেন সম্পর্কে মেঘ জমে। নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গানটিই যেন বাস্তব হয়ে যায়। নিঃসঙ্গ, অসহায় হয়ে পড়েন বৃদ্ধ বাবা-মা।

সোমবার (২৬ জুন) ঈদ‍ুল ফিতরের সকালে আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে আসছেন সংস্থাটিতে থাকা বয়স্করা। ঈদের নামাজে যাচ্ছেন তারা।

সামনে গিয়ে কথা বলতে চাইলে গণমাধ্যম কর্মী শুনে নিঃশব্দে চলে গেলেন অনেকে। একজন শুধু বললেন, মা! মিডিয়া কি আমাদের কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে আসে? সারা বছর কোনো খোঁজ না নিলেও পুরোনো দিনগুলো, কষ্টের কথা মনে করিয়ে দেয় ঈদের দিন।

প্রবীণ নিবাসের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে ভেতর থেকে দৌড়ে আসেন নিরাপত্তা কর্মী শহীদুল। সাংবাদিক শুনতেই বললেন, মিডিয়া ঢোকা নিষেধ। অফিস থেকে না করে গেছে।

কেন জানতে চাইলে বলেন, এখানে যারা থাকেন তারা সবাই সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ। মিডিয়ার কারণে তারা বিরক্ত। তাই এবার ঈদে মিডিয়া ঢোকা নিষেধ অফিস থেকে।

৬৬ বছর বয়সের এক প্রবীণ বেড়িয়ে যাচ্ছেন। খুব কঠোরভাবে জানতে চাইলেন, কেন এসেছেন? মিডিয়া তো সারা বছর কোনো খোঁজ নেয় না। ঈদ এলেই আমাদের কাছে আসে। লোক দেখানো সিমপ্যাথি আমরা চাই না।

বেশ খানিকটা রেগে চেয়ারে বসে বললেন, আমি এক সময় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলাম। একটি সংস্থার হর্তাকর্তা ছিলাম। ছেলে-মেয়েরা স্বাধীন জীবন চায়। তারা একা থাকতে চায় বলে আমিই এখানে চলে এলাম। কই কখনো তো কেউ এই একা মানুষটির কথা জানতে চায়নি। ঈদ এলে মিডিয়া দৌড়ে আসে।
বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের ক্ষোভ-অভিমানের ঈদ/ছবি: জিএম মুজিবুর‘সন্তানরা আমার সাথে যাই করুক আমি চাই না তাদের কোনো অসম্মান হোক। কিন্তু মিডিয়া তো তা বুঝবে না। তারা শুধু তাদের ব্যবসাটাই বুঝবে। ’ বলতে বলতে রুমালে চোখটা আড়াল করে চলে যান প্রবীণ ওই ভদ্রলোক।

অনেকে নিজের সব দুঃখকে আড়াল করে বলেন, আমরা ভালোই আছি। দেখুন আমরা যারা এই প্রবীণ নিবাসে থাকি প্রত্যেকেই এক সময় যার যার কাজের জায়গায় সফল ছিলাম। এই যেমন আমার কথাই ধরুন। আমার নিজের ঢাকাতে কয়েকটা ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু একমাত্র ছেলের বৌ চায় না, আমি তাদের সাথে থাকি। এই বয়সে একা থাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। কখন অসুস্থ হয়ে যাই। ছেলের সংসারে অশান্তি হোক চাই না। তাই আমি চলে আসছি।

বৃদ্ধাশ্রমের অনেকেই গল্পই এমন। কিন্তু মিডিয়াতে যখন আমার কথাগুলো আমার ছেলে বা আমার নামসহ আসবে সেই ছেলের জীবনে অশান্তিই আসবে। আমরা সব ভুলে নিজেদের মতো থাকতে চাইলেও ঈদের দিনগুলোতে সেই কষ্টগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয় মিডিয়া। এতে অশান্তি বাড়ে, যোগ করেন এই প্রবীণ।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
ইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।