সেই থেকে এ দিকটার কক্ষগুলো তালা লাগিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
তাজহাট জমিদার বাড়ির অপরূপ সৌন্দর্য, এতে রক্ষিত হাতে লেখা রামায়ণ, মহাভারত, গাছের বাকলে খোদাই করা লিপি, বেগম রোকেয়ার হাতে লেখা চিঠি, সম্রাট আওরঙ্গজেব, কবি শেখ শাদী ও বাদশাহ নাছির উদ্দীনের স্বহস্তে লেখা পবিত্র কোরআনের কপিসহ অসংখ্য সংস্কৃতির নির্দশন দেখতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজারো দর্শনার্থী, গবেষক, শিক্ষানবিশ ও কৌতূহলী লোকজন ছুটে আসেন তাজহাট জমিদার বাড়ি।
যাদুঘরের যে অংশটুকু দর্শকদের জন্য এখনো উন্মুক্ত আছে, সামান্য বৃষ্টিতেই সে অংশে পানি জমে থাকে। ফাটলে পানি প্রবেশ করায় আস্তে আস্তে ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। নান্দনিক এই প্রাসাদটি রক্ষার্থে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ তেমন আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ করেছেন দর্শনার্থীরা।
কথা হয় তাজহাট দেখতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। ছাত্রজীবন থেকে এখন পযর্ন্ত একাধিকবার প্রত্নতাত্তিক এই নির্দশন দেখতে আসা হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত প্রায় এক যুগ ধরে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনভরা এই প্রাসাদটির তেমন কোনো সংস্কার করা হয়নি। প্রাসাদের বাইরে কয়েকটি রাস্তা, ফুলের বাগান তৈরি হলেও মূল প্রাসাদটির তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। প্রাসাদটি বাইরে থেকে সুন্দর দেখালেও, ভেতরে এর অবস্থা খুব করুণ। যাদুঘরে ২০০৫ সালের পর আর কোনো প্রাচীন নিদর্শন যুক্ত হয়নি।
কথা হয়েছিল স্থাপনাটির বিশেষ সহকারী কামরুল হাসানের সাথে। বাংলানিউজকে তিনি জানান, তাজহাট জমিদার বাড়ির ছয়টি পুকুর আগে মাছ চাষের জন্য লিজ দেয়া হতো। পরে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে সেগুলোতে শাপলা ও পদ্মফুল লাগানো হয়। তবে বর্তমানে পুকুরগুলোতে পানি না থাকায় ময়লার স্তুপ জমেছে। পরিষ্কার না করায় পুকুরগুলো দর্শনার্থীদের চোখকে তৃপ্ত করার বদলে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থাপনাটির সংস্কারের বিষয়ে কামরুল হাসান বলেন, ২০১৫ সালে প্রাসাদের উত্তর দিকে ফাটল ধরেছে। বর্তমানে তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা কি ব্যবস্থা নেবেন তা আমরা জানি না। বর্তমানে স্থাপনাটিতে গাড়িপার্কিং এর ব্যবস্থা নেই। বসার ব্যবস্থাও যথেষ্ট নয়। ভেতরে কোনো ক্যান্টিন নেই। এই বিষয়গুরো নিশ্চিত করা গেলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়বে।
তাজহাট জমিদার বাড়ি নিয়ে গবেষণা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক নুরুল কবীর ভুঁইয়া।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, তাজহাট জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেছিল ম্যাকিং অ্যান্ড কোং নামের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। তারা স্থাপনাটির স্থায়িত্বকাল দিয়েছিলেন ১শ বছর। প্রাসাদটি নির্ধারিত ১শ বছর অতিক্রম করেছে। তাই ফাটল ধরা স্বাভাবিক। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সংস্কার কাজ চালিয়ে প্রাসাদটিকে আরও তিন থেকে চার’শ বছর টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৭
এজেড/জেএম