ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

এলো খুশির ঈদ

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এলো খুশির ঈদ ঈদুল ফিতরের নতুন চাঁদ/ছবি: ডালিম হাজারী

ঢাকা: চাঁদ উঠেছে। খুশির বন্যা ঘরে ঘরে। গ্রাম কিংবা শহর, বাদ নেই কোথাও। সবখানেই ঈদের আনন্দ! এই ঈদে আনন্দটা একটু বেশি। কারণ, দীর্ঘ এক মাস রোজার পর ঈদ। চাঁদ দেখার ওপর ঈদের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়। আর নতুন জামাকাপড় কেনার ধুম পড়ে এই ঈদেই।

মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তরা জামাকাপড় কেনেন সেরাটা দেখে, নিম্নবিত্তরাও সাধ্য অনুযায়ী পরেন নতুন জামা। যাকাত-ফিতরা নিয়ে গরিবদের পাশে দাঁড়ান উচ্চবিত্তরা।

এটাই রীতি।

বাঙালি উৎসব প্রিয় জাতি। ঈদে ধনী-দরিদ্রের যেমন ভেদাভেদ থাকে না, তেমনি অন্য ধর্মের মানুষদেরও আনন্দের ভাগিদার করে মুসলমানরা। ঈদের চাঁদ ওঠার আগে থেকেই শুরু হয়েছে শুভেচ্ছা বিনিময়, ঈদকার্ড কিংবা মেইল-এসএমএস, ডিজিটাল যুগে ধরণ পাল্টেছে। মুহূর্তে শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে যাচ্ছে আরেক প্রান্তে।

বর্ণিল ঈদ উদযাপন করতে প্রতিবার সাজে রাজধানী, সেজেছে এবারও। প্রধান প্রধান সড়কে পতাকা আর আলোকসজ্জা করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোয়।
 
শপিংমলে রোজার শেষভাগে ভিড় জমেছিল ক্রেতাদের। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে শপিংমলগুলো আলোকসজ্জা করা হয়, দেওয়া হয় গিফট কুপন। ছোট বাচ্চারা নতুন জামা পেয়ে যেমন খুশিতে মেতে ওঠে বড়দের আনন্দও কম নতুন পোশাকে।

বাজেট নিয়ে গোটা রমজানেই ছিলো রাজনৈতিক উত্তাপ, তবুও বাজারে কড়কড়ে নতুন টাকার নোট বাড়তি টাকা দিয়েই কিনছেন মানুষ। ছোট বাচ্চাদের কাছে নতুন টাকার গন্ধটা প্রিয় নতুন জামার মতোই। নতুন টাকা বিলি বণ্টনে আনন্দ পান বড়রাও।

ঈদের আগেই পালা করে বাড়ির পানে ছোটেন নগরের মানুষ। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ আগেই। বাস-ট্রেন-লঞ্চের টিকেট কেনার ধুম ছিলো। ঈদের দু’তিন দিন আগে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল, রেল স্টেশনে ঢল নামে মানুষের। ছিলো না হট্টগোল, হাজারো মানুষ একসাথে যাত্রাপথে ভোগান্তি, তবুও কষ্ট করে প্রিয়জনের কাছে যাওয়াতেই যেন ঈদের খুশি!

নামাজের জন্য জাতীয় ঈদগাহসহ অন্যান্য ঈদগাহ সাজানো হয়েছে বর্ণিল করে। কমতি নেই নিরাপত্তার। ঈদের দিন ভোর বেলা গোসল সেরে নতুন জামাকাপড় পরে আতর-খুশবু মেখে ঈদগাহে দলবলে যাবে মানুষ। নামাজ শেষে কোলাকুলি, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রয়াত প্রিয়জনের কবর জিয়ারত- সব মিলে যেন অন্যরকম একটি দিন।

ঈদের নামাজ শেষে বাসায় ফিরে সেমাই-পোলাও, রুটি-হালুয়া আর মিষ্টান্ন। প্রতিবেশির কাছে পাঠানোর রীতিও আছে, হোক মুসলিম কিংবা অন্য জাতি। বিকেলে বিনোদন কেন্দ্রগুলো হয়ে উঠবে কানায় কানায় পূর্ণ। ছোট বড় সবাই যাবে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, মেলাসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়। বেড়াতে গিয়ে ফুচকা, চটপটি মেটাবে বাড়তি তৃপ্তি।

বাড়ি ফেরার পথে দীর্ঘ জট অতিক্রম করে রংপুরে একসাথে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭ জন। অসাবধানতায় ঈদের আগে আনন্দ ফিকে হয়েছে ওইসব পরিবারের। আর ক’দিন আগে পাহাড়ে ধসে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। তার কিছু দিন আগে হাওরে অকাল বন্যায় ভেসে গেছে কৃষকের ধান।

সরকার অর্থ সহায়তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে, ক্ষত সরানোর চেষ্টা করেছে। সমবেদনা জানিয়েছে সাধারণ মানুষ, মানুষের ভালোবাসায় শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঝড়-ঝঞ্ঝা পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছেন তারা, এভাবে এগিয়ে যায় বাঙালি, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাষ্ট্রও উদ্যোগ নিয়েছে। হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানায় বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছে সরকার। মন্ত্রী-এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় সরকারের সহায়তা নিয়ে গেছেন।

সাধারণ মানুষের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ঈদ উপলক্ষে বাণীও দিয়েছেন।

ঈদ শুভেচ্ছায় রব উঠেছে চারপাশ- ঈদ মুবারক, ঈদ মুবারক, ঈদ মুবারক!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।