ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘কেউ দিলে খামু, না দিলে না খামু’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
‘কেউ দিলে খামু, না দিলে না খামু’ পার্কেই ঘর-সংসার ছিন্নমূল মানুষের। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘আমাগো আবার কিসের ঈদ? মানুষের কাছ থেইক্কা খাওন চামু। যদি কেউ দয়া কইরা কিছু দেয়, তাইলে খামু, না দিলে না খামু’।

ঈদে কি করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন অসহায় ছিন্নমূল নারী নারগিস।

স্বামীহারা নারগিস মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসি ময়নাকে নিয়ে থাকেন তেজগাঁও রেলস্টেশনে।

রাজধানীর ফার্মগেট পার্কে ভিক্ষা করছিলেন তিনি।

রোববার (২৫ জুন) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাত বছরের মেয়ে ময়নাকে নিয়েই ভিক্ষা করছেন নারগিস। দুয়ারে কড়া নাড়া ঈদ উৎসবে আনন্দ করার চেয়ে সন্তান ও নিজের পেটের খাবার জোটানোটাই তার বেশি কাম্য।  

ঈদ আনন্দের কোনো সুযোগ নেই তাদের জীবনে।  ছবি: বাংলানিউজঈদে কি করবে জানতে চাইলে চঞ্চল স্বভাবের ময়না জানায়, গতকাল (শনিবার) কোনো আপুরা এসে তার হাতে মেহেদী পরিয়ে দিয়েছেন। এখনো নতুন জামা ভাগ্যে জোটেনি। যদি কেউ তাকে নতুন জামা দেন, তাহলে ঈদের দিন পরে ঘুরে বেড়াবে সে।

নিজের ঈদ উদ্‌যাপনই নিশ্চিত নয়, তারপরেও ময়না বলে, ‘আপনেরে ঈদ মোবারকের দাওয়াত। কাইলকা আইসেন ইস্টিশনে গোস্ত দিয়া খাওয়ামু’।

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। বছর ঘুরে প্রতিটি ঘরে ঈদ আসে আনাবিল খুশির ঝাঁপি নিয়ে। এ উৎসব উদ্‌যাপনে নতুন জামা-কাপড় কেনা, সাধ্যমতো ভালো খাবার তৈরির আয়োজন, হই-হুল্লোড় চলছে সবখানেই।

ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীজুড়েও সাজ সাজ রব শুরু হয়েছে অনেক আগেই। চাকচিক্যের এই নগরীর মুদ্রার অন্য পিঠেও কিছু গল্প রয়েছে। এই শহরে যাদের ঘর নেই, যারা ছিন্নমূল পরিচয়ে ঘুরে বেড়ান নগরীজুড়ে, দু’বেলা খাবারের নিশ্চয়তা নেই যাদের, ঈদ আসা-যাওয়ার মধ্যে তাদের নেই আলাদা অনুভূতি। তারা তাকিয়ে থাকেন অন্যের সহানুভূতির দিকে।

তাদেরই অনেকে ভিক্ষা করছিলেন ফার্মগেটের পার্কটিতে।     

নারগিসের মতো পারভীন আক্তারও এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে রেলস্টেশনেই থাকেন। স্বামী হায়দার রিকশা চালালেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এখন মানুষের কাছে হাত পেতে চলে তার সংসার।

পারভীন বলেন, ‘ওগো বাপের ইনকাম নাই। খাইতেই পারি না, আর কি ঈদ করমু আমরা?’

ঈদে কি করবে জানতে চাইলে পারভীনের ১০ বছরের মেয়ে খাদিজা আক্তারের উত্তর, ‘কিছু মিলাইতে পারলে খামু আর বান্ধবীগো লগে ঘুরমু’।

পার্কের এককোণে আগুন জ্বেলে কুমড়া সিদ্ধ করছিলেন কেয়া। চার বছরের ছেলে আসলাম ও দেড় বছরের ছেলে রাসেলকে নিয়ে পার্কেই সংসার তাদেরও। কেয়ার স্বামী ফারুখ ফার্মগেট এলাকাতেই দোকানে পানি সরবরাহের কাজ করেন।

পার্কে বড় হওয়া শিশুদের জীবন কাটে অবহেলা-অনাদরে।  ছবি: বাংলানিউজকেয়া বলেন, ‘ওগো বাপ অনেকদিন ধইরা অসুস্থ। এইবার কোনো কামাই নাই। ঈদে দুইটা বাচ্চারেও কিছু কিন্যা দিতে পারি নাই। আমাগো আসলে ঈদ বলতে কিছু নাই’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
পিএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।