ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ওদের ঈদ আনন্দ অন্যের হাতে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
ওদের ঈদ আনন্দ অন্যের হাতে! পথশিশুদের নেই ঈদ আনন্দ-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘প্রত্যেকবার মানষে আইস্যা নতুন কাপড় দিয়া যায়। এইবার এ্যাহনো দেই না। তয়, আব্বা কইছে, এইবার ঈদে নতুন শার্ট কিন্ন্যা দিবো। চাঁনদের রাইতে কিন্ন্যা আনবো। এ্যাহনো দেই নাই।’

‘শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো/ কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝড়ায়ে গো/বরষের পরে আসিলে ঈদ!’ হাসি-আনন্দের পয়গাম নিয়ে আর দিন ঘুরলেই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদ‍ুল ফিতর। ঈদের আগমনে দেশব্যাপী চলছে কেনাকাটার ধুম।

ঈদ সবার জন্য আনন্দের বার্তা আনলেও সমাজের এক শ্রেণি এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। ঈদ আসলে তাদের অসহায়ত্ব আরও করুণ হয়ে ওঠে। এদেরই প্রতিনিধি রাজধানীর ফুটপাতে থাক‍া রিফাত।  
 
রাজধানীর রাস্তাঘাট, ফুটপাত, খোলা মাঠে, পার্কের খোলা আকাশের নিচে রিফাতদের মতো শত শত হতদরিদ্র মানুষের বাস। প্রতিবছর আকাশে ঈদের চাঁদের উদয় হয়, কিন্তু হতদরিদ্র এসব মানুষের মনে খুশির রঙ ধরা দেয় না। বির্বণ থেকে যায় তাদের ঈদ আনন্দ। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করা এসব মানুষ ঈদে সন্তানদের খুশি করতে চেয়ে থাকেন কারো অনুগ্রহ লাভের আশায়।
 
ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের ফুটপাতে ছেলে রাকিবুলকে নিয়ে থাকেন আকলিমা খাতুন। অসুস্থ বেকার স্বামী। আকলিমার ভাঙ্গারি টোকাইয়ের কাজে কোনো রকমে দিন চলে তাদের। ঈদ সবার জন্য আনন্দ আনলেও তাদের জন্য নয়-বলে জানান আকলিমা।
 
আকলিমা বলেন, ‘বেটা বেকার পইড়া আছে। আমি ভাঙ্গারি টোকাই। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কোনো ভাঙ্গারি নাই। ছাওয়ালের কাপড় দিমু ক্যামনে? খাওনের পয়সা নাই, আর টাকা। যদি কোনো সংগঠনের আফারা আইস্যা বাচ্চাগো কাপড় দেই, হেইটা পইরাই ঈদে যাইবে। প্রত্যেকবার কোনো আফ‍া দলবল নিয়া আইস্যা দেয়। ’
 
রাজধানীতে হাজার হাজার ভাসমান মানুষের বসবাস। যাদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। ফুটপাত ও খোলা আকাশই তাদের ভরসা। এরা কেউ মুচির কাজ করেন, কেউ কেউ ভ্যানচালক, ভাঙারি টোকাই, পানি বিক্রিসহ দিনমজুরের কাজ করেন।

ভাসমান এসব মানুষদের নেই ঈদ আনন্দ-ছবি-বাংলানিউজ
 জন্মের পরেই দেখে কালো কুচকুচে এক ছেলে। শ্যামলী ও আক্কাস খুশি হয়ে ছেলের নাম রাখেন কালাচাঁদ। ছেলের এক বছর পার না হতেই আক্কাস উধাও। পরিত্যক্ত জিনিস থেকে প্লাস্টিক খুঁজে ভাঙ্গারি টোকাইয়ের কাজ করে বহুকষ্টে ছেলেকে বড় করতে থাকেন শ্যামলী। এবারের ঈদে নতুন জুতো ও কাপড়ের বায়না কালাচাঁদের।
 
শ্যামলী বলেন, ‘ঘরে এক কেজি চাউলও নাই। শরীরটা খারাপ তাই কামেও যাইতে পারি নাই। কিভাবে ছেলের স্বাদ মেটাবো বুঝছি ‍না। আগের ঈদে তো কাপড় ও সেমাই দিছিলো এবার কেউ এ্যাহোনও আসে নাই! কয়েকদিন ধরি টেনশনে রইছি। মনটাও খারাপ। ’
 
ভাসমান এসব মানুষের কেউ খোঁজ নিতে আসলেই তারা ধরে নিচ্ছেন কাপড় ও সেমাই বিতরণ হবে। তাই নিজ নিজ নাম লেখানো নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা।
 
সন্তানের আবদার মেটাতে ব্যর্থ শ্যামলীর মতো মন খারাপ ময়না, আফরোজা ও আহাদেরও। তারা জানেন না ঈদের দিন সন্তানের মুখে সামান্য সেমাইটুকু তুলে দিতে পারবেন কিনা!
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এমসি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।