ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকা পুলিশে ১৩ পদে বড় বদল, সিন্ডিকেটের মাথায় হাত

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫২ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
ঢাকা পুলিশে ১৩ পদে বড় বদল, সিন্ডিকেটের মাথায় হাত

ঢাকা: ঢাকা জেলার পুলিশ প্রশাসনে একটি বড় ঝাঁকুনি দেওয়া হয়েছে। নিরবে ঘটনাটি ঘটে গেলেও পুলিশ বিভাগে বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। মাত্র একরাতে একযোগে বদলি করা হয়েছে ১৩ জন পুলিশ ইন্সপেক্টরকে।

যাদের অনেকেই ঢাকার আশেপাশে বিভিন্ন থানায় অফিসার ইন চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।  

শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, বিশেষ একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী বলয় ভেঙ্গে ফেলতেই এই রদবদল।

যে সিন্ডিকেট ছিলো খোদ পুলিশেরই তৈরি।  

সূত্রমতে, অতীতে ঢাকা জেলার সাভার,আশুলিয়া এমনকি ধামরাই থানায় ওসির পদে যোগদানের আগে বিশেষ ‘নিলামে’ অংশ নিয়েই তবেই নিয়োগ পেতেন ‘ভাগ্যবানরা’। বিশেষ জেলা ছাড়াও যোগ্যতার বিচারে মোটা অংকের ‘নজরানা’ দিয়ে তবেই যোগ দিতে হতো এসব থানার শীর্ষ পদে। দীর্ঘদিনের চর্চায় যা অনেকটা প্রচলিত ‘রেওয়াজ’ হিসেবেই পরিচিতি ছিলো সবার কাছে।
তবে এবার ঘটলো ব্যতিক্রমী ঘটনা।  

সূত্র জানিয়েছে, বদলি বাণিজ্যের প্রভাবশালী সেই সিন্ডিকেটের এবার রীতিমতো মাথায় হাত। তদবির আর নানা ছককে ভণ্ডুল করে দিয়ে ‘লেনদেন’ ছাড়াই এই রদবদলে চোখ কপালে উঠেছে অনেকের।

উচ্চ পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সততায় পরীক্ষিত, অপেক্ষাকৃত পেশাদাররা দায়িত্ব পেয়েছেন।  
উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে- আশুলিয়া থানায় ওসির দায়িত্বে যিনি এসেছেন তাকে কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। একই ধরনের পরিবর্তন এসেছে সাভার মডেল থানার ওসি পদেও।

সূত্রমতে, ঢাকা জেলার গুরুত্বপূর্ণ থানাগুলোতে ওসির পদে পোস্টিং পেতে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও নানান পর্যায়ে ১৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত গুনতে হতো অনেককে। আর এই লগ্নির টাকা তুলতে অতীতে তাদের বেপরোয়া অর্থের পেছনে ছুটতে হতো।
 
উচ্চ পর্যায়ের ওই পুলিশ কর্মকর্তাটি বাংলানিউজকে বলেন, এসব কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেয়া এক অর্থে ছিলো ছিদ্র পাত্রে পানি ঢালার মতোই।

মাদকের মাসোহারা, ঝুট বাণিজ্য, তৈরি পোশাক শিল্পে চাঁদাবাজি, পোশাক কারখানায় অসন্তোষ তৈরি করে আবার তা সামাল দেবার নামে অর্থ গ্রহণ প্রভৃতি খাত থেকেই লগ্নির টাকা যেতো পুলিশে। আর তা নিয়ে সময় ব্যয় করতে হতো তাদের। ফলে এই রদবদল বেশ বড় ঝাঁকুনি দিয়েছে।  

আলোচিত এ পর্বের রদবদলে সাভার থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামানকে বদলি করা হয়েছে ডিএমপিতে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আশুলিয়া থানার ওসি মোহসীনুল কাদির। আর ডিবি ঢাকা উত্তরের ওসির দায়িত্বে থাকা অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত আব্দুল আওয়ালকে দেয়া হয়েছে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে। এই পদে ধামরাই থানার ওসি শেখ রিজাউল হক দিপুর যোগদানের গুঞ্জন থাকলেও তিনি আপাতত ধামরাইতে থাকছেন।
তবে ধামরাই থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত দীপক কুমারকে ডিবি ঢাকা দক্ষিণের ওসি হিসেবে বদলি করা হয়েছে। আর একই পদে থাকা শোয়েব মোল্লাকে বদলি করা হয়েছে দোহারের ইন্সপেক্টর তদন্ত পদে। অন্যদিকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত সাঈদ আল মামুন যোগ দিচ্ছেন ধামরাইতে, ইন্সপেক্টর তদন্ত হিসেবে।

গোয়েন্দা বিভাগে রদবদলের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) ওসির দায়িত্বে আসছেন এএফএম সাঈদ। ডিবি দক্ষিণে ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে সাঈদকে সহযোগিতা করার জন্য উত্তরে দ্বিতীয় শীর্ষ প্রধান হিসেবে যোগ দিচ্ছেন ইন্সপেক্টর আবুল বাসার।

দোহার থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন নাজমুলকে বদলি করা হয়েছে ডিবি দক্ষিণে দুই নম্বর টিমের ইনচার্জ হিসেবে।
ইকুরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কামাল হোসেন দায়িত্ব পাচ্ছেন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন্স পদে। এই পদে কামালের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন জেলায় সদ্য যোগ দেয়া পুলিশ ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন।
একই সঙ্গে সদ্য যোগ দেয়া পুলিশ ইন্সপেক্টর সোহরাওয়ার্দীকে পাঠানো হচ্ছে সাভার মডেল থানায় ইন্সপেক্টর অপারেশন্স হিসেবে। অন্যদিকে এই থানায় ইন্সপেক্টর অপারেশন্স থেকে ইন্সপেক্টর তদন্তে ফিরছেন মাহফুজুর রহমান।

সূত্রমতে, পুলিশের পদ বিন্যাস ও বদলি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও তার নেপথ্যে থাকতো মোটা অংকের অর্থের লেনদেন। আর এ কাজটি সম্পন্ন করতে সব সময় সক্রিয় থাকতো বিশেষ একটি সিন্ডিকেট।

জনপ্রতিনিধি,পুলিশেরই উদ্যোগে এর বড়কর্তাদের সমন্বয়ে সেই সিন্ডিকেটকে নজরানা দিয়ে তবেই যোগদান করতে হতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। যার প্রমাণ দেখা গেছে অতীতে।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কোন কর্মকর্তাকে বদলি করার পর তা আটকে যাওয়ারও নজির রয়েছে অনেক। কারণ ওই সিন্ডিকেট।

সূত্র জানায়, এসব কারণে জেলা পুলিশ প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা করা ছিলো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যা এবার অনেকটা ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব হলো।  

সূত্র মতে, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার পদে শাহ মিজান শাফিউর রহমান ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি পদে মোহাম্মদ শফিকুর ইসলামের যোগদানের পরই শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার অংশ হিসেবেই এই রদবদলকে দেখছেন অনেকেই।

সূত্রমতে, ইতোমধ্যে আরও বেশ কয়েকজন ওসির ‘আমলনামা’ তৈরি করা হয়েছে। তারাও রয়েছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে। ভালো কাজ আর সততার মাপকাঠিতে অচিরেই আরেকদফা রদবদল হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে সূত্রটি।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রশাসনে বদলী পদন্নোতি একটি নিয়মিত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এই রদবদলের মাধ্যমে আমরা জনগনকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছি। ’

শাফিউর বলেন, পুলিশ জনগনের বন্ধু। ঘুষ দুর্নীতি আর তদবির করে বদলির দিন শেষ। অন্তত আমার কাছে তার স্থান নেই। যারা ভালো কাজ করবেন তারা ভালো দায়িত্ব পাবেন। কারণ আমরা চাই নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরে আসুক। পুলিশ হোক জনগনের প্রকৃত বন্ধু। ’

বাংলাদেশ সময় ১৪৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
জেডআর/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad