ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সুরাইয়ার পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সুরাইয়ার পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাগুরা: মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে দেশব্যাপী আলোচিত শিশু সুরাইয়ার পবিরারে নেই ঈদ আনন্দ।

এবার ঈদে তাদের পরিবারে নেই কোনো আয়োজন। টাকার অভাবে এবার সুরাইয়ার জন্য নতুন জামা পর্যন্ত কিনতে পরেননি তার বাবা-মা।

তবে যে চিকিৎসক ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন করে সুরাইয়া ও তার মা নাজমা বেগমের জীবন বাঁচিয়েছিলেন, তার দেওয়া নতুন পোশাকে এবার ঈদ করবে সুরাইয়া।

সুরাইয়ার মা নাজমা বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা মেডিকেল থেকে আসার পর কেউ তাদের খোঁজ রাখেনি। যদিও ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেওয়ার সময় সুরাইয়া ও তার পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা।

সুরাইকে প্রায় দু’বছর ধরে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তারা সর্বশান্ত হয়েছেন। এখন টাকার অভাবে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে না পারায় সুরাইয়ার ডান চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ডান হাতও অকেজো হয়ে গেছে। দু’বছর বয়স হলেও সুরাইয়া এখনও অন্যের সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারে না।
 
তিনি আরও বলেন, দোকান ঘরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অগ্রিম টাকা না দিতে পারায় বর্তমানে স্বামী চা দোকানি বাচ্চু ভূঁইয়াও বেকার হয়ে পড়েছেন।

ঈদের প্রস্তুতির ব্যাপারে নাজমা বলেন, মেয়ের চিকিৎসা ও পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভরণ-পোষণ যেখানে কষ্ঠসাধ্য সেখানে ঈদে তাদের পরিবারে নেই কোনো বাড়তি আয়োজন।

টাকার অভাবে এবার ঈদে সুরাইয়ার জন্য কোনো নতুন পোশাক কিনতে পারেননি বলে আক্ষেপ করেন নাজমা। তবে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঝুঁকি নিয়ে মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শফিউর রহমান তাকে আপারেশন করেছিলেন। তাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন, সে শফিউর শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে তাদের বাড়িতে এসে সুরাইয়াকে নতুন পোশাক দিয়ে গেছেন। ডা. শফিউরের দেওয়া পোশাক পরেই সুরাইয়া এবার ঈদ করবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে বাচ্চু ভূঁইয়া অভাব অনটনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে তিনি বেকার জীবন-যাপন করছেন। যে কারণে এবার ঈদ তাদের পরিবারের জন্য আর দশটা দিনের মতো সাধারণভাবে কাটবে।

তিনি সরকারে প্রতি সুরাইয়কে চিকিৎসা ও তাকে মানুষ করার দায়িত্বভার গ্রহণ এবং নির্মম এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান।

ডা. শফিউল রহমান বাংলানিউজকে জানান, পৃথিবীতে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধের এটিই প্রথম ও একমাত্র ঘটনা। সেদিন যে ঝুঁকি নিয়ে তিনি এ অপারেশন করেছিলেন তা ভাবলে এখনও শিহরে ওঠেন। মহান সৃষ্টিকর্তা সেদিন তাকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছেন। তিনি সারা জীবন এ স্মৃতি ভুলতে পারবেন না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিশেষ দিনে সুরাইয়ার কাছে ছুটে আসতে চান। যে কারণে ঈদে সুরাইয়ার জন্য নতুন পোশাক নিয়ে তাদের বাড়িতে হাজির হয়েছেন।
      
উল্লেখ্য, গত বছর ২৩ জুলাই শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজির আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সুরাইয়ার চাচা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তারই সেকেন্ড ইন কমান্ড আলী আকবরের গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এসময় এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন মমিন ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি। গর্ভস্থ শিশুসহ গুলিবিদ্ধ হন গৃহবধূ নাজমা। ওইদিন রাতে মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভবস্থায় সাড়ে সাত মাসের গুলিবিদ্ধ শিশুকে মায়ের পেট থেকে বের করেন। পরে ২৫ জুলাই নাজমার গুলিবিদ্ধ শিশু কন্যা সুরাইয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহতের ছেলে রুবেল ভূঁইয়া বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় ১৬ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।