ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিষাক্ত রঙের সেমাইয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
বিষাক্ত রঙের সেমাইয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী এসব সেমাই খেলে কিডনি ও লিভারের জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ছোট ছোট বাঁশের ঝুঁড়ি ও পলিথিনে ভরে বিক্রি হচ্ছে খোলা লাচ্ছা সেমাই। কিন্তু এসব সেমাইয়ের প্যাকেটে নেই কোম্পানির নাম ও বিএসটিআই’র সিল। ফলে কোথা থেকে কোন কোম্পানির তৈরি- তা জানার উপায় নেই।

লাল, সাদা ও হলুদের মিশ্রণে রঙিন সেমাই প্রতি কেজি ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ভোক্তাদের অভিযোগ, অস্বাস্থ্যকর এসব সেমাই তৈরিতে নিম্নমানের পামওয়েল, আটা, ঘি ও রং ব্যবহার করা হচ্ছে।

সেমাই রঙিন করতে মিক্স ফ্রুটি এবং শাহী ও ক্রিম জর্দা রং ব্যবহার করা হয়।  

একবার জর্দা রং কিনে কয়েক সিজন ধরে এবং একই তেল বার বার ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন সেমাইয়ের কারিগর ও ব্যবসায়ীরাও। ফলে বিষাক্ত রং ও জর্দা হয়ে যাচ্ছে সেমাই তৈরির প্রধান উপকরণ।

বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়া তৈরি এসব অস্বাস্থ্যকর সেমাই খেলে বদহজম, পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, গ্যাস পাম্প ও লিভারের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।  
 
আগারগাঁও বিএনপি বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব সেমাই। সেকেন্দার স্টোরের মালিক রিপন বলেন, ‘আমরা মোহাম্মদপুরের জেনেভা (বিহারি) ক্যাম্প বাজার থেকে এসব সেমাই কিনেছি। কোনো কোম্পানির নয় এগুলো। ঈদে লাল-হলুদ রঙের সেমাইয়ের চাহিদাও বেশি’।

বিএসটিআইএ’র সিল নেই কেন?- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্প বাজারের বিক্রেতারা বলতে পারবেন। আমরা ক্রেতা, বেশি কিছু জানি না’।
 
তালতলা, মিরপুর-১, কারওয়ানবাজার, ঝিগাতলা কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল কাঁচাবাজারগুলো নাম-ঠিকানাহীন এই রঙিন সেমাইয়ে বাজার সয়লাব। বিক্রেতারা জানান, ক্যাম্প বাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে কিনে এনে বিক্রি করছেন তারা।  
 
অস্বাস্থ্যকর রঙিন সেমাই তৈরি হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজসরেজমিনে জেনেভা ক্যাম্প বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার বাসিন্দারা বংশ পরম্পরায় রঙিন সেমাই তৈরি ও ব্যবসা করে আসছেন। তবে ঈদ-উল ফিতর ও ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে মূলত মৌসুমী ব্যবসায়ী তারা। স্বল্প পরিসরের শতাধিক দোকানে বিএসটিআই ও পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই এসব সেমাই তৈরি হচ্ছে।
 
এলাকার লোকজন জানান, রমজানের আগেও যেসব দোকানে স্বল্প পরিসরে বেগুনি, আলুর চপ ও দই-বড়া তৈরি হতো, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সেসব দোকানেই এখন ব্যস্ত সেমাই তৈরির কাজে। প্রতিটি দোকানে গড়ে দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় মণ সেমাই তৈরি করে বিভিন্ন বাজারে পাঠানো যাচ্ছে।
 
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ছোট ঘরের মেঝেতে সেমাই তৈরির উপকরণ মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হচ্ছে। ২০০/৩০০ গ্রাম ওজনের এসব মণ্ড গরম তেলে ভেজে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। এরপর বাঁশের বড় বড় ঝুড়িতে রাখা হচ্ছে। ভাজা সেমাই থেকে নিংড়ানো অস্বাস্থ্যকর তেল বার বার ব্যবহার করা হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের অধিকাংশ সেমাই শ্রমিকই নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে আসা বিহারি। সারা বছর সৈয়দপুরে নানা ধরনের কাজ করলেও ঈদ ও কোরবানির সময় এ ক্যাম্পে চলে এসে সেমাই তৈরির কাজ নেন। একজন মালিকের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন বেশ কয়েকজন করে শ্রমিক। একজন শ্রমিক গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন। ঈদ শেষে আবারও সৈয়দপুরে চলে যান তারা।

নাম-ঠিকানাবিহীন একটি সেমাই তৈরির দোকানের মালিক সাহাদাত আজহার। তার দোকানে কাজ করতে আসা মৌসুমী সেমাই শ্রমিক সাদাত নওরাজও এসেছেন সৈয়দপুর থেকে।

সাহাদাত আজহার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঈদের আগে কয়েকদিন এ ব্যবসা করি। দুই-চারদিনের ব্যবসা, এজন্য আমাদের কারো অনুমোদন লাগে না। আমার বাপ-দাদারাও এ ব্যবসা করে গেছেন’।

তিনি বলেন, ‘এক কেজি জর্দা রং ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় কেনা। এক কেজি কিনলে কয়েক ঈদ সিজনে ব্যবহার করা যায়’।

তবে এক কেজি জর্দা দিয়ে কতো মণ সেমাই রঙিন করা যায়- সে হিসাব দিতে পারেননি কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ভাজা-পোড়া খাদ্য এমনিতেই আমাদের সুস্থ শরীরেও নানা ধরনের সমস্যা করে। তার ওপরে যদি কোনো খাদ্যে রং বা কেমিকেল ব্যবহার করা হয়, তবে সেটি অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। না হলে এসব রঙে তৈরি সেমাই খেলে কিডনি ও লিভারের জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এমআইএস/ এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।