ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জীবন সংগ্রামে দৃষ্টিহীন তৈয়ব আলী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
জীবন সংগ্রামে দৃষ্টিহীন তৈয়ব আলী জীবন সংগ্রামে দৃষ্টিহীন তৈয়ব আলী-ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: বয়স মাত্র পাঁচ বছর। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ছানি পড়ে চোখ দুটো নষ্ট হয়ে যায় তৈয়ব আলীর। দৃষ্টি শক্তি হারালেও জীবন যুদ্ধে হার না মেনে দীর্ঘ ৪৫ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে এসেছেন। চোখে আলো না থাকলেও সমাজের কারো কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চান না।

চোখে দৃষ্টি না থাকলেও পাননি কোনো সরকারি ভাতা। কৃষি কাজ করে উপার্জন করেন তৈয়ব আলী।

আর সেই উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারসহ চলে দুই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ।

শনিবার (২৪ জুন) সকালে সদর উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজার এলাকায় ধান মাড়াই করার সময় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দৃষ্টিহীণ মো. তৈয়ব আলী (৫০)।

দৃষ্টিহীন তৈয়ব আলী দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ৫নং সুন্দরপুর ইউনিয়নের ধনী গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে। বর্তমানে স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান নিয়ে তার পরিবার।

তিনি বলেন, যখন তার পাঁচ বছর তখন ছানি পড়ে চিকিৎসার অভাবে দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। দু’চোখের দৃষ্টি হারানোর পর পরিবারের সকল সদস্য তাকে অবহেলার চোখে দেখতে শুরু করে। নিজের ভাই-বোনরাও তার বোঝা টানতে নারাজ। দৃষ্টিহীন হওয়ার পর সমাজের কারো কাছেই যেন বোঝা হয়ে না দাঁড়াই এজন্য শুরু করি কৃষি কাজ। দৃষ্টিহীন অবস্থায় এসকল কাজ শেখাতে সাহায্য করেন গর্ভধারীনি মা। মা যতোদিন জীবিত ছিলেন ততোদিন অর্থাৎ বছর দুয়েক গ্রাম ও এর আশপাশের এলাকায় কাজ করলেও পরবর্তীতে মায়ের মৃত্যুর পর উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে দিন হাজিরা মূলে কৃষি কাজ করেন।

তিনি বলেন, দিনে ২০ টাকা হাজিরায় কাজ শুরু করলেও বর্তমানে তার দৈনিক হাজিরা তিন'শ টাকা। তৈয়ব আলী দৃষ্টিহীন হলেও সাধারণ মানুষের মতো কাজে কোনো প্রকার ফাঁকি দেননা। তাই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে তার চাহিদা রয়েছে। দৃষ্টিহীন এই পিতার উপার্জিত অর্থে পড়াশুনা করছে তার দুই সন্তান।
জীবন সংগ্রামে দৃষ্টিহীন তৈয়ব আলী-ছবি: বাংলানিউজবর্তমানে তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন বীরগঞ্জ সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ও মেয়ে সুমাইয়া আক্তার কাহারোল রামচন্দ্রপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী।

তিনি আরো জানান, তার এই অন্ধ জীবনে মায়ের পর সাহস ও সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী মোমেনা খাতুন। তার ছেলে-মেয়েরা তাকে আর কাজ করতে না দিতে চাইলেও আর দু’এক বছর কাজ করবেন অন্ধ তৈয়ব আলী।

দিনাজপুর সদর উপজেলার রাণীগঞ্জ এলাকার কৃষক মো. আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে তৈয়ব আলী সম্পর্কে বলেন, আমাদের এখানে প্রতি মৌসুমে ধান উত্তোলনের পর ছাটাই-মাড়াইয়ের কাজ করতে আসেন তৈয়ব। তিনি অন্য শ্রমিকের মতো কাজে ফাঁকি দেননা। আর এজন্যই তাকে প্রতি মৌসুমে ডেকে আনা হয়। তিনি একজন দৃষ্টিহীন মানুষ হয়েও আর দশটা মানুষের মতোই খেটে খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তার এই জীবন চলার চিত্র দেখে সমাজের মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।