কষ্টের সঙ্গে এ কথা বলছিলেন জেলে বধু রাজিয়া। সদরের নদী ভাঙ্গন কবলিত রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে রাজিয়ার আশ্রয় রাস্তার পাশে।
একই অবস্থা গৃহবধু রুমার। তার আশ্রয় সড়কের পাশে। স্বামী, ২ ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার তার। রুমা বলেন, নদীতে চার ভাঙ্গা দিয়েছে, নতুন করে ঘর তুলতে পারিনি, বাচ্চাদের নতুন জামাও কিনে দিতে পারিনি, কোন সহযোগিতাও পাইনি।
রাজিয়া ও রুমাদের মত অনেকের একই অবস্থা। যাদের ঈদ খুশি পরিবর্তে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার আর বেঁচে থাকার জন্য লাড়াই করতে হয়।
চারদিকে ঈদের আনন্দ বয়ে আনলেও যেন ব্যতিক্রম ভোলার বেড়িবাঁধে আশ্রিত ছিন্নমূল মানুষের। দারিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর জীবনে খুশির বার্তা বয়ে আনতে পারেনি ঈদ।
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই ঈদের নতুন পোশাক কিংবা ভালো খাবার জুটছে না তাদের ভাগ্যে।
সরকারের পক্ষ থেকে ঈদবস্ত্র ও চাল বিতরণ করা হলেও তাদের অনেকেই তা পায়নি বলে অভিযোগ। তবে জেলা প্রশাসক জানালেন, দরিদ্রদের জন্য সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিন জানা গেল, ভোলা সদরের নদী ভাঙ্গন কবলিত দক্ষিণ রাজাপুর গ্রাম। গত মৌসুমে নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে বহু পরিবার গৃহহারা হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকের আশ্রয় সড়কের পাশে। এসব পরিবারের কেউ জেলে কেউবা দিন মজুর। সড়কের পাশে শতাধিক পরিবারের আশ্রয় মিললেও যেন সুযোগ সুবিধা মিলছে না।
ঈদ আসে ঈদ যায়, কিন্তু কিছুতেই ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না ভোলার মেঘনা পাড়ে আশ্রিত বিপন্ন মানুষের। ঈদে সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দেয়া তো দূরের কথা, তাদের ভাগ্যে ভালো খাবারও জুটবে কি না তাও জানে না তারা।
নদী ভাঙ্গন, জোয়ারের পানিসহ প্রকৃতিক দুর্যোগের একের পর ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। সে অবস্থায় ঈদ যেন খুশির বার্তা নিয়ে আনেনি তাদের।
বাঁধের পাশে আশ্রিত রোকেয়া বলেন, সবাই ঈদ আনন্দ করবে, কিন্তু আমাদের আনন্দ নেই। কি করবো, আমরা গরীব, গরীবের তো ঈদ নেই।
সালাউদ্দিনের স্ত্রী কুলসুম বলেন, ঘর দুয়ার তুলতে পারিনি, রাস্তায় ঝুপড়ি ঘরে আছি, ঈদের দিন ভালো খাবার জুটবে না, ডাল ভাত খেয়ে ঈদ কাটাতে হবে।
চারদিকে ঈদের আনন্দ চললেও মেঘনা তীরে ছিন্নমূল মানুষের বিবর্ণ ঈদ কাটছে, যা দেখার কেউ নেই। ঈদ উপলক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ঈদবস্ত্র এবং চাল বিতরণ করা হলেও অনেকের ভাগ্যে তা জোটেনি বলে অভিযোগ তাদের। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তালিকায় নাম নেই তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলার মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকারি ভিজিএফ কর্মসূচির চাল আমরা বিতরণ করেছি। সেগুলোর তালিকা তৈরি করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। তার বাইরে আমরা ঈদের আগে বিভিন্ন উপজেলায় নগদ টাকা এবং জিআর চাল দিয়েছি, যাতে কেউ বাদ পড়লে সেখান থেকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তারপরেও কেউ যদি সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে আমরা তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিতে পারি।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
জেডএম/