ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশের সহায়তায় বাড়ি ফিরছেন কহিনূর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
পুলিশের সহায়তায় বাড়ি ফিরছেন কহিনূর কহিনূরের হাতে টাকা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা-ছবি-জি এম মুজিবুর

ঢাকা: ঘরমুখো মানুষ যখন বাসে উঠতে ব্যস্ত তখন রোববার (২৫ জুন) সকালে এক বাস থেকে আরেক বাসে ছুটছেন কহিনূর বেগম। 

শনিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে ঢাকা এসেছেন তিনি। মানুষের মুখে ঢাকার কথা শুনে দেখার সখ ছিলো কহিনূরের।

তাই এবারের ঈদ একমাত্র ভাই সুলতানের সঙ্গে করতে এসেছিলেন ৪৮ বছর বয়সী এই নারী।  

শনিবার সন্ধ্যায় গাবতলী পৌঁছেন তিনি। লোকাল বাসে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে যান মিরপুরের আল হেলাল হাসপাতাল এলাকায়। বড় ভাই সুলতান স মিলের কর্মচারী। থাকতেন ঐ এলাকায়ই। ঠিকানা বের করে বাসায় পৌঁছুতেই চোখ ছানাবড়া কহিনূরের।  

বাড়িওয়ালা জানান, সুলতান বাসা পরিবর্তন করেছেন। কহিনূরের কাছে নেই কোনো মোবাইল ফোন। এখন কি করবেন কহিনূর। সুলতানের নতুন ঠিকানাও জানেন না বাড়িওয়ালা। রাতটা কেটে যায় বাড়ির গেটের কাছেই।  

সকাল হতেই কহিনূর ফের আসেন গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে। কিন্তু কাছে আছে মাত্র ১০ টাকা। বাসের চালক-হেলপারদের আকুতি জানান তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ভাড়া নেই জানতেই মুখ ফিরিয়ে নেন সবাই।  

কহিনূরের কান্না দেখে এগিয়ে আসেন এক পুলিশ সদস্য। সব কথা শুনে নিয়ে যান পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। কহিনূর বেগমের কথা শুনে বেশ অবাক পুলিশ সদস্যরা। এ যুগে মোবাইল নেই! দরিদ্র পরিবারের কহিনূরের কাছে মোবাইল ফোন বিলাসিতার সমান।  

সবকিছু শুনে কহিনূরের বাড়ি ফেরার দায়িত্ব নেন পুলিশ সদস্যরাই। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী তারা সহায়তা করেন। দুইদিন ধরে অভুক্ত কহিনূরকে নাস্তা করিয়ে ৬শ’ টাকা দিয়ে করা হয় বাসের টিকেট।  

কিন্তু যাত্রাপথে কোথাও যদি টাকার প্রয়োজন হয় তখন কি করবেন ভেবে কহিনূরের হাতে আরও ২শ’ টাকা দেন এএসআই হাসান। সকাল পৌনে ১০টায় পুলিশ সদস্যরা বাসে উঠিয়ে দেন কহিনূরকে।  

কহিনূর অশ্রুসজল চোখে বলেন, ‘আগে খালি শুনতাম পুলিশরা খারাপ। কিন্তু আইজ যদি এই পুলিশ ভাইরা না থাকতো তাহলে আমার কি হইতো জানি না। দুই দিন ধইরা আমি প্রায় না খাইয়াই ছিলাম। কাছে কোনো টাকাও ছিলো না। আমি গরিব মানুষ মোবাইলও নাই। কতো গাড়িতে উইঠা কানছি। কেউ ফিরাও তাকায় নাই। ’ 

এএসআই হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কহিনূর যখন এসে সব কথা বললেন তখনই আমরা বুঝতে পেরেছি তিনি মিথ্যা বলছেন না। একজন নারী এই অবস্থায় কোথায় যাবেন। রাত পোহালেই তো ঈদ। তাই আমরা সবাই যার পকেটে যা টাকা ছিলো তাই দিয়ে বাসের টিকেট আর হাত খরচ দিলাম। মানুষের বিপদে মানুষই তো এগিয়ে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
ইউএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।