ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাধ্যের সবটুকু দিয়ে গরীবের ঈদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
সাধ্যের সবটুকু দিয়ে গরীবের ঈদ ফেনীতে নিম্নবিত্তের কেনাকাটা। ছবি: সোলায়মান হাজারী ডালিম

ফেনী: আর দু’দিন পরই ঈদুল ফিতর। সব মুসলিমের জীবনেই ঈদ নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। ধনী, গরীব নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এ দিন মেতে ওঠে উৎসবে। ঈদে কেউ পোশাক  কেনেন জমকালো বিপণি বিতান থেকে,  আবার কেউ কেনেন ফুটপাত থেকে।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিজাত বিপণী বিতানগুলোতে বিত্তবানরা কেনা-কাটায় ব্যস্ত থাকেন। নিম্নবিত্তরা এসব বিপণী বিতানের আলোকসজ্জা দেখতে পারলেও সেখানে ঢোকার কিংবা কেনা-কাটার সামর্থ তাদের নেই।

তাই বলে তাদের ঈদ কেনা-কাটা কিন্তু থেমে নেই। শহরের ফুটপাতই তাদের ভরসা। সেখানেই তারা সেরে নিচ্ছেন তাদের ঈদ বাজার। তাদের আনন্দ সেখানেই।

শনিবার (২৪ জুন) বিকালে ফেনীর রাজাঝির দিঘীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নিম্নবিত্ত মানুষ। যেন সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সাধের ঈদ করার চেষ্টা। মুখভরা হাসিতে ঈদ উদযাপনের উচ্ছ্বাস।

মেয়ের জন্য জামা-জুতা কিনতে এসেছেন ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের আছিয়া খাতুন। মেয়ে বায়না ধরেছে, তাকে রাখি-বন্ধন জামা কিনে দিতে হবে। ভারতীয়  সিরিয়ালে সে জামাটি দেখেছে। বেশ কয়েকটি দোকান খুঁজে অবশেষে পাওয়া গেল কাঙ্খিক ডিজাইনের জামাটি। এখন দরদাম করে নেয়ার পালা। দোকানি প্রথমে বেশী দাম হাঁকলেও শেষ পর্যায়ে আছিয়ার বলা দামেই বিক্রি করল।

আছিয়া খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, আঙগো যা তৌফিক যা আছে হিয়ানদি হোলা-মাইয়োগো মুখের হাসি দেইখতাম চাই (আমাদের যা সামর্থ আছে তা দিয়েই ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি দেখতে চাই)। আছিয়া জানান, মেয়ের জন্য ৩শ’ টাকায়  একটা জামা এবং ছেলের জন্য ২শ’ পঞ্চাশ টাকায় একটা শার্ট কিনেছেন তিনি। এখন বাকি জুতো।  

খানিক দূরে এক জুতা দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও উপচেপড়া ভিড়। শহর তলীর পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ভ্যান চালক শামছুল আলম এসেছেন তার ছেলেমেয়ের জন্য জুতা কিনতে। ফেনীতে নিম্নবিত্তের কেনাকাটা।  ছবি: সোলায়মান হাজারী ডালিম

বাংলানিউজকে তিনি জানান, শহরের মার্কেটগুলোতে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশী। তিনি যা রোজগার করেন তা দিয়ে ওসব দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনার সামর্থ তার নেই। তাই দিঘীর পাড়ের এ সস্তার বাজারেই তার স্বস্তি। শামছুল আরো জানান, তিনি মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে এখান থেকে চার ছেলে মেয়ের জন্য জুতা কিনে নিয়েছেন।    

দিঘীর এক কোনায় ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে গিয়ে দেখা হয়, রাকিব, আব্বাস ও ইমরানের সাথে। জেলার পরশুরাম উপজেলা থেকে এখানে ঈদ শপিং করতে এসেছে। তারা চশমা, জুতা, শার্ট ও মানিব্যাগ কিনবে। রাকিব বলে, এখানে সস্তায় জিনিস পত্র পাওয়া যায়, তাই এসেছি ঈদেও শপিং করতে।  

আরো কিছু দূর গিয়ে দেখা হল, হোটেল শ্রমিক আবদুল আলীমের সাথে, দীর্ঘ ৬ মাস একটানা ফেনীতে কাজ করে ঈদে বাড়ি (হাতিয়া, নোয়াখালী) যাচ্ছেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরে টাকা জমিয়ে  কেনাকাটা করতে এসেছেন এখানে। ছোট মেয়ের জন্য একটা রঙিন ঝলমলে ফ্রক কিনেছেন তিনি। স্ত্রীর জন্য হাতব্যাগ, মার জন্য জুতা, বাবার জন্য লুঙ্গি, বড় ছেলের জন্য পাঞ্জাবি। শনিবার কেনাকাটা সেরে বাড়ির পথে রওনা হবেন তিনি। এভাবে নিম্নবিত্ত মানুষ ঈদে  কেনাকাটা করতে ছুটে আসেন এখানে। আর নিম্নবিত্ত ক্ষুদ্র আয়ের মানুষগুলোর চাহিদার যোগানে প্রস্তুত থাকেন রাজাঝির দিঘীর পাড়ের ব্যবসায়ীরা।

সব পাওয়া যায় এ রকমারি বাজারে। নেই কারো কোন সাইনবোর্ড। পাওয়া যায় ছেলে- বুড়ো সবার, নারীদের পোশাকসহ পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, জুতো, চশমা, ঘড়ি, ইমিটেশন সামগ্রী, কসমেটিকস,  বেল্ট, ব্যাগ, শোপিস, বাচ্চাদেও খেলনা, মোবাইল সামগ্রী, টুপি, আতরসহ সব রকম সামগ্রী। গরিব নিম্নআয়ের মানুষ ছুটে আসেন এখানে সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে। তবে এবারের ঈদে ব্যবসা মন্দ যাচ্ছে বলে জানান দিঘীর পাড়ের ব্যবসায়ীরা। রোজার শুরুতেই ঈদকে লক্ষ্য করে তারা নিয়েছিলেন ব্যাপক প্রস্তুতি। আবার ভয়েও থাকতে হয়েছে। কখন জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান হয়। কারণ কিছুদিন আগেও তাদের সব দোকান পাট গুড়িয়ে দেয়া হয়।

উত্তম দেবনাথ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, অবৈধ হওয়ায় জেলা প্রাশাসন এ স্থানে অভিযান চালায়। জেলা প্রশাসনের কাছে তার অনুরোধ, এভাবে তাদের উচ্ছেদ না করে বিকল্প পূনর্বাসনের ব্যবস্থা যাতে করা হয়। সাধারণ গরীব ক্রেতারা মনে করছেন, এমন একটি হাট থাকা খুব প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
এসএইচডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।