ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘মৃত্যুভয় জয় করেই দায়িত্ব পালন করতে হয়’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
‘মৃত্যুভয় জয় করেই দায়িত্ব পালন করতে হয়’ মহাখালী বাস টার্মিনালে দায়িত্বরত র‌্যাব টিম

ঢাকা: একজন পুলিশ অফিসারকে নির্মমভাবে খুন করা হলো। এমন আরো হয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতেও হবে। দুষ্কৃতকারীরা তাদের অপকর্ম বন্ধ রাখবে না। তাই সাধারণ আমজনতার যেমন মৃত্যুভয় আছে, তেমনি আমাদেরও আছে। তবে সে মৃত্যুভয়কে জয় করেই আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করি। অপরাধীদের ধরে আইনের কাছে সোপর্দ করি। কিন্তু সাধারণ মানুষই আমাদের সহযোগিতা করেন না। ভয় পান। মনে করেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে কোনো সত্য ঘটনার বর্ণনা দিলে বা অভিযোগ করতে গেলে আরো ঝামেলা বাড়বে।

এজন্যই অপরাধ সেইভাবে রোধ করা যাচ্ছে না। এই বলে হতাশা ব্যক্ত করেন র‌্যাব কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিন কাদির।

র‌্যাব-২ এর ডিএডি কাদির শনিবার (২৪ জুন) তার টিম নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন মহাখালী বাস টার্মিনালে। মোট আট সদস্যের টিমের তিনি কমাণ্ডার।

বাস টার্মিনালের নানা অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, কেউ অভিযোগ করতে তেমন একটা আসেন না। আবার যিনি আসেন তিনি প্রমাণ নিয়ে আসেন না। শুধু মৌখিকভাবে একটু অভিযোগ করেই দায়িত্ব শেষ করেন। কিন্তু যে কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে হলে প্রমাণ লাগে। কিন্তু আমজনতা সেটা করতে চান না। অপরাধীদের আটক করার ক্ষেত্রে এটা এক বড় সমস্যা।

শাহিন কাদির কথা শেষ না হতেই  টাঙ্গাইলগামী এক যাত্রী এসে বললেন, ‘স্যার, বিনিয়ম কাউন্টারে টিকিট দেয় না। বলে বাসে ওঠেন। ভাড়া ৪শ টাকা। অথচ ঈদের আগে টাঙ্গাইলের বিনিময় পরিবহনে ভাড়া আদায় করা হয় ১৭০ টাকা। ’

তার কথা শুনে এ প্রতিবেদকের সামনেই লোকটিকে র‌্যাব সদস্যের সঙ্গে ওই কাউন্টারে গিয়ে দেখিয়ে দিতে বললেন। কিন্তু এতে রাজী হলেন না যাত্রী মুখলেছুর রহমান। মুখলেছুরের যুক্তি: ‘দেখাই দিলে যদি মারে। আপনারাই কিছু একটা করেন। ’

এই বলে চলে যান মুখলেছুর রহমান। এবার শাহিন কাদির বলতে শুরু করেন, ‘দেখলেন তো অবস্থা! এখন কাকে গিয়ে ধরব। তিনি যদি কোনো টিকিট কেটে এনে দেখাতেন, তাহলেও ধরা যেত। এভাবেই অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ’

ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয় র‌্যাব কর্মকর্তাদের। যদিও ডউটি রোস্টার আট ঘণ্টারই থাকে। কিন্তু ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে বাড়তি পরিশ্রমেও তারা অসন্তুষ্ট নন। বরং খুশি।

শাহিন কাদির বলেন, ‘ভয় পেয়ে বা ঝামেলা এড়ানোর জন্য তথ্য না দিলে অপরাধিদেরই সুবিধা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় সহযোগিতা করতে প্রস্তুতই থাকে। শুধু একটু সাহস করে আমাদের সব খুলে বললেই হয়। কোনো মামলা হলে সাক্ষ্য তো দিতেই হবে। কোর্ট কাচারির ভয়ে অপরাধীকে সুযোগ করে দিলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একা পারবে না। আমরা এতো পরিশ্রম করছি। নাগরিক হিসেবেও রাষ্ট্রের প্রতি কিছু কর্তব্য আমজনতারও রয়েছে। কাজেই সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

মাগুরার ছেলে শাহিন কাদির মনে করছেন, পরিবার তার সঙ্গে থাকলেও হয়তো ঈদে একসঙ্গে সময় কাটানো হবে না। কারণ প্রয়োজন হলে আট ঘণ্টার বেশিই ডিউটি করতে হবে। তাই ঈদুল আযহাতেই সব আনন্দ করবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন। আর এই ঈদে যদি আট ঘণ্টার ডিউটি হয়, তবে বাকি সময়টাকে তিনি বাড়তি পাওনা হিসেবে মনে করছেন।

র‌্যাব সদস্য মোহাম্মদ জিয়ার বাড়ি গাইবান্ধায়।

তিনি বলেন, ‘ঈদে বাড়তি ডিউটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কেননা, আমাদের কারণেই অনেক মানুষ নিরাপত্তা পাচ্ছে। এটা আনন্দের বিষয়। তবে শুধু নিরাপত্তা নয়, যাত্রীদের নানাভাবে সহায়তাও করছেন তারা। কোনো গাড়ির হেলপার বা কনডাক্টর কোনো যাত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ বা হয়রানি করলেও তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে কোনো আলামত পেলে দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ফলে মহাখালীতে র‌্যাবের নিরবিচ্ছিন্ন টহল টিম ও সাদা পোশাকের সদস্যের তৎপরতায় যাত্রীরা নিরাপদেই ভ্রমণ করছেন।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক পরিবহনের দিকেও কড়া ও সজাগ দৃষ্টি রাখছেন র‌্যাব-২ এর সদস্যরা। গত ক’দিনে প্রায় ১০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে হাতে নাতে ধরে পুলিশে সোপর্দও করেছেন তারা।

এদিকে যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত আছে পুলিশ ও বিআরটিএ’র টিমও। তারা বাড়তি ভাড়া, যাত্রী হয়রানি রোধে কাজ করছে। তবে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন প্রায় সব পরিবহনই আগের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। এক্ষেত্রে পরিবহনগুলো অভিনব কায়দায় অপরাধটি করছে।

কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখে বাসে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছে। আর ২শ টাকা টিকিট নেওয়া হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। বলা হচ্ছে, ভাড়া বাসের ভেতরে আদায় করা হবে। যাত্রীরাও জিম্মি হয়ে পড়ছেন। বাড়তি ভাড়া দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো প্রমাণও রাখতে পাচ্ছেন না।

এসব নিয়ে ঢাকা সড়ক পরিহন মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, সারাবছর সরকার নির্ধারিত রেট থেকে আমরা ভাড়া কম নিই। আর ঈদে ৫০ টাকা করে বাড়িয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা দিয়েছি। কেননা, ঈদে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার পর খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হয়। ওই ৫০ টাকা দিয়ে লসটা পুষিয়ে নেওয়া হয়। আর তা না হলে গাড়ি তো আর লস দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাবে না। এটা যাত্রীদের জন্য ভাল।

তিনি বলেন, ৫২ সিটের গাড়ির জন্য কিলোমিটারপ্রতি ১ দশমিক ৪৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে  সরকার। এক্ষেত্রে কোনো গাড়ি ৪০ সিটের হলে, সেখানে ৫২ সিটের ভাড়াই আদায় করা হচ্ছে। আর সঙ্গে যোগ করা হচ্ছে অতিরিক্ত ৫০ টাকা। কাজেই কোনো বাড়তি ভাড়া নেই।
বাংলাদেশ সময়:১৭৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
ইইউডি/জেএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ