ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ঈদের দিনত হামরা কী উটি খামো ব্যাহে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
‘ঈদের দিনত হামরা কী উটি খামো ব্যাহে’ শেফালি বেগম (৪২)। ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: ঈদের দিনত হামরা কী উটি (রুটি) খামো ব্যাহে- এ প্রশ্ন করলেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ২ নং কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের রমজান আলীর স্ত্রী শেফালি বেগম (৪২)। তিনি শনিবার (২৪ জুন) ঈদের জন্য বরাদ্দ ওই ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির গম সংগ্রহ করতে এসেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদে।

চালের বদলে গম পেয়ে শেফালীর মতো অনেকেরই এমন আক্ষেপ। শুধু তাই নয়, ওজনে কম দেওয়ারও অভিযোগ তুললেন তারা।

বললেন, ডিজিটাল ওজন যন্ত্রের পরিবর্তে টিনের পাত্র ও বালতি দিয়ে মেপে দেওয়া হচ্ছে গম।

সৈয়দপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৪৪ হাজার ও পৌরসভায় চার হাজার ৬২১ জন হতদরিদ্র ও অভাবী মানুষের মাঝে এবার ঈদে বিশেষ ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে। ওই কার্ডে উল্লেখ রয়েছে দশ কেজি চালের কথা।

সরজমিনে দেখা যায়, দুস্থদের মাঝে, চালের পরিবর্তে গম দেওয়া হচ্ছে। খাতামধুপুরে গম বিতরণী তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আব্দুল গফুর সরদার ও কামারপুকুর ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, ভিজিএফ চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও পরবর্তীতে সরকারিভাবে গম দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তবে প্রতিকার্ডে ১০ কেজি চালের পরিবর্তে ১৩ কেজি ২৭২ গ্রাম গম দেওয়া হচ্ছে।

সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর, খাতামধুপুর, কাশিরাম বেলপুকুর, বাঙালীপুর ও বোতলগাড়ি ইউনিয়নে গত শুক্রবার থেকে ভিজিএফ গম বিতরণ শুরু হয়েছে। সৈয়দপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের কার্ডধারীদের মাঝে শনিবার (২৪ জুন) বিতরণ করা হয় বরাদ্দকৃত গম। ভিজিএফ এর গম

কামারপুকুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ধলাগাছ পশ্চিমপাড়া গ্রামের রহমত আলীর (৬২) সাথে কথা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, এ্যাইলা ভালো গম নোহায় (নয়), পোকা খাওয়া, ফির ওজনোতও কম দেয়ছে। মোক দিছে দশ কেজি, আর ঈদের দিন কাহো (কেউ) গম খায় ব্যাহে?

উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের হাফিজা বেগম (২৮) জানান, এ্যাইলা হামরা গরিবের সাথে মশকরা নোহায়, দিবে চাইল তাক দিলে গম। এইলা কোন কথা হইল ব্যাহে। হামার তো গরুও নেই তাক খিলাই।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকারক করে কামারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমান বলেন, সুষ্ঠুভাবে গম বিতরণ করা হচ্ছে। ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

তবে বিতরণ দ্রুত করার জন্য ডিজিটাল ওজনের বদলে টিনের কৌটায় মেপে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ঈদের আগে গরিব ও দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ মালামাল ওজনে কম দেওয়া হয়েছে। বিতরণে করা হয়েছে নানা অনিয়ম। দলের নেতা-কর্মী, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কার্ড বিতরণে অনিয়মে জড়িত। খাতামধুপুরে ভিজিএফ বিতরণী কার্ডে পরিমাণের উল্লেখ নেই। বেশির ভাগ কার্ড কিনছেন পাইকাররা। এমনি কর্মকাণ্ড নিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় শনিবার (২৪ জুন) সকাল থেকে ভিজিএফ মালামাল বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু ছালেহ মো. মুসা জঙ্গী জানান, দুই একটি অভিযোগ পাওয়ার পর বিতরণ কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছি। ওজনে খুব একটা কম দেওয়া হয়নি। গমের মান মোটামুটি এবং দেশি গম দেওয়া হয়েছে।

বিতরণে কোনো অনিয়ম করা হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।