গুরুতর আহত মাসুম মাঝি এখন বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
তিন সন্তানকে ঈদের নতুন পোশাক কিনে দেওয়া দূরের কথা, ঘরে চাল আনার টাকা পর্যন্ত নেই তার ঘরে।
এভাবেই একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে একটি পরিবারের ঈদ আনন্দ।
চরম কষ্টে এ কথাগুলোই জানান ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর ইউনিয়নের মাসুম মাঝির স্ত্রী ময়না (২৫)।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কথা ছিলো, মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে দুই মেয়ে সুরাইয়া ও সুমি এবং এক ছেলে জুনাইদকে ঈদের নতুন জামা কিনে দেবেন তার স্বামী। ঘরে আনবেন সেমাই ও চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় তরি-তরকারি। কিন্তু ট্রলার দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি এখন নিজেই বিছানায় কাতরাচ্ছেন’।
রাজাপুর নতুন বেড়িবাঁধের পাড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি যাচ্ছিলেন জেলে বধূ ময়না। চোখ-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
তিনি আরো বলেন, ‘এক বছর আগে রাক্ষুসি মেঘনা ঘর-দুয়ার কেড়ে নেয়। ধার-দেনা করে বাঁধের পাশে নতুন করে ঘর তুলেছি, সে টাকাও পরিশোধ হয়নি। নতুন করে জাল-ট্রলার তৈরি করতেও এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি’।
‘কিন্তু ট্রলার ডুবে সব শেষ। সন্তানদের নতুন জামা কিনে দেওয়াও হলো না, এখন ঘরে রান্না করার চাল, তেল, নুন কেনারও পয়সা নেই। আমাদের ঈদ নেই’।
কান্না জড়িত কণ্ঠে ময়না বলেন, ‘পরিচিত জনদের কাছে টাকা ধার চেয়েছি। কিন্তু কেউ ঈদের সময় টাকা ধার দিতে চান না। ঘরে অসুস্থ স্বামী, ওদিকে সন্তানদের নতুন জামা কেনার বায়না। কি করবো? কোনো উপায় নেই। ঈদ আসে ঈদ যায়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না’।
সরকারি সুযোগ-সুবিধা এলেও তা তাদের ভাগ্যে জোটে না বলেও অভিযোগ ময়নার।
প্রায় একই গল্প তাসনুরের। ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে তারও।
তিনি বলেন, দুই বছর ধরে ঘরে প্রতিবন্ধী স্বামী। ছেলে নেই, তিন মেয়ে। অভাবের তাড়নায় এক মেয়ে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে। মাসে দুই হাজার টাকা পাঠায়, তা দিয়ে চলে চারজনের সংসার’।
কান্না জড়িত কন্ঠে তাসনুর বলেন, ‘ঈদ এলেও ঘরে আনন্দ নেই। মেয়েদের নতুন জামা কিনে দিতে পারিনি, পাইনি সরকারি কোনো সহযোগিতাও। অন্যদিনের মতোই ঈদের দিনও কাটবে ডাল-ভাত খেয়ে’।
ময়না ও তাসনুরের মতোই বাঁধের পাশে আশ্রিত পরিবারগুলো দারিদ্র্য ও অভাব-অনটনে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। সন্তানদের কিনে দিতে পারে না নতুন জামা।
খুশির বার্তা বয়ে আনলেও বাঁধের ওপরে বিবর্ণ ঈদ কাটে নদীভাঙন কবলিত ছিন্নমূল মানুষদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
এএসআর