কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-ময়মনসিংহে চলাচলকারী ট্রেনে বেড়েছে হিজড়াদের উৎপাত। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন এই অঞ্চলে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ।
যাত্রীদের অভিযোগ, হিজড়াদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র রেলওয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের যোগসাজশে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের মধ্যবর্তী গফরগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ স্টেশন পর্যন্ত চলতি পথে ট্রেনে থাকা যাত্রীদের নানা রকম ভয়ভীতি ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে এক প্রকার জোরপূর্বক টাকা আদায় করে থাকে।
কোন যাত্রী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক হেনস্থার শিকার হতে হয়। চেহারা ও যাত্রীর বেশভূষা দেখে তারা সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকে। তবে যাত্রীদের সাথে কোন শিশু থাকলে তা বেড়ে হাজারে গিয়ে ঠেকে বলে অভিযোগ সাধারণ যাত্রীদের।
সারা বছর এদের চলাচল ও চাঁদাবাজি স্বাভাবিক থাকলেও ঈদ মৌসুমে তা বেড়ে যায় বহুগুণে। অন্যান্য সময় এসব হিজড়াদের আচরণ তুলনামূলক সহনীয় থাকলেও ঈদ বা পুজার সময়ে এদের চলাচল ও চাঁদার হার বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ সময় একই বগিতে হানা দেয় কয়েকটি গ্রুপ, যার মধ্যে সব গ্রুপকেই যাত্রীদের খুশি করতে হয়। অন্যথায় যাত্রীদের প্রতি তাদের নোংরা অভিব্যক্তি যে কারো চোখ মাটিতে নামাতে বাধ্য করে। ফলে যেসব যাত্রীরা এদের বিষয়ে আগে থেকে জানেন তারা চক্ষুলজ্জার ভয়ে চাওয়া মাত্রই টাকা দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন!
এই রোডে চলাচল করা সকল লোকাল ট্রেন ছাড়াও আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, হাওর এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসসহ এই রেলপথের আধুনিক ট্রেন লাল সবুজের তিস্তা এক্সপ্রেসেও চলে তাদের চাঁদা আদায়ের হিড়িক।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেসে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনটি সকাল ১০টায় গফরগাঁও স্টেশনে প্রবেশ করলে হিজড়াদের তিনজন ও দুজনের দুটি গ্রুপ ট্রেনে উঠে। এরপর ট্রেন চলতে শুরুর ৫ মিনিট পর শুরু হয় তাদের চাঁদা আদায়। এর মধ্যে যারা চাওয়া মাত্র টাকা দিচ্ছেন তারা রেহাই পেলেও যারা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন তাদের সাথেই চলছে তাদের অসভ্য আচরণ। যারপরনাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই সাধারণ যাত্রীরা টাকা দিচ্ছেন।
এভাবে কিছু সময় চলার পর বাংলানিউজের এই প্রতিনিধি তাদের এসব ছবি তুলছেন দেখামাত্র তারা (হিজড়া) তার দিকে তেড়ে আসেন। মোবাইল ফোন কেড়ে নিতে চান। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তাদের কোন ছবি তুলতে নিষেধ করেন। কথা বলতে চাইলে কোন ধরনের কথা বলা যাবে না বলে বগি ছেড়ে চলে যান।
একইভাবে রাতে ফেরার পথে ঢাকাগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসেও চোখে পড়লো একই ঘটনা। ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশনে আসার পর কয়েকজন হিজড়া উঠে পড়েন এতে। ট্রেন ছাড়ার কয়েক মিনিট পর শুরু করেন তাদের চাঁদাবাজি। যাত্রীদের প্রতি তাদের ভাষ্য, “তোরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমোদ-ফুর্তিতে ঈদ করবি, আমরা কি দোষ করেছি? আমাদের কি ঈদ করতে হবে না? দে টাকা দে!”
এ সময় ছবি না তোলার শর্তে নাজমা নামের একজন কথা বলতে রাজি হন বাংলানিউজের সাথে। তিনি জানান, মূলত টাকা তোলার সেফ জোন গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহ এই এলাকায় ট্রেন চলার সময়। কারণ এখানে কোন ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকে না কিংবা নিরাপত্তা রক্ষীরাও কোন ঝামেলা করেনা। ফলে নিশ্চিন্তে টাকা তুলতে পারে তারা।
তিনি আরো জানান, এক ট্রেনে আমাদের এক গ্রুপ গফরগাঁও যায় আবার ফিরতি আরেক ট্রেনে ময়মনসিংহ ফেরত আসে। এই টাকার এক ভাগ চলে যায় উপরে, আর কিছু পান যারা তোলেন তারা। সব সময়ের হিসাব বাদ দিয়ে ঈদে স্পেশাল কিছু নেওয়ার রেওয়াজ বেশ পুরোনো বলে জানান তিনি।
নিয়মিত ময়মনসিংহে যাতায়াতকারী সরকারি কর্মকর্তা আশরাফুল খন্দকার বাংলানিউজের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই রোডে নিয়মিত চলাচল করলে আপনি বুঝতে পারতেন হিজড়াদের আক্রমণ কি পরিমাণ বাজে হয়। পরশু চারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে হাওর এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। হিজড়াদের হুমকি ধামকিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। রেলওয়ে পুলিশদের অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই। যদি এটা রোধ নাই করা যায় তবে হিজড়াদের জন্য এক্সট্রা টাকা টিকিটের সাথে যুক্ত করার জোর দাবি জানাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের একজন পরিচর্যক বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা থেকে এদের চলাচল হয় না। সেখানে বেশ কড়াকড়ি থাকায় গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত চলার সময় যাত্রীদের নিকট থেকে এরা চাঁদা আদায় করে। আমরা নিষেধ করলেও তা মানে না। উল্টো আমাদের সাথে বাজে আচরণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘন্টা, জুন ২৩, ২০১৭
ডিআর/আরআই