ধানের দাম কমে যাওয়ায় একদিকে মিলাররা ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন, অপরদিকে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমায় সামনে আরো কমবে এ ‘আশঙ্কায়’ বিক্রেতারা চাল কেনা-বেচা বন্ধ রেখেছেন।
ফলে গত তিন ধরে নাটোরে পাইকারি বাজারে কোনো ধরনের চাল কেনা-বেচা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিকেলে নাটোর শহরের বিভিন্ন চালবাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখতে পাওয়া যায়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বাজারে জিরাশাইল ৪৭ টাকা, পাইজাম ৫৫ টাকা, সাটার মিনি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, সাম্পা কাটারি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ব্রি-২৮ জাতের চাল ৪৬ টাকা, ব্রি-২৯ জাতের চাল ৪৪ টাকা, খাটোদশ চাল ৪০ থেকে ৪১ টাকা ও খুদ চাল ২৯ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে এসব ব্যবসায়ী নতুনভাবে আর চাল না কিনে আগের ক্রয় ও মজুদকৃত চালই ওই দামে বিক্রি করছেন। আর পাইকারি বাজারে কেজিতে দুই টাকা হারে চালের দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের ভয়ে ব্যবসায়ীরা চাল কেনা-বেচা একদম বন্ধ করে দিয়েছেন।
তবে এনিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উঠে এসেছে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্য থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন খুচরা চাল ব্যবসায়ী জানান, পাইকারী ব্যবসায়ী ও মিলাররা তাদের কাছে চাল মজুদ থাকলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ‘চাল নেই’ বলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। এজন্য তারা চাল কেনা-বেচা বন্ধ রেখেছেন।
তারা কমে যাওয়া দরে চাল বিক্রি করলে খুচরা বাজারেও সব রকম চালের দাম কমে যেত। কিন্ত তা না করে তারা অবৈধ মুনাফার লোভে সিন্ডিকেট করেছেন।
তবে পাইকারী বিক্রেতারা ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন’ দাবি করে বলছেন, মিলাররা চাল উৎপাদন করলেও তারা পাইকারি বাজারে চাল বিক্রয় করছেন না। তাই নিজেরাও কিনতে না পারার কারণে চাল বিক্রি করতে পারছেন না।
এদিকে শহরের কানাইখালি এলাকার চাল আড়তের খুচরা বিক্রেতা ইব্রাহিম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমলেও তারা কম দামে চাল বিক্রি করতে পারছেন না।
কারণ তারা বেশি দামে চাল কিনেছেন। তাই ওই দরে চাল বিক্রি করলে তাদের বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হবে। তাছাড়া খুব শিগগিরই চালের বাজার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসব কারণে তারা নতুন করে আর চাল কিনছেন না। এছাড়া মিলার ও পাইকারি চাল বিক্রেতারাও চাল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। একই কথা জানালেন, চাল ব্যবসায়ী শামিম হোসেন, আব্দুস সালামসহ আরো অনেকে।
চালের পাইকারি ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রেকাত আলী বাংলানিউজকে জানান, সব মিলার ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা মিলে মজুদকৃত ধান থেকে চাল উৎপাদন অব্যাহত রাখলেও বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
একারণে তারা চাল ক্রয় করতে পারছেন না। নিজেরাও বিক্রি করতে পারছেন না। এজন্য নাটোরে তিন দিন ধরে কোন কেনা-বেচা নেই। বাহিরের ক্রেতাও নেই।
জেলা চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রব খান আলেম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানি করা চালের শুল্ক শতকরা ২৮ ভাগ থেকে কমিয়ে ১০ ভাগে আনার সিদ্ধান্ত নেয়ায় চালের বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই লোকসান এড়াতে তারা চাল কেনা-বেচায় হিসাব-নিকাশ করছেন।
এদিকে এবার হঠাৎই প্রতিকেজি চালের দাম লাগামহীনভাবে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের। বিশেষ করে দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষরা পড়েছে চরম বিপাকে। তাদের উপার্জনের প্রায় সব টাকাই ব্যয় করতে হচ্ছে চাল কেনার পেছনে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদারকি আছে কি না জানতে চাইলে জেলা মার্কেটিং অফিসার মোঃ নূর মোমেন ধানের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বন্যাকে দায়ী করেন। তিনি সংকট কাটাতে বিদেশ থেকে দ্রুত চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
জেএম