ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অন্যরকম রওশন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
অন্যরকম রওশন! ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজে রওশন এরশাদ। ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ : ‘ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ কাছের জেলা। এ জেলার মানুষ শান্তিপ্রিয়। এ কারণে চাকরির জন্য সবাই ময়মনসিংহে আসতে চায়।’

এ পর্যন্ত বলেই একটু থামলেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।

এরপর নিজের চিরায়ত ধাঁচের বাইরে রসিকতা করে বললেন, ‘সবাই কেন ময়মনসিংহ আসতে চাইবে না।

এ ময়মনসিংহ যে আমার বাড়ি। আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনেক আদর-স্নেহ করি। তোমরাও তো সবাই আমাকে পছন্দ করো। ’

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতে এভাবেই রসিকতা করছিলেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য বেগম রওশন এরশাদ।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেক দিন তার আসা হয়নি নিজের প্রাণোচ্ছ্বল শৈশব-কৈশোরের নাড়ি পোতা ভিটায়।

অসুস্থতা কাটিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে ছুটে এসেছেন নিজ সংসদীয় আসনে। প্রবীণ এ রাজনীতিকের আগমনে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউজে এসে ভিড় জমান।

বিরোধী দল মানেই কথায় কথায় ওয়াকআউট। সংসদ বর্জনের চিরায়ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে হিমঘরে পাঠানো হয়েছে।  

এদিন বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের সময় বেশ ফুরফুরে মনে হচ্ছিল সংসদে ইতিবাচক রাজনীতির ধারাপাত রচনা করা বিরোধী দলীয় এ নেতাকে। তার এমন চেহারায় দলীয় নেতাকর্মীরা তো বটেই, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ছিলেন উদ্দীপ্ত।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিনের কাছে রওশন এরশাদ জানতে চাইলেন, ময়মনসিংহে তার সময় কেমন কাটছে।

সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার এমন আন্তরিকতায় মুগ্ধ জিএম সালেহ উদ্দিন বললেন, ‘আমার দেড় বছর হয়েছে। এ সময়টুকু ভালভাবেই পার করতে পেরেছি। ’

তদবিরবাজদের বরাবরই আড় চোখে দেখেন রওশন এরশাদ। তদবির রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেন না। এদিন তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের  সময়েই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ সংক্রান্ত এক তদবির নিয়ে তার কাছে এসেছিলেন তারই দলের এক নেতা।

কিন্তু তাকে নিরুৎসাহিত করে রওশন এরশাদ উচ্চারণ করলেন- ‘আমি কোন তদবির করি না। ’

আলাপ গড়াতেই তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে এলেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইকরামুল হক টিটু।

তখন সামনেই বসা ছিলেন ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফকরুল ইমাম ও ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন মুক্তি।

রওশন এরশাদ ময়মনসিংহের তরুণ মেয়র ইকরামুল হক টিটু’র স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। একই সঙ্গে আধুনিক ময়মনসিংহ পৌরসভা গড়তে তার বিভিন্ন কর্মযজ্ঞেরও প্রশংসা করেন।

ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটুও বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে গণতন্ত্র ও দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রওশন এরশাদের ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, আপনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বাগ্মিতা সম্পর্কে ময়মনসিংহ তো বটেই, দেশের মানুষও অবগত। ’

এরপর রওশন এরশাদ সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউজ জিমনেশিয়ামে ময়মনসিংহের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে তার আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগ দেন।

পরে ইফতার মাহফিলেও আবেগি বক্তব্য রাখেন বেগম রওশন এরশাদ এমপি। তিনি বলেন, গত রমজান মাসে আমরা এক সাথে মিলিত হয়েছিলাম। তখন আমরা সবাই ভালো ছিলাম। এবারো আপনাদের সবাইকে দেখে ভালো লাগছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।