তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে। কারণ একটা জিনিস পরিষ্কার, যদি ছিনতাইকারীরা তাকে হত্যা করে থাকে, তাহলে এলোপাতাড়িভাবে তাকে ছুরিকাঘাত বা গুলি করতো।
‘তার মানে আমি নিশ্চিত তাকে সড়ক থেকে ধরে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে এই হত্যাকাণ্ড কেন বা কারা ঘটিয়েছে তা আমিও জানি না। এই হত্যাকান্ডের রহস্য পুলিশকেই বের করতে হবে। ’
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাজধানীর দক্ষিণ গাওয়াইর এলাকায় নিহত এএসপি মিজানুরের নিজ বাড়িতে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার বাবা আলহাজ্ব আব্দুল বাকী তালুকদারের।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (২০ জুন) ইফতারের আগে আমার ছেলে মিজানুর বাসায় এসেছিলো। একসঙ্গে ইফতার করে পরিবার নিয়ে আলোচনা করা হয়। ঘণ্টাখানেক থেকে সে আবার চলে যায়। তার সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল বলে সে কখনও আমাদের জানায়নি।
এএসপি মিজানুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, মরদেহের বিভিন্ন চিহ্ন দেখে মনে হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে একটি হত্যাকাণ্ড।
এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তবে কেন এবং কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তদন্তের পর বিষয়টি সম্পর্কে জানা যাবে।
এর আগে, গত বুধবার (২১ জুন) দুপুরে রাজধানীর রূপনগর থানাধীন মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার বিরুলিয়ায় অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাব সংলগ্ন রাস্তার পাশে একটি ঝোপের ভেতর থেকে হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মিজানুর রহমান তালুকদারের (৫০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের আসামি করে নিহতের ছোট ভাই মাসুম তালুকদার বাদী হয়ে রূপনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয় বুধবার (২১ জুন) ভোর সেহরির পরপরই সাভার মহাসড়কে দায়িত্ব পালনের জন্য উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টর, ৩ রোডের ৩৮ নম্বর বাসা থেকে বের হন মিজানুর রহমান। পরে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়কের ঢাকা বোটক্লাব এলাকার রাস্তার পাশে একটি জঙ্গলে ফেলে যায়।
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শাহীন আলম বাংলানিউজকে বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়ে এএসপি মিজানুর রহমানের মৃত্যু হতে পারে। সে বিষয়টি সামনে রেখেই তদন্ত কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়গুলো মাথায় রেখে পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এই মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) এএসপি মিজানুরের মরদেহ দাফনের জন্য টাঙ্গাইলের ঘাটাইল আনিখোলা গ্রামে তার নিজ বাড়িতে নেয়া হয়।
এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদার ১৯৮৮ সালে পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগেও (ডিবি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)তে তিনি কাজ করেছেন। কর্মদক্ষতার কারণে বাহিনীতে তার পদোন্নতি হয়।
গাজীপুরের কাপাশিয়া, শেরপুর সদর ও মানিকগঞ্জের বেশ কয়েকটি থানায় পরিদর্শক (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কর্মজীবনে এএসপি মিজান ৩ বার সুদান ও পূর্ব তিমুরে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে গিয়েছিলেন। বছর দু’য়েক আগে পদোন্নতি পেয়ে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হন। এরপর তিনি পুলিশের হাইওয়ে বিভাগে যোগদান করেন।
স্ত্রী শাহনাজ বেগম ও দুই সন্তান বৃষ্টি (১৬) ও মুশফিককে (৫) নিয়ে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় বসবাস করতেন এএসপি মিজানুর। ছেলে মুসফিক নার্সারিতে এবং মেয়ে বৃষ্টি উত্তরা হাইস্কুল এন্ড কলেজে ইন্টারমিডিয়েন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এসজেএ/আরআই