এমন রঙে রঙিন ট্রেনে বাড়ি যাওয়াটা তাই আনন্দের। ট্রেনের জানালার ফাঁক দিয়ে দুই হাত নেড়ে শিশুদের বাড়িযাত্রার উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছে- সামনে খুশির ঈদ।
বছরের সবচেয়ে বড় ঈদ-উল ফিতরের উৎসবে মাততে ইট-পাথরের শহর ছেড়ে গ্রামের পথে ছুটছেন লাখো মানুষ। ঘরমুখো যাত্রীদের অধিকাংশেরই আস্থা ট্রেনে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনগুলো দিনে যাত্রী টানছে প্রায় পৌনে এক লাখের কাছাকাছি। রেলের মাধ্যমে সারাদেশে এবারের ঈদে ২ লাখ ৬৫ হাজার যাত্রী আনা-নেওয়া করা হবে বলে জানিয়েছে রেল ভবন।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সারাদিন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা যাত্রীতে ভরপুর ছিলো কমলাপুর রেলস্টেশন। শুক্রবার (২৩ জুন) ঈদের আগের সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় চাপ আরও বাড়বে।
দিনের ট্রিপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাপ ছিলো রংপুর এক্সপ্রেস, নীলসাগর ও সিল্কসিটি ট্রেনে। এসব ট্রেনে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তেও দৌঁড়ে উঠছিলেন বহু যাত্রী। এমনকি গার্ডরুমেও উঠে পড়েন যাত্রীরা।
আসন সংকটে টিকিট না পেয়ে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে রওনা দেন আরও কয়েকশ’ যাত্রী।
এবারের ঈদে রেলে নতুন কোনো কোচবহর যুক্ত হয়নি। গত ঈদে যেমন ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে আনা ২৫০টি কোচ যুক্ত হয়েছিলো। এরপর আর কোনো কোচ আসেনি রেলে।
তবুও এই লাল সবুজই বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বশেষ সংযোজন। অত্যাধুনিক এসব কোচ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে রেলের পূর্ব-পশ্চিমসহ সব অঞ্চলে।
প্রথম দফায় লাল-সুবজ দিয়ে চালু করা হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের নতুন ট্রেন সোনার বাংলা। এরপর সিলেটগামী পারাবত পায় লাল-সবুজ কোচ। চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ও তুর্ণা এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এবং দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস। লালমণি এক্সপ্রেস ও ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেসও এখন লাল-সবুজের ট্রেন।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে এখন লাল-সুবজ কোচের সংখ্যা ২৭০টি। এর মধ্যে ১২০টি ব্রডগেজ ও ১৫০টি মিটারগেজ কোচ।
তবে এ বছর রেলে নতুন কোচ যুক্ত হওয়ার আর কোনো খবর নেই। ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে আরও ৫০টি যাত্রীবাহী মিটারগেজ কোচ এবং জার্মানি থেকে ৪টি রিলিফ ক্রেইন ট্রেন আসবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে এ বছর ৩১টি আন্ত:নগর ট্রেনের ঈদের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয়। দিনে দেওয়া হয় প্রায় ২৫ হাজার টিকিট। মেইল-লোকাল ও কমিউটার ট্রেন মিলিয়ে কমলাপুর কাউন্টার থেকে যায় প্রায় ৫০ হাজার টিকিট। স্ট্যান্ডিংসহ সব মিলিয়ে দিনে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বাড়ির পথ ধরছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার মানুষ।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার শীতাংশু চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, এবারের ঈদে বড় ধরনের কোনো শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে না। বুধবার (২১ জুন) প্রথম দিনের কয়েকটি ছাড়া সব ট্রেনই ঠিক সময়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনেও সময় মেনে চলেছে সব ট্রেন। যোগ হয়েছে রাজশাহী ও পার্বতীপুরগামী দু’টি স্পেশাল ট্রেন।
টানা ৫ দিনের আগাম টিকিট বিক্রি শেষে বাড়িযাত্রার পালা চলছে। তবে এখনও অবিক্রিত অনেক টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ২৩, ২৪ ও ২৫ জুনের ট্রেনের টিকিট কমলাপুর কাউন্টার ও অনলাইন থেকে কিনেও নিচ্ছেন অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এসএ/এএসআর