বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ধামরাইয়ের অঙ্কুর স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদের নতুন জামা-কাপড় বিতরণ করেন ওসি রিজাউল। সারিবদ্ধভাবে এসব উপহার বুঝে নিয়ে খুশিতে-আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী।
অপ্রত্যাশিত এ উপহার পেয়ে ঈদ-উল ফিতরের আগেই খুশির চাঁদ নেমে এসেছে উপজেলার সুবিধা বঞ্চিত পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামের মরহুম শেখ ইকরামুল হকের সন্তান শেখ মোহাম্মদ রিজাউল হক। গ্রামের সবাই তাকে ডাক নাম দিপু হিসেবে চেনেন।
পাখির প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে আগেও আলোচনায় আসেন ২০০০ ব্যাচের আউটসাইড এই ক্যাডেট।
বঙ্গবন্ধু বা প্রধানমন্ত্রীর গ্রামের লোক- এমন পরিচয়ে আঞ্চলিক প্রীতি নয়। বরং বিনয় আর পেশাদারিত্ব দিয়েই মানুষের জন্য কাজ করছেন তিনি।
নতুন কাপড় হাতে পেয়ে আনন্দে আত্নহারা শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার। সে বাংলানিউজকে বলে, ‘আমার বাপে ঠেলা গাড়ি চালায়। মায়ের অসুক করায় বাপে কইছে, এবার ঈদে নতুন জামা কাপড় দেয়ন যাইবো না। মনে কষ্ট আছিলো। বন্ধুরা হগলতে (সবাই) নতুন জামা কাপড় পিন্দা (পরে) ঈদের দিন ঘুরবো, আর আমি কি করুম? ওসি স্যার আমাগো কষ্টের কতা(কথা) কেমনে টের পাইলো হেইডাই (সেটাই) ভাবতেছি’।
শেফালী খাতুনের চোখে-মুখে খুশির ঝলক। তার মা কাজ করেন ইটভাটায়। উচ্ছ্বাস দেখা গেছে চাঁদনী, রুকসানা, হালিমা, বাদল, আব্দুল, কাদের- এমন অসংখ্য পথশিশুর মাঝেও।
অঙ্কুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমরান আশিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘নৈশ স্কুলটির অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিন্ম আয়ের মানুষের সন্তান। প্রায় সকলের পরিবারেই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাদের এখানে লেখাপড়া শেখানো হয় আমাদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। বেতন নেওয়া হয় না, আবার অঙ্কুর পরিবার সংগঠনের সদস্যদের চাঁদার টাকায় তাদের বই-খাতা কিনে দেওয়া হয়’।
‘সুবিধা বঞ্চিত এসব শিশুর হাতে অপ্রত্যাশিত এমন উপহার তুলে দেওয়া সত্যিই অভাবনীয়’।
অঙ্কুর পরিবারের সদস্য ইকতিয়াক বিপুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে পড়ে মূলত পথশিশুরা। ওরাও উচ্চবিত্তদের বিলাসী চলাফেরা ও অপচয় করতে দেখে। অথচ আমরা সবাই যদি একটু অপচয় কমিয়ে ওদের কথা ভাবতাম, তাহলে কতোই না খুশি হতো এই শিশুরা’।
‘এ ভাবনা থেকেই ১৮০ জন মেয়ে শিশুকে ফ্রক-জামা আর ১২০ জন ছেলে শিশুর হাতে শার্ট-প্যান্ট তুলে দিয়েছেন ওসি’।
বিপুল জানান, তারা এর আগে ফল উৎসব, পিঠা উৎসব ও ঈদে এভাবে নতুন জামা-কাপড় বিতরণের আনন্দ উৎসব করেছেন। এবার ওসির উদ্যোগে এটি তাদের চতুর্থ প্রয়াস।
ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির বলেন, ওসি শেখ মোহাম্মদ রিজাউল হক ধামরাই থানায় যোগ দেওয়ার পর বদলে গেছে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। চুরি-ডাকাতি নিয়ে নিত্য যন্ত্রণায় থাকা উপজেলাবাসী এখন ঘুমোতে যান স্বস্তি আর নিরাপত্তা নিয়ে।
এবার বদলাচ্ছে মানবিকতার বিষয়গুলোও উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, মানুষের প্রতি ভালোবাসা ছাপিয়ে প্রকৃতির অনন্য সম্পদ পাখির প্রতিও ভালোবাসা প্রদর্শনের অনবদ্য উদাহরণ তৈরি করেছেন ওসি।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, শেখ মোহাম্মদ রিজাউল হক যে কাজটি করেছেন, তা অনন্য। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের গর্বিত করেছেন তিনি। এমন মানবিক কার্যক্রমই বদলে দিতে পারে পুলিশ সম্পর্কে জনগণের ধারণা আর দৃষ্টিভঙ্গি। পুলিশকে নিয়ে আসতে পারে সাধারণ মানুষের আরো কাছাকাছিও।
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ রিজাউল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঈদ মানে খুশি। কেবল পরিবার আর নিজের সন্তানদের খুশি দেখলেই চলবে না। আমি আমার বোনাস-বেতনের টাকা নিলাম, এগিয়ে এলেন সহকর্মীরাও। নিজেদের পছন্দ করা জামা-কাপড় কিনে তুলে দিলাম শিশুদের হাতে। ওদের মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখে যে স্বর্গীয় আনন্দ পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশের নয়’।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
জেডআর/এএসআর