ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টার্কি পুষে আলোর মুখ দেখছেন নাটোরের কাশেম

মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১১ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
টার্কি পুষে আলোর মুখ দেখছেন নাটোরের কাশেম টার্কি পুষে আলোর মুখ দেখছেন নাটোরের কাশেম- ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রক্ষ্মপুর গ্রামের কাশেম কারী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে মাছ চাষ করছেন।

তবে এবার তিনি মাছ চাষের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে টার্কির (এক ধরনের পাখি) খামার গড়েছেন। শুরুতেই মোট ১০০টি বাচ্চা কিনেছেন তিনি।

একেকটি বাচ্চার দাম পড়েছে এক হাজার টাকা। তার খামারের টার্কির বয়স এখন ৭০ দিন। ওজন প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি করে।

কাশেম কারী বাংলানিউজকে জানান, বাচ্চা কেনা থেকে এ পর্যন্ত খাবার বাবদ মাত্র ১০ হাজার ও চিকিৎসা বাবদ দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে এই অবস্থাতেই তার খামারের টার্কির দাম পাওয়া যাবে অন্তত এক লাখ ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ৭০ দিনের টার্কি বিক্রি করে তার মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাস হিসেবে ধরলেও তার খরচ বাদে মাসিক আয় দাঁড়াবে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আর পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পর বিক্রি করলে আরো বেশি লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

তিনি জানান, টার্কি পালনে প্রচুর ধৈর্য্য আর পরিশ্রম দরকার হয়। সার্বক্ষণিক এর পেছনে সময় দিতে হয়। তবে টার্কি পালনে অন্যান্য পশু- পাখি পালনের চেয়ে তুলনামূলক খরচ কম হয়। তাই সব ঠিক থাকলে টার্কি পুষে আসতে পারে সুদিন। এজন্য তিনি তার খামারের পরিধি ও টার্কির সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছেন।

এরই মধ্যে সেডঘর প্রশস্ত করেছেন। মাছ আর টার্কি চাষ এক হাতে সামলাচ্ছেন তিনি।
টার্কি পুষে আলোর মুখ দেখছেন নাটোরের কাশেম- ছবি: বাংলানিউজ

কাশেম কারী বলেন, টার্কি খামারে বেশি বিনিয়োগ দরকার হবে। যাদের পুঁজি কম, তাদের জন্য সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে পারলে টার্কি চাষ বাড়বে। যা বেকার তরুণদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

এদিকে, নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, টার্কি এক ধরনের পাখি। যা দেখতে অনেকটা মুরগির মতো। পোল্ট্রি অর্থাৎ যেসব পাখি জাতীয় প্রাণী পালন করে ডিম ও মাংস খাওয়া যায়, তার মধ্যে টার্কি অন্যতম। মেলিয়াগ্রিডিডিই পরিবারের সদস্য টার্কির বৈজ্ঞানিক নাম Meleagris gallopavo. এরা পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। প্রতিদিন মোট খাদ্যের ৫০-৬০ ভাগ নরম ঘাস খায়। তাই খাবার খরচ কম। রোগবালাই (বার্ড ফ্লু, গুটি বসন্ত, ঠাণ্ডাজনিত রোগ ছাড়া এখনো এদের অন্য কোনো রোগ পরিলক্ষিত হয়নি) কম বলে চিকিৎসা খরচও কম। মাংস উৎপাদনের দিক থেকে খুবই ভালো (ছয় মাস বয়সে পাঁচ-ছয় কেজি)। পাখির মাংস হিসেবে এটা মজাদার এবং কম চর্বিযুক্ত। তাই গরু বা খাসির মাংসের বিকল্প হতে পারে। একটি মেয়ে টার্কির ওজন পাঁচ-ছয় কেজি এবং পুরুষ টার্কির ওজন আট থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। টার্কির মাংস স্বাদেও ভালো।

তিনি আরো জানান, ঘাস, পোকামাকড়, সাধারণ খাবার খেতে এরা অভ্যস্ত, তবে উন্নত খাবার দিলে ডিম ও মাংস বেশি হয়। চার-পাঁচ মাস বয়সের টার্কি কেনা ভালো, এতে ঝুঁকি কম। এরকম বয়সের এক জোড়া টার্কির দাম হবে প্রায় ৪৫০০-৫০০০ টাকা।   প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে শুরু না করে আট-১০ জোড়া দিয়ে শুরু করা ভালো, কারণ তাতে সুবিধা-অসুবিধাগুলো বোঝা সহজ হয়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেকের ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি অনীহা আছে। তাদের জন্য এটা হতে পারে ভালো বিকল্প। এদেশে প্রোটিনের নতুন উৎস হিসেবে টার্কি হতে পারে বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।