ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ স্বজনরাও!

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ স্বজনরাও! হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মিজানুর রহমানের মরদেহ

ঢাকা: ছেলে মুশফিক ও মেয়ে বৃষ্টিকে আদর করে ভোরেই বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে যাচ্ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মিজানুর রহমান। বাসার গেট দিয়ে বের হয়ে হেঁটেই রওনা করেন। 

ভোরে বের হলেও দুপুর না গড়াতেই খবর এলো এএসপি মিজানুরের মরদেহ রাস্তার পাশে ঝোপে পড়ে রয়েছে। স্বামীর মরদেহ দেখে অতি শোকে স্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্ত্রী শাহানাজ বেগম।

 

মিজানুরের এমন মৃত্যুর সংবাদে স্বজনরাও বাকরুদ্ধ, মর্মাহত। তার এ মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।  

বুধবার (২১ জুন) দুপুরে রাজধানীর রূপনগর থানাধীন মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার বিরুলীয়া পঞ্চপট্টি সংলগ্ন ঢাকা বোটক্লাব রাস্তার পাশে একটি ঝোপের ভেতর থেকে এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের (৫০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

রাত ৮টার পর মরদেহের সঙ্গে স্বজনরাও ঢামেক হাসপাতাল মর্গে আসেন। ওই সময় তারা একে অপরের সঙ্গে বলাবলি করেন, ‘এটা কি হলো, খুব সাধারণভাবে চলতেন তিনি, কে তাকে মেরে ফেললো?’

‘কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলা নেই, টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কোনো দ্বন্দ্ব নেই, পারিবারিক কোনো কলহ নেই। তার সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিলো কি-না আমার তাও জানতে পারিনি। ’ 

পুলিশের ধারণা, ভোরে কোনো ছিনতাইকারীর কবলে পরার পর পরিচয় পুলিশ জেনে হত্যা করে এভাবে ফেলে রেখেছে।  

নিহতের ছোট ভাই মো. মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, একজন পুলিশ অফিসারও আজ নিরাপদ নয়, আমরা কতটুকু নিরাপদ। ভাইয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিও জানান তিনি।  

এদিকে, নিহত এএসপি মিজানুরের মাথার চামড়া কাটা ছিল, কপালে আঘাতের চিহ্ন ছিলো, দুই গালে কাটা জখম ও থুঁতনিতে আঘাত রয়েছে। এছাড়া মরদেহের গলায় গার্মেন্টর ঝুট কাপড় দিয়ে পেঁচানো ছিল বলে সুরতহাল প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেন রূপনগর থানার উপ-পরিদর্শক মো. আলমগীর।  

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত এএসপি মিজানুরের পকেট থেকে তার দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। সঙ্গে একটি ব্যাগও ছিল। ওই ব্যাগে ছিল পুলিশের ইউনিফর্মের একটি শার্ট। তবে সঙ্গে থাকা মানিব্যাগটি পাওয়া যায়নি।  

রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শাহীন আলম বাংলানিউজকে বলেন, এএসপি মিজানুর রহমানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে।  

‘কারা এবং কেন তাকে হত্যা করেছে তা জানতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ’

উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে এএসপি মিজানুরের বাসার দারোয়ান নুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন এএসপি মিজানুর। প্রায় সময় ভোরে বের হয়ে যেতেন। কোনোদিন তাকে পুলিশের পোশাক পড়ে যেতে দেখিনি। বুধবার ভোরেও তিনি বের হন। তবে তার সঙ্গে সবসময় একটি ব্যাগ থাকতো।   

তিনি বলেন, আড়াই বছর ধরে তারা এ বাসায় বসবাস করছেন। মিজানুর স্যার বাচ্চাদের খুব আদর করতেন। মারা যাওয়ার পর তার বড় মেয়ে বৃষ্টি কেঁদে কেঁদে বলে, ‘গতকাল মায়ের দেওয়া শার্টটি পড়ে ভোরে বের হয় বাবা, কিন্তু আজ আমাদের বাবা নেই। আমার ছোট ভাইটাকে এখন দেখবে কে? 

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল আনিখোলা গ্রামে এএসপি মিজানুরের জন্ম। রাজধানীর উত্তরায় দক্ষিণখান গাওয়াইরে একটি বাড়ি করেছেন। সেখানে তার মা-বাবা থাকেন। স্ত্রী শাহনাজ বেগমের বাড়ি কাপাশিয়ায়। ছেলে মুশফিক (৫) প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে, মেয়ে বৃষ্টি উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।  

১৯৮৮ সালে তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর সাভার থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এএসপি মিজানুর রহমান।  

ব্রিজের পাশ থেকে এএসপি মিজানুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এসজেএ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।