ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মওদুদের সেই বাড়ির ভোগদখল চান অস্ট্রিয়ার সোলায়মান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
মওদুদের সেই বাড়ির ভোগদখল চান অস্ট্রিয়ার সোলায়মান সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার নাগরিক করিম ফ্রানজ সোলায়মান। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অবৈধ দখল থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধিগ্রহণ করা বাড়িটি নিজের বলে দাবি করেছেন অস্ট্রিয়ার নাগরিক করিম ফ্রানজ সোলায়মান। বাড়িটির ভোগদখল পেতে সরকার ও রাজউকের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।

সোলায়মান রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বরের ওই বাড়ির মূল মালিক পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ এহসান ও অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজ দম্পতির একমাত্র ছেলে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ত্যাগের পর বহু বছরের ব্যবধানে মারা গেছেন তার বাবা-মা।

 এখন অস্ট্রিয়া থেকে এসে উত্তরাধিকার সূত্রে তিনিই বাড়িসহ জমির একচ্ছত্র মালিক বলে তা ফিরে পাওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন সোলায়মান।

বুধবার (২১ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয়তলার হলরুমে সোলায়মানকে আইন সহায়তা দানকারী আইনজীবী প্রতিষ্ঠান লিগ্যাসি লিগ্যাল কর্পোরেট এ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে।

উচ্ছেদের পর থেকে মওদুদ ও তার আইনজীবীরাও দাবি করে আসছেন, সরকার বা রাজউক নয়, বাড়ির মূল মালিক অস্ট্রিয়ার নাগরিক করিম ফ্রানজ সোলায়মানই।

সংবাদ সম্মেলনে সোলায়মান বলেন, ‘আমি অস্ট্রিয়ার নাগরিক। আমার মা ইনজে মারিয়া প্লাজও ছিলেন অস্ট্রিয়ার নাগরিক এবং আমার বাবা মোহাম্মদ এহসান ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক। সে সূত্রে আমার মা এ দেশে বসবাস করতেন। ১৯৬৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সাবেক ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) বর্তমানে রাজউক থেকে  গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে এক বিঘা ১৩ কাঠা ১৪ ছটাকের সম্পত্তিটি লিজ দলিলমূলে (নং-৯১১১) মালিকানা প্রাপ্ত হন আমার মা। সেখানে ডিআইটি বা রাজউকের যথাযথ অনুমতি সাপেক্ষে বাড়িটি নির্মাণ করেন তিনি’।

‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকার ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি আদেশ-১৯৭২’ এর মাধ্যমে বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ওই সম্পত্তি ফেরত পেতে আমার মা বিভিন্ন সময় নিজে এবং বিভিন্ন অস্ট্রিয়ান রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পুনরুদ্ধারের আবেদন জানান। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৮০ সালে ওই সম্পত্তি আমার মাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়’।

তিনি বলেন, ‘আমার মা ইনজে মারিয়া প্লাজ ১৯৮৫ সালের ৩০ মার্চ আমার বাবা এহসান ও আমাকে একমাত্র উত্তরাধিকারী রেখে ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে আমার বাবা মোহাম্মদ এহসান আমার মায়ের সমস্ত সম্পত্তিতে তার একচ্ছত্র অধিকার পরিত্যাগ করেন। যার ফলে অবশিষ্টাংশসহ সকল সম্পত্তিতে আমি একচ্ছত্র মালিকানা অর্জন করি’।

বাড়িটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের উল্লেখ করে করিম ফ্রানজ সোলায়মান বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চের রায়েও আলোচ্য সম্পত্তিতে আমার মায়ের মালিকানা সুনির্দিষ্টভাবে স্বীকৃত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ওই সম্পত্তি থেকে ব্যারিস্টার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উচ্ছেদ করে রাজউক। তাই আমি একজন বিদেশি নাগরিক হিসেবে আশা করবো যে, রাজউক যেন যতো দ্রুত সম্ভব আমার নাম নামজারি পূর্বক ওই জমিতে আমার দখল নিশ্চিত করে’।

সংবাদ সম্মেলনে করিম ফ্রানজ সোলায়মানের আইনানুগ অ্যাটর্নি জেনিফার আশরাফ বলেন, ‘এতোদিন নিরাপত্তাসহ আরও বেশ কিছু কারণে সোলায়মান তার সম্পত্তির ভোগদখল নিতে আসতে পারেননি। এখন তিনি এ সম্পত্তির মালিকানা বুঝে নিতে এসেছেন। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে তাকে সম্পত্তির দখল দিতে কোনো বাধা নেই’।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক আইনি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর এ সংক্রান্ত মামলায় বাড়িটিতে মওদুদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের মালিকানা অবৈধ বলে সর্বোচ্চ আদালত চূড়ান্ত রায় দেন গত ০৪ জুন। এর তিনদিন পর গত ০৭ জুন বাড়িটি অধিগ্রহণ করে নেয় রাজউক। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে মওদুদের দখলমুক্ত করে বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সিলগালা করে রেখেছে সংস্থাটি।

মওদুদের ভাই মনজুরের নামে বাড়িটি নামজারির নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রাজউকের আপিলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সে রায় বাতিল করে দিলে প্রমাণিত হয় যে, বাড়িটির মালিকানা মওদুদ বা তার ভাইয়ের নয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলেও গত ০৪ জুন তা খারিজ হয়ে যায়। ফলে ৩৬ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করে আসা বাড়িটি ছাড়া মওদুদের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে।

চূড়ান্ত রায়ে হেরে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেছিলেন, ‘দেশে কি আইন নেই? আমি আইনের আশ্রয় নেবো। আদালতের আশ্রয় নেবো’।

‘বিনা নোটিশে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ০৮ জুন মওদুদের করা রিট আবেদনের শুনানি আগামী ০২ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি (স্ট্যান্ড ওভার) করে রেখেছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
এমএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।