ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেঘনা-গোমতীর টোলপ্লাজায় কৃত্রিম যানজটে যাত্রী ভোগান্তি

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
মেঘনা-গোমতীর টোলপ্লাজায় কৃত্রিম যানজটে যাত্রী ভোগান্তি মেঘনা-গোমতীর টোলপ্লাজা

কুমিল্লা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বাংলাদেশের অন্যতম একটি ব্যস্ত মহাসড়ক। এ মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার ফলে এ মহাসড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকছে। 

টোলপ্লাজার ওজন স্কেলে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থেকে চাঁদাবাজিই এ কৃত্রিম যানজটের কারণ বলে জানা গেছে। যা আসন্ন ঈদ ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীদের মূল ভোগান্তির কারণ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় ওভারলোড যানবাহন থেকে লাইনম্যানের সাহায্যে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বয়ং টোল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  

জানা যায়, ওজন স্কেলে কিছু অসাধু লাইনম্যান রয়েছেন যারা স্কেল কর্মকর্তার যোগসাজশে ওভারলোড ট্রাক থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে সেগুলোকে সেতু দিয়ে পারাপারের সুযোগ করে দেয়। এতে ওভারলোড যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচলের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটির স্থায়িত্বও হুমকিতে পড়েছে।

টোলপ্লাজায় ধীরগতিতে মহাসড়কে সৃষ্ট যানজটস্থানীয় লোকজন জানান, সেতুর উপর দিয়ে সরকার নির্ধারিত ওজনের বেশি গাড়িগুলো থামিয়ে লাইনম্যানের সাহায্যে টাকা আদায় করা হয়। ১৮ টনের বেশি ওজনের যানবাহন থেকে ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের নিয়ম থাকলেও প্রায় সব পণ্যবাহী যানবাহন থেকেই চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ চালকদের। ওজন কম হলেও কোনো মাফ নেই। অনেক ট্রাক ও কন্টেইনার চালক বা হেলপাররা অতিরিক্ত টাকা আদায় নিয়ে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের লাইনম্যানদের (নিজস্ব বাহিনী) সঙ্গে তর্কাতর্কি কিংবা ধস্তাধস্তিও হয়। অনেক গাড়ি চালক লাইনম্যানদের পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে চলতি বছরের ২৫ মে ভোরে অলি উল্লাহ নামে টোলপ্লাজার এক লাইনম্যান ট্রাকের চাপায় নিহত হন।

টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় প্রতিদিন গড়ে ৪৫ হাজার যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হয়। এরমধ্যে ওজন বা ওয়েট স্কেল অতিক্রম করে ১৬ হাজার ভারী যানবাহন। ওয়েট স্কেল থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫ লাখ টাকা এবং টোলপ্লাজায় যাত্রীবাহী যানবাহন থেকে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। এর বাইরে টাকার একটি বৃহৎ অংশ চলে যাচ্ছে অসাধু চক্রের পকেটে।

সরেজমিনে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওজন স্কেলটি নিয়ন্ত্রণ করে একটি অসাধু চক্র, যেখানে টোলপ্লাজার সংশ্লিষ্টরাও জড়িত।

ইব্রাহিম নামে এক ট্রাক চালক জানান, সেতু দিয়ে চলাচল করার মতো ওজনের কম হলেও আমার কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়েছে টোল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দিয়েছে ৫শ’ টাকার রশিদ। অনেক চালক চাঁদা দিতে না চাইলে টোলের লাইনম্যানরা গাড়ির গ্লাস ভাংচুরসহ মারধর করে। মোবাইল, মানিব্যাগ রেখে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রশিদ না দিয়ে চাঁদা আদায় করেই ছেড়ে দেওয়া হয় অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন।

টোল প্রদানের রশিদজানা যায়, স্কেলে তিন শিফটে ১০ জন করে ৩০ জন লাইনে কাজ করেন। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় পণ্যবাহী গাড়ি স্কেলে না পাঠিয়ে দরকষাকষির মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে ছেড়ে দেওয়ার। আর টোলপ্লাজায় অতিরিক্ত টাকা আদায় নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় হয়। এতে টোলপ্লাজা থেকে প্রতিদিন ১/২ কি. মি. এলাকাজুড়ে ওভারলোড যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে এ মহাসড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

এদিকে গত ১৬ জুন সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাউদকান্দি টোলপ্লাজা পরিদর্শনে এসে ওজন স্কেলে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে টোলপ্লাজার কর্মকর্তাদের সর্তক করে গেছেন।

এ বিষয়ে মেঘনা-গোমতী সেতুর স্কেল ঠিকাদার কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জিয়াউল আহসান জিয়া বলেন, আমি শতভাগ সৎ। টোল আদায়কারী কেউ যদি এমন কাজ করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদা আদায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথাও বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।