ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মোড়, বাঁক ও গর্তে মহাসড়কে মরণের হাতছানি!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
মোড়, বাঁক ও গর্তে মহাসড়কে মরণের হাতছানি! মোড়, বাঁক ও গর্তে মহাসড়কে মরণের হাতছানি!

মহাসড়ক ঘুরে: বগুড়ার দক্ষিণে সিরাজগঞ্জের চৌরাস্তা গোল চত্বর। উত্তরে শিবগঞ্জের রহবল এ জেলার শেষ সীমানা। মাঝখানে ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক। যার দূরত্ব হবে ৯০ কিলোমিটারের মত। মহাসড়কের এ দূরত্বের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য মোড়। রয়েছে সরু বা বাঁকা সেতু অথবা ব্রিজ। এবার যোগ হয়েছে ভিন্ন এক সমস্যা। ছোট-বড় গর্তে ভরে গেছে মহাসড়কের বিশাল বুক। কিছু স্থান ধসে গেছে।

অতএব সাবধান! মহাসড়কে এসব খানাখন্দ আর গর্ত দিচ্ছে মরণের হাতিছানি!

মহাসড়কের ওপরের অংশ থেকে ছাল-বাকল উঠে গেছে। বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায় গর্তগুলো।

তখন তাকালেও বোঝার উপায় ধাকে না যে এখানে গর্ত আছে। এসব  চোরা গর্তে চাকা পড়ে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যানবাহন লাফিয়ে উঠছে। কোনো কোনো গর্তে পড়ে পাতি সেট ভেঙে যাচ্ছে যানবাহনের। নষ্ট হয়ে সেখানেই যানবাহন আটকা পড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।

ছাল-বাকল ওঠা, অসংখ্য চোরা গর্তময় বেহাল মহাসড়ক এখন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদেরও কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর আসন্ন। ক’দিন পরেই লোকজন নাড়ির টানে ছুটবেন বাড়ির পানে। অন্য রুটের যানবাহন চলতে শুরু করবে এ রুটে। ঘরমুখো মানুষদের নিয়ে শোঁ শোঁ শব্দ তুলে দাপিয়ে বেড়াবে আরেক রুটের যান।
এছাড়া দুই লেনের কাজ করতে মহাসড়কের বগুড়া ও গাইবান্ধার দশটি মোড়ে চলছে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি। মহাসড়কের খানা-খন্দ মেরামতে জোড়াতালির কাজই করছে সওজ। এতে ঘটতে পারে ছোট-বড় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। সব মিলিয়ে এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষদের জন্য মহাসড়ক কতটা ‘সুখকর’ হবে তা আগামী ক’টা দিনই বলে দেবে। এমন কথা বলছেন স্থানীয় লোকজন।
ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তা এবং স্থানীয় লোকজনের কথা বলি। তাদের সবার কণ্ঠেই বেহাল মহাসড়ক নিয়ে দুর্ভাবনাই উঠে এলো।

আব্দুল হান্নান। পেশায় বাসচালক। স্থানীয় রুটে বাস চালান। চলন্ত বাসে বসেই মহাসড়কের হাল নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘একে তো মহাসড়কে মোড়ের অভাব নেই। তার মধ্যে কোথাও কোথাও খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। পাশাপাশি চলছে খানা-খন্দক মেরামতে জোড়াতালির কাজ। এর মধ্যে আবার থেমে থেমে বৃষ্টিপাত লেগেই আছে। পানিতে ভরে যাচ্ছে গর্তগুলো। এ অবস্থায় গাড়ি চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে’।

তার ভাষায়, ‘একটু বেখেয়াল হলেই খবর আছে! সার্বক্ষণিক স্টিয়ারিং এদিক-ওদিক করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না। গর্তে চাকা পড়ে গাড়ি বারবার লাফিয়ে উঠছে। আপনে তো (এ প্রতিবেদক) সামনেই বসে আছেন। দেখেন না ভাই, সারারাস্তায় গাড়ি কি রকম ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে’।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে বগুড়ার শিবগঞ্জের রহবল পর্যন্ত মহাসড়কের ৯০কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য মোড় আর বাঁক। এসবের কোনো কোনোটি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ সমস্যার পাশাপাশি মহাসড়কের এ বিশাল অংশের সিংহভাগ এলাকায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, খান্দা-খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক খানা-খন্দক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এসব এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 মোড়, বাঁক ও গর্তে মহাসড়কে মরণের হাতছানি!
খানা-খন্দকে ভরা এসব স্থান মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কাজ হচ্ছে যেনতেনভাবে। মেরামতির কাজ খুবই নিম্নমানের হওয়ায় তা মোটেই টেকসই হচ্ছে না। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই মহাসড়ক সেই খানা-খন্দকে ভরে যাচ্ছে। পাশাপাশি গর্তের আকার আয়তনও বাড়ছে।

অপরদিকে দিকে মোড় এলাকায় দুই লেন করার কাজও চলছে। ফলে গাড়ি চলাচলের স্থান হয়ে পড়েছে সংকুচিত। এতে সংশ্লিষ্ট ভোগান্তির মাত্রা বেড়েই চলছে।

এনামুল হক, জহুরুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম, কোরবান আলীসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, টানা ও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ার আগ পর্যন্ত মহাসড়কে খানা-খন্দক তেমন একটা ছিল না। নিম্নমানের কাজ করায় বৃষ্টিপাতের কারণে দ্রুত মহাসড়কের কার্পেটিং লেয়ার বা ছাল-বাকল উঠে গিয়ে এভাবে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছে।

সোমবার (১৯ জুন) বিকেলে বগুড়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, মহাসড়কে সৃষ্ট খানা-খন্দক মেরামতের কাজ চলছে। আমি নিজে এ কাজ দেখভাল করছি। পাশাপাশি দুই লেনের কাজও দ্রুত চলছে।
তবে বৃষ্টিপাতের কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এরপরও ঈদের আগেই মহাসড়ক মেরামতের কাজ শেষ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।