ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাবা তুমি কি ঘুষ খাও?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৬ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
 বাবা তুমি কি ঘুষ খাও?

ঢাকা: আমার ১২ বছরের মেয়ে। নাম তনিমা। সে নাম করা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আমার সাথে কথা বলতে পছন্দ করে। যতক্ষণ বাসায় থাকি ওকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তার করা নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সে আমার নয়নের মণি। তার মাথার লাল ফিতার বেণীর কথা প্রায় সময় সামনে ভাসে। ওকে নিয়ে মাঝে মাঝে বাইরে বেড়াতে যাই। নামকরা রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া দাওয়া করি। একবার তার মাসহ বিদেশেও ঘুরতে গিয়েছি। একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরলে মেয়েটা হঠাৎ প্রশ্ন করে বাবা তুমি কি ঘুষ খাও?

নিজের মেয়ের কাছ থেকে এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে কিছুটা হলেও খাবড়ে গেলাম। কতো পরীক্ষা দিয়েছি, কতো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছি।

আমার পরীক্ষার তুলনায় মেয়ের প্রশ্নটি সহজ হলেও উত্তর কিন্তু কঠিন। এ প্রশ্নের উত্তর কি দেব ভাবছি। বললাম তুমি ছোট মানুষ। এ প্রশ্ন কেন করছ? ঘুষের তুমি কি বুঝ? ইতোমধ্যে আমার স্ত্রী সামনে এলো। তনিমাকে বললাম তোমার প্রশ্নের উত্তর তোমার মা দেবে। সে নাছোরবান্দা। মা কেন দেবে? প্রশ্ন করেছি তোমাকে। উত্তর তোমাকেই দিতে হবে। বললাম ঘুষ খাব কেন? এটা কি কোনো খাওয়ার জিনিস? সে বললো উত্তর হলো না বাবা!

তুমি ঘুষ খাও নাকি সেটা জানতে চেয়েছি। সোজা প্রশ্ন, সরাসরি উত্তর চাই। এবার তো আরও বড় প্রশ্ন করে বসলো বাবা তোমার বেতন কতো? এই যে তুমি গাড়ি কিনেছো, ফ্লাট কিনেছো এত টাকা কোথায় পেলে, বাবা? মায়ের এতো গহনা কোথায় পেলে? লোকজন বাসায় মিষ্টি আনে, ফলমূল আনে, কিসব প্যাকেট আনে, কেন এসব আনে? বল না বাবা, তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? আমি তো দুদক না। সত্য কথা বল, বাবা? আমি কিছু চাই না, শুধু সত্যটা জানতে চাই। বল না বাবা, আমি ঘুষ খোরের মেয়ে কিনা? কি যে বলব বুঝতে পারছি না। মিথ্যা বললাম, আমি ঘুষ খাই না। সে বললো তোমার কথায় জোর পাচ্ছি না। তুমি চিন্তা করে কালকে বলো। আপাতত হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

পরদিন অফিসে থেকে ঘরে ঢুকতেই দেখি দরজায় পোস্টার সাঁটা। ‘ঘুষ খাওয়া চলবে না’। কোনো মতে ঘুষ নয়। ঘুষ খোরের কন্যা আমি ন‍া। মেয়েটা আর আমার সাথে তেমন কথা বলে না। তার মা জানাল মেয়ে কোনোভাবেই গাড়িতে স্কুলে যায়নি। তাকে রিকশাতে করে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়েছে। গাড়ি নাকি তোমার ঘুষের টাকায় কেনা।

পরদিন আবার দরজায় পোস্টার। সাবধান সাবধান ঘরে ঘরে দুদক। ঘুষ খোরের কালো হাত ভেঙে দাও। সত্যের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়। আরো কি সব লেখা। রাতে বিছানায় আমার কাছে ঘুমাতে এসে জানায়। আমার গায়ে নাকি ঘুষের গন্ধ। মদের গন্ধের কথা জানি কিন্তু ঘুষের গন্ধ আবার কি? অবাস্তর সব প্রশ্ন? কি যে করব তা ভেবে পাই না। এতোসব কথা কিভাবে মেয়ে জানলো তা মাথায় আসে না। অজানা আশঙ্কায় মন ভরে উঠে। আমি খুব উদ্বিগ্ন। যাদের জন্য এতো কিছু করলাম আর তারাই বলছে চোর। আজ আমি আসামির কাঠগড়ায়।

চিন্তা ভাবনা আমাকে গ্রাস করলো। রাতে ঠিকমত ঘুমও আসে না। কতোজনকে ফাঁকি দিয়েছি। তবে নিজের মেয়ের কাছে আজ ধরা পড়ে গেছি। নিজেকে চোর চোর মনে হয়। যে পথে গিয়েছিলাম সে পথ থেকে নিজেকে গুটিতে নিতে শুরু করলাম। ছোট্ট মেয়েটা আমার চোখ খুলে দিলো। নতুন এক জীবনের যাত্রা শুরু হলো। মেয়েটার হাত ধরে বিকেলে হাঁটি। মনে মনে ভাবি আমি এখন ভালো আছি। হেরে গেছি নাকি জিতে গেছি তা বুঝি না। তবে মেয়ে আমার জীবনের নতুন মাত্রার সন্ধান দিয়েছে তা বুঝি।

সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাবা এমন বর্ণনা দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। যেখানে নিজের জীবনের এমন নানা কথা তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এসজে/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।