ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গরু আসে বিশ্বাসে, টাকা পাচার হুন্ডিতে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
গরু আসে বিশ্বাসে, টাকা পাচার হুন্ডিতে গরু আসে বিশ্বাসে, টাকা পাচার হুন্ডিতে

রৌমারী, রাজীবপুর ও উলিপুর (কুড়িগ্রাম) ঘুরে: কুড়িগ্রামের ৯টির মধ্যে ৭টি উপজেলা দিয়েই সরাসরি ভারত থেকে প্রবাহিত হচ্ছে ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদী। এসব নদ-নদী দিয়ে পাচার হয়ে আসছে ভারতীয় বড় গরু। আর রৌমারির খাঁটিয়ামারি, বেহুলার চর ও চান্দারচরে বাঁশের আড়ার সাহায্যে নির্মমভাবে কাটাতার পার করা হচ্ছে ছোট গরু।

তবে দু’দেশের ব্যাপারিদের মধ্যেকার বিশ্বাসের ওপরেই চলছে এ গরুর ব্যবসা। গরু আনতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থের দরকার হয় না।

ওপারের ব্যবসায়ীরা গরু পাঠিয়ে দেওয়ার পরে হুন্ডিতে মূল্য পরিশোধ করেন তারা।  

এভাবেই হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি টাকাও।
 
রৌমারী, রাজীবপুর ও উলিপুরে সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, অবৈধ পথে গরুর ব্যবসা নানা কারণে জমজমাট এসব অঞ্চলে। এ তিন উপজেলার ৩০ শতাংশ মানুষই ভারতের আসাম ও মেঘালয় থেকে আসা। অনেকের আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন সীমান্তের তারকাঁটার এপার-ওপারে। আত্মিক এ সম্পর্কের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে অবৈধ গরু চোরাচালানের সিন্ডিকেট।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রৌমারীর ছাটকাড়ির মতিয়ার রহমানের ছেলে হোসেন আলী, কাউনিয়ার চরের আহালুর রহমানের ছেলে আবু সাঈদ, হরিণার চরের ওসমান গণির ছেলে আফজাল, সাহেবের আলগার কামাল হোসেন, ডাঙ্গুয়াপাড়ার মমিনুল ইসলাম ও চ্যাংটাপাড়ার মোশারফ হোসেন হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাপারিরা ভারতীয় ব্যাপারিদের কাছে গরুর বিনিময়ে টাকা পাচার করছেন। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা গরুর ব্যাপারিদের এক লাখ টাকা পাচার করে দিলে কমিশন পান দেড় হাজার টাকা।
 
সোমবার (১৯ জুন) সাহেবের আলগা দিয়ে এক লটে এক হাজার বলদ গরু আসে। ভারতীয় ব্যাপারিরা এসব গরুর দাম নির্ধারণ করেন ৪০ হাজার টাকা। ফলে এ লটেই প্রায় ৪ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে চলে যাবে ভারতে।

তবে গরুর বিটে সরকারি নিয়মে গরুপ্রতি করিডোরে ৫০০ টাকা ও টোল বাবদ ২০০ টাকা খরচ করতে হয়। এছাড়াও গরুপ্রতি হাট মালিকের ট্যাক্স বাবদ ৩০০ টাকা, মাতব্বরি চার্জ ২০০ টাকা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নামে ৩০০ টাকা খরচ হয়।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হুন্ডির ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপারিরা ভারত থেকে গরু আনার পর টাকা পাঠাতে পারেন না। আমরা লাখে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে এটি করে দেই। আমার সঙ্গে আসামের হাজির হাটের আইয়ুব আলী ব্যাপারির লেনদেন বেশি। তবে বাংলাদেশি ব্যাপারিরা চাইলে যেকোনো ভারতীয় ব্যাপারির কাছে আমরা টাকা পৌঁছে দেই’।    
 গরু আসে বিশ্বাসে, টাকা পাচার হুন্ডিতে
গরু ও টাকা পাচারের কৌশল সম্পর্কে তিনি জানান, দু’দেশের ব্যাপারিদের মধ্যে আগেই মোবাইলে কথোপকথন হয়। এর পরে সূর্য ডোবার আগে থেকেই সীমান্তের নির্জন এলাকা দিয়ে গরু পাচারের জন্য আনা হয় কাঁটাতারের কাছে। তবে গরুর বাছুর বা ছোট গরু পারের সময় আকাশ মেঘলা বা বৃষ্টি থাকলে সেগুলো পারাপারে সুবিধা। কারণ, এ সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ক্যাম্পে চলে যায়। আর রাতের এ সময়টাতে শুরু হয় গরু পাচার।

সরেজমিনে জানা গেছে, গরু পাচারের জন্য দু'দেশের সীমান্তে ঘোরাফেরা করে একাধিক চক্র। ওপার থেকে একসঙ্গে এক লটে শত শত বড় গরু নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। লটের সব গরু হয় একই সাইজের। পরে আকার অনুসারে একই হারে দাম বেঁধে দেওয়া হয়। গরুপ্রতি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কমিশন পান তিন হাজার টাকা। তবে কোনো গরু যদি স্রোতে হারিয়ে গেলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সে গরুর দাম ধরেন না। গরুর মূল্য হিসেবে বাংলাদেশিদেরকে নগদ টাকাও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দিতে হয় না। পরে হুন্ডিতে লেন-দেন সম্পন্ন হয়।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাপারি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথমে ভারতের ব্যাপারিরা একসঙ্গে লট হিসেবে গরু ছেড়ে দেন। তারা গরুর একটি দাম বেঁধে দেন, সে দামে গরু বিক্রি করতে হয়। তাদের (ভারত) বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি না করতে পারলেও সমস্যা নেই, সবকিছু বিশ্বাসের ওপরে নির্ভর করে। বেচা-কেনার পরে আমরা গরুপ্রতি তিন হাজার টাকা কমিশন পাই’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।