ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পটলের কেজি এক টাকা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
পটলের কেজি এক টাকা! পটলের কেজি এক টাকা!

নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে পটলের মূল্য একেবারে নিম্নমুখী। প্রতি মণ পটল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে, কেজিতে যা পড়ে প্রায় এক টাকা।

বাজারে পটলের পর্যাপ্ত আমদানি হলেও চাহিদা মাফিক ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা পানির দরে বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।   আবার  কেউ কেউ  দাম কম ও বিক্রি না হওয়ায় পরিবহন খরচ এড়াতে রাস্তায় ফেলে দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

 

অন্যদিকে  বাজারদর কম হওয়ায় অনেক কৃষক জমি থেকেই পটল উত্তোলন করছেন না। ফলে জমিতে পচেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কষ্টে উৎপাদিত এসব পটল। এতে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।

গত শনিবার (১৭ জুন) সরেজমিনে নলডাঙ্গার হাটে গিয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা মণ দরে পটল বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এর দুই সপ্তাহ আগে গত ০৩ জুন দুপুর ১২টার দিকে একই হাটে গেলে বুড়িরভাগ গ্রামের কৃষক বাছের আলী জানিয়েছিলেন, মাত্র ৭০ টাকা দরে ৬ মণ পটল বিক্রি করেছেন তিনি। অথচ এর আগের হাটে একই পটল ২৩০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেন।

তেঘড়িয়া গ্রামের কৃষক নাজির হোসেন ও হাতেম আলী জানান, এ বাজার দর থাকলে কৃষকদের নির্ঘাত লোকসান গুণতে হবে। তারা বলেন, প্রতি মণ পটল হাটে আনতে পরিবহন খরচ ২০ টাকা, খাজনা বাবদ দিতে হয় আরও ২০ টাকা।   সেখানে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করলে কৃষকের উল্টো লোকসান হয়।

হলুদঘর গ্রামের কৃষক আজাহার আলী জানান, প্রতি হাটে তিনি ৫/৬ মণ করে পটল আনেন বেচতে। আগের হাটগুলোতে দাম ভালো পেয়েছেন। কিন্ত আজকের হাটে বাজার দর খুবই কম, ক্রেতাও নেই তেমন।  

তার পটল বিক্রি না হওয়ায় রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন বলে জানিয়ে এই চাষি বলেন,  ‘এগুলো ফেরত নিয়ে গেলে কোথাও বিক্রি করতে পারি না। পরিবহন খরচ করেই বা লাভ কি?’  

একই কথা জানান বাঙ্গালখলসী গ্রামের কৃষক রহিদুল ইসলাম, মমতাজ উদ্দিনসহ আরো অনেকে।

সবজি ব্যাপারি বাসুদেবপুর গ্রামের তাইজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার নলডাঙ্গার হাট থেকে পটলসহ অন্যান্য সবজি কিনে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের কাঁচা বাজারে বিক্রি করেন তিনি।

মাত্র তিনদিন আগেও এ হাটে প্রতি মণ পটল ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা দরে কেনা-বেচা হয়েছে।   তিন দিনের ব্যবধানে গত ০৩ জুন একই পটল বিক্রি হচ্ছিল মণপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তিনি প্রায় ৩০০ মণ পটল কেনেন ৮০ টাকা দরে। পটলের এ ধারাবাহিক দর পতনে কৃষকদের পাশাপাশি তারাও হতাশ।

সবজি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম, আতাব হোসেন ও রেজাউল করিম জানান, কম দামে পটল কিনেও শান্তি নেই। কারণ, ঢাকা-গাজীপুরের আড়তেও ঠিকমতো পটল বিক্রি করতে পারছেন না তারা।

তারা জানান, গত সপ্তাহে আড়তে পটল কেনার ক্রেতা না পাওয়ায় রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে এসেছেন।

ব্যবসায়ী রুস্তম ও সাইদুল ইসলাম জানান, বাজারে হরেক রকম সবজির সমাহার। পাশাপাশি রমজান মাসে মানুষের পটলের চাহিদাও অনেকটা কম। তাই কেনা-বেচায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পটলের কেজি এক টাকা!

তারপরও নলডাঙ্গার হাট থেকে প্রতি হাটে অন্তত ৮ থেকে ১০ ট্রাক পটল যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে।

কাঁচাবাজারের পাশের কীটনাশক ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা জানান, পটলের দাম কম,  বিক্রিও কম হওয়ায় অনেক কৃষক বাড়িতে ফেরত না নিয়ে রাস্তা বা নর্দমায় ফেলে রেখে গেছেন। কারণ, যে দাম, তাতে পরিবহন খরচ উঠবে না।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতিতে পড়েন পটলচাষিরা।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, উপজেলায় এবার ৬০ হেক্টর জমিতে পটলের আবাদ ও অন্য বছরের মতোই বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম কম হওয়ায় কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে প্রথমদিকে পটলের লাভজনক দাম পেয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।