কতো দেরি হবে?- উত্তরে কাউন্টার থেকে বলা হলো, ২টার এসি বাস ছাড়বে ৬টায়! জ্যামের কথা বলাতে ওই যাত্রীও আর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাগ দেখাতে পারলেন না। আর ওই সময় বিকল্প কোনো এসি সার্ভিসও ছিল না।
অবশেষে বিকেল ৫টার কিছু পরে বাস এসে স্ট্যান্ডে পৌঁছালো। এবার কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো প্রবাসী রাসেল।
এরই মধ্যে আষাঢ়ের মেঘে ছেয়ে গেছে পুরো আকাশ। খানিক্ষণের মধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি। তবে বৃষ্টির মধ্যেও নাবিল পরিবহনের স্ক্যানিয়া এসি বাসটি ঢাকার উদ্দেশে কামারপাড়া বাস স্ট্যান্ড ছাড়লো।
পুরো ৩৪ সিটের স্ক্যানিয়া বাসে যাত্রী মাত্র ৮ জন! এতো কম যাত্রী প্রসঙ্গে বাসের চালক মো. সুলেমান জানালেন, মানুষতো মনে করে ঈদ এলেই পরিবহন মালিকদের ব্যবসা খুব ভালো হয়। কিন্তু আসার সময় সব সিট ভরা থাকলেও ফিরতি পথে খালিই যেতে হয়।
এটা কেউ হিসাব করে না।
তিনি বলেন, আজকে তো ৮ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি। দু’দিন পর তাও পাবো না। কারণ সবাই আসতেছে, এখন কেউ যাচ্ছেন না।
রমজানের দিন হওয়ায় ইফতারির কিছু আগে বাস থামলো ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের শঠিবাড়ী বাজারে। সেখানেই ইফতার করতে হলো সবাইকে।
বাসের অধিকাংশ সিট ফাঁকা থাকায় কয়েকজন যাত্রীকে সুবিধামতো আসন পরিবর্তন করতেও দেখা গেল। এ সুযোগ গ্রহণ থেকে নিজেকেও বিরত রাখলাম না!
ইফতারি শেষে আবার যাত্রা শুরু। গাড়ির সুপারভাইজর জানালেন, এবার ফুড ভিলেজ গিয়ে থামবো। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মধ্যে সাবধানী গতিতে বাস চলছে। তবে মহাসড়কে খনাখন্দ এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে সময় সময় হার্ড ব্রেক করতে হচ্ছে চালককে।
এরই মধ্যে ঘণ্টা খানেকের ঘুম। রাত ১০টার দিকে সুপারভাইজর এসে জানালেন- ‘আমরা এখন বগুড়া শেরপুরের ফুড ভিলেজে। এখানে আপনারা রাতের খাবার সেরে নিতে পারেন। ’
৪০ মিনিট পরে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা। এরমধ্যে জানানো হলো- রাত তিনটার দিকে সেহেরি জন্য গাড়ি থামানো হবে।
ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ধরে বাস যমুনা সেতুর দিকে এগিয়ে চলছে। তবে স্বাভাবিক গতিতে বাস চলছে না। রাস্তার যত্রতত্র গর্ত তৈরি হওয়ায় বেশ সাবধানেই গাড়ি চালাচ্ছেন চালক সুলেমান।
বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজায় ক্রস করে ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পার হতে সময় লাগলো মাত্র ৪ মিনিট। এসময় বাসের এক যাত্রীর আশঙ্কা করে বললেন- ‘সিগন্যাল ভালো না। রাতের এ সময়টাতে সেতুর ওপর গাড়ির সিরিয়াল থাকে। আজ তো একেবারেই ফাঁকা। নিশ্চয়ই জ্যামে পড়ে আছে সব বাস-ট্রাক’।
ওই যাত্রীর আশঙ্কা যে সত্যি তার প্রমাণ পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। আমাদের বাসও মির্জাপুর এলাকায় এসে থেমে গেল। এরপর কচ্ছপ গতিতে চলতে লাগলো। দেখা গেল, রাস্তার উভয় পাশে বাস-ট্রাকের দীর্ঘসারি। মহাসড়কের এ অংশে ফোর লেনের কাজ চলছে। আর রাস্তায়ও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। মূলত এসব কারণেই মহাসড়কের এই অংশে যানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানালেন চালক।
রাত তিনটায় বাস থামলে মির্জাপুর বাইপাইল ফিলিং স্টেশনে। সেখানে শুভ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে সেহেরি শেষ করলাম। কিন্তু গলাকাটা দামের কারণে খাবারটা মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে আটকে আছে!
খাবারের মেন্যুর মধ্যে ইলিশ মাছ (ছোট সাইজ), খাসি এবং বোয়াল মাছ পিস ২০০টাকা, মুরগি এবং ছোট সাইজের চিংড়ি ১৮০ টাকা। এছাড়া রয়েছে তেলপিয়া মাছ ভাজা (ছোট সাইজ পিস ১০০ টাকা) ও ভর্তা (৩০ টাকা)। মাত্র তিনটা ছোট সাইজের (এক কেজিতে ৪০-৫০টা ধরবে এমন সাইজ) চিংড়ি মাছের দাম ১৮০ টাকা। মনে মনে ভাবলাম-ঠেকায় না পড়লে কেউ এখানে খাবে না।
সুপারভাইজরের সবাইকে দ্রুত গাড়িতে উঠতে বলেন। কারণ হিসেবে জানালেন, এখন জ্যাম একটু কম আছে, গাড়ি টানতেছে। কিন্তু বেশিদুর গাড়ি এগুলোনা। আবারও জ্যামের কবলে গাড়ি ধীর গতিতে চলতে লাগলো। এভাবে মহাসড়কের খনাখন্দ এবং জ্যাম পেরিয়ে গাড়ি এলেঙ্গা, চন্দ্রা ও কালিয়াকৈর পার হয়ে সকাল ৬টায় টেকনিক্যাল মোড়ে নামলাম।
গুগলে দেখা গেল রংপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩০২ কিলোমিটার। স্বাভাবিকভাবে এ দূরত্ব পার হতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা না। কিন্তু মহাসড়কের বেহাল দশা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এতো দুর্ভোগ।
তবে আশার কথা শোনালেন টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মাহাবুব আলম। তিনি জানান, মহাসড়কে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মঙ্গলবার (২০ জুন) থেকে মহাসড়কের প্রতি এক কিলোমিটারে পুলিশের একটা করে মোবাইল টিম থাকবে। কাজ করবে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার তিনদিন পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এসএইচ