ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গরিবের কেনাকাটায় ফুটপাতই ভরসা

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
গরিবের কেনাকাটায় ফুটপাতই ভরসা এ চিত্রই বলে দেয় কেনাকাটায় ফুটপাত গরিবের কতটুকু ভরসা

রাজশাহী: কাঠের চৌকির ওপর সারি সারি দোকান। কোথাও আবার কেবলই ছাতা। তার মধ্যেই মাথা লুকোনোর জন্য হুড়োহুড়ি। এসি বা ঝলমলে আলোকসজ্জা কিছুই নেই। এরপরও ভিড়। কারণ একটাই, সাশ্রয়ী দাম। আর তাই ঈদে গরিবের কেনাকাটার জন্য ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে ‘ফুটপাত’। 

বিলাসবহুল মার্কেটগুলোর দামের তেজে নিম্নআয়ের মানুষগুলো এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন ফুটপাতের ঈদ বাজারে। শরীরে ঠাণ্ডা বাতাসের পরশ দিয়ে বড়বড় বিপনিবিতানগুলো যখন উচ্চবিত্তদের পকেট কাটছে, তখন সড়কের পাশের ফুটপাতে গড়ে ওঠা এ চালহীন দোকানগুলো সাধ ও সাধ্যের মিশেলে গরিবের পোশাকের চাহিদা মেটাচ্ছে।

সুযোগ করে দিচ্ছে সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপনেরও।  
তাই রমজানের শেষভাগে রাজশাহীর ফুটপাতগুলোতে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাবেচা। কারণ কেনাকাটায় ধনি-গরিবের পার্থক্য থাকলেও ঈদের আনন্দ সবার কাছেই সমান। ঈদকে সামনে রেখে তারাও এখন সাধ্যানুযায়ী সন্তান ও পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক কিনতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এজন্য শেষ মুহূর্তে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরাই রয়েছেন এগিয়ে।

রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের দোকানগুলোতে সব সময়ই ক্রেতাদের ভিড় লেগে আছে। কেউ তারের ওপর, কেউ দড়ির ওপর, কেউবা প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখেছেন বাহারি রঙ আর ডিজাইনের পোশাক। এখানে ১শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মধ্যেই মিলছে শিশুদের পোশাক। বড়দের জন্য রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট। মেয়েদের জন্য রয়েছে ফ্রক, লেহেঙ্গা, ডিভাইডার টপস। হাল ফ্যাশনের বাহারি পোশাকের যেনো কোনো কমতি নেই এখানেও। তবে দাম কম।

জিরোপয়েন্ট থেকে একটু উত্তরে হাঁটলেই গণকপাড়া মোড়। মূলত সড়কটি এখন মিনি ঈদ মার্কেটে রূপ নিয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষগুলো ঘুরে ঘুরে যাচাই বাছাই করে পছন্দের পোশাকটি কিনছেন প্রিয়জনের জন্য। দেরিতে হলেও রমজানের শেষ প্রান্তে এসে ক্রেতাদের ভিড়ে হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখে।  

ফুটপাতে দোকান সাজিয়ে বসা মনোয়ার হোসেন জানালেন, দু’দিন আগেও বেচাকেনা কম ছিল। ক্রেতারা আসলেও দরদাম করে ছুটেছেন নামিদামি বিপনিবিতানগুলোতে। কিন্তু পোশাকের দাম শুনে পরে আবার এখান থেকেই বাজার সেরেছেন। তাদের চেয়ে আর কেউ এত কম দামে পোশাক বিক্রি করতে পারবেন না। ঢাকার বঙ্গবাজার থেকে পাইকারি দামে পোশাক কিনে নিয়ে এসে তারা এখানে খুবই কম দামে বিক্রি করছেন। তাদের ৪শ’ টাকার পোশাক দোকানের হ্যাঙ্গারে ঝোলালেই ৪ হাজার টাকা হয়ে যাচ্ছে। যারা বোঝেন না তারা সেখানে গিয়ে ধরা খাচ্ছেন বলেও দাবি করেন ফুটপাতের এ ব্যবসায়ী।
  
শফিকুল নামের অপর ব্যবসায়ী বলেন, চাঁদ রাত পর্যন্ত তাদের এ ব্যস্ততা চলবে। মূলত ঈদের আগের দিন তাদের জন্য ঈদ। কারণ ওইদিন নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরাও পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে কম দামে টি-শার্ট, থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট, বাড়ির কাজের মেয়েদের জন্য কেনাকাটা করতে ফুটপাতের এসে ভিড় জমান বলে অতীত অভিজ্ঞতার কথা বিনিময় করেন তিনি।  

শফিকুল বলেন, তারাও ‘এক্সক্লুসিভ’ পোশাক তুলেছেন। তার দোকানে ২শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যেই মিলছে এসব পোশাক। তবে তাদের দোকানে দাম কম থাকলেও ক্রেতারা দরদাম করেন। তারা আরও দাম কমাতে চান। আর বড় দোকানে যা বলে সেই দাম দিয়েই নিয়ে যেতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেখানে দর কষাকষির সুযোগ নেই। আলাপকালে আক্ষেপের এমন কথাও জানান শফিকুল।  

তবে ফুটপাতে পোশাক কিনতে আসা মুস্তারি বেগম নামের এক গৃহিণী বলেন, এবার ফুটপাতেও দাম বেশি। গতবার তার ছেলের জন্য যেই সেট (হাফপ্যান্ট ও জামা) ৫শ’ টাকায় কিনেছিলেন এবার তার দাম চাওয়া হচ্ছে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। অনেক দরদাম করার পর মাত্র ১শ’ টাকা কমিয়েছে।  

একই অভিযোগ অপর গৃহিণী মার্জিনা পারভিনেরও। তিনি বলেন, সাধারণত শিশুদের পোশাকের জন্য ফুটপাতের দোকানগুলোর কোনো জুড়ি নেই। তবে এবার দামটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তাই গতবার যেখানে তার সন্তানদের জন্য দুই সেট, তিন সেট করে পোশাক কিনেছিলেন এবার সেখানে এক সেট কিনছেন। দাম আরও একটু কম হলে ভালো হতো বলে জানান এ গৃহিণী।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad