কিন্তু নাছোড়বান্দা সুপারভাইজার রঞ্জু মিয়া (ঢাকা মেট্রো ব ১২-০৩৪৯)। বললেন, ওঠার সময় আওয়াজ দিলাম যে! আপনি উঠলেন কেনো, না পোষালে নেমে যান।
মগবাজার থেকে উঠেছিলেন আলতাফ হোসেন। বাসটি তখন তেজগাঁও সাতরাস্তার কাছাকাছি। আলতাফ হোসেন নেমে যেতে চাইলেন, কিন্তু নতুন বিপত্তি দেখা দিল। মগবাজার-তেজগাঁওয়ের ভাড়া নিয়ে। রঞ্জু মিয়া বললেন, আমাদের বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। আপনাকে নেমে যেতে হলে ২০ টাকা দিয়ে যেতে হবে।
ভাড়ার তালিকা দেখতে চাইলেন ওই যাত্রী। কিন্তু বাসের সুপারভাইজার বললেন, চার্ট অনুযায়ী ভাড়া দিতে পারবেন না, অনেক বেশি আছে চার্টে। আমরা কম ভাড়া নিচ্ছি। আলতাফ হোসেন চার্ট দেখতে চাইলেন। বললেন, আমি চার্ট অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাই। সুপারভাইজারের জবাব, গাড়িতে চার্ট নেই। চলেন গাজীপুর আপনাকে চার্ট দেখাব।
বাইরে বৃষ্টি আবার নেমে গেলেও বিশ টাকা। উভয় সংকট থেকে রক্ষা পেতে ত্রিশ টাকা দিতে বাধ্য হলেন আলতাফ হোসেন। টাকা দিয়ে বিড়বিড় করতে থাকলেন, কোন দেশে আছি, কোনো নিয়ম কানুন নেই। গতকাল এই একই পরিবহনের বাসে গেলাম। তখন ২৫ টাকা আর একদিনের ব্যবধানে আরেক বাসে ত্রিশ টাকা। মগের মুল্লুক নাকি?
অন্যান্য যাত্রীরাও নানা অভিযোগ তুললেন গাজীপুর পরিবহন লিমিটেডের বাসগুলোর বিরুদ্ধে। সিটিং নামে চলা এই পরিবহনের বাসগুলো একেকটিতে একেক রকম ভাড়া। আর এই ভাড়া আদায়ের কৌশলটাও বিচিত্র।
কোনো তালিকা কিংবা নিয়ম নেই। যাত্রী যখন উঠতে যান, তখন প্রথমে প্রশ্ন করা হয় কোথায় যেতে চান, সঙ্গে ছোট্ট করে বলা হয়, ভাড়া কিন্তু…। বাস পাওয়া যখন ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন আর এই নিয়ে বাদানুবাদ করার সময়, সুযোগ কোনটাই থাকে না। বাধ্য হয়ে যা বলছে সেই ভাড়াই দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।
শুধু গাজীপুর পরিবহন নয়, প্রায় সব সিটিং বাসেই এমন অভিনব নিয়ম চালু হয়েছে। যাত্রী ওঠার সময় তাদের খুশি মতো ভাড়া হাঁকাচ্ছে।
কথা হয় সুপারভাইজার রঞ্জুর মিয়ার সঙ্গে। তার কাছে প্রশ্ন ছিল কীসের ভিত্তিতে আপনারা ভাড়া আদায় করছেন? জবাবে বললেন, আমাকে প্রশ্ন করে কোনো লাভ হবে না। আপনি লাইনম্যানকে বলেন। তারা আমাদের যেভাবে বলেছে। সেই ভাবে ভাড়া আদায় করছি। আমাকে টার্গেট দেওয়া হয়েছে।
লাইনম্যানকে বনানীতে পাওয়া যাবে বলে জানালেন। ওই বাসেই ওঠে বনানীতে গেলে চেকিং করতে উঠলেন লাইনম্যান কামরুল ইসলাম। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, কিলোমিটার প্রতি কত ভাড়া আদায় করা হয়, প্রথমে বললেন, পঁচাত্তর পয়সা। একটু পরে আবার বললেন, না তিন কিলোমিটার ৫ টাকা।
তাহলে মগবাজার থেকে শেওড়া সাড়ে ১১ কিলোমিটার কী করে ৩০ টাকা হয়? বললেন, বাসটি মতিঝিল থেকে গাজীপুর শিমুলতলী পর্যন্ত যাতায়াত করে। যাত্রাপথে মহাখালী, বনানী, এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর চারটি স্টপেজ। মতিঝিল-মহাখালী ২০ টাকা, এয়ারপোর্ট গেলে চল্লিশ টাকা। শেওড়া নামলে ত্রিশ টাকা।
তাহলে তো কিলোমিটারের হিসাবে ভাড়া হলো না। সাফ জবাব দিলেন, এটা আমাকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পাবেন না। এটা মালিকরা নির্ধারণ করে।
জানা যায়, ৬ জন মালিকের কনসোর্টিয়ামের অধীনে গাজীপুর পরিবহন লিমিটেডের মোট ৫০টি বাস চলাচল করে রাস্তায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
এসআই/এমজেএফ