ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ধরলা গিলে খাচ্ছে বসত বাড়ি ও ফসলি জমি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৪ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
ধরলা গিলে খাচ্ছে বসত বাড়ি ও ফসলি জমি ছবি: ব‍াংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ভাঙতে শুরু করেছে ধরলার ডান তীর। উপজেলার মোঘলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর ব্যাপারিটারী ও ইটাপোতা গ্রামে দু’দিনে ১০টি বসত বাড়িসহ বেশ কিছু ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

রোববার (১৮ জুন) বিকেলে সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা বাংলানিউজকে জানান, এক সপ্তাহ ধরে হিংস্র আকার ধারণ করেছে ধরলা নদী। বর্ষা না নামতেই নদীর এমন হিংস্রতায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী জনপদ।

দিনে শান্ত থাকলেও রাতে হিংস্রতা বৃদ্ধি পায় ধরলার। তাই নির্ঘুম রাত যাপন করছে নদী পাড়ের মানুষ। দু’দিনে ব্যাপারিটারী গ্রামের নসরুদ্দিন, আবদার আলী, রুস্তম আলী, সাইদুল ইসলামের বসত বাড়িসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বিলিন হয়েছে ইটাপো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কিছু অংশও।

ভাঙনের মুখে পড়েছে ব্যাপারিটারী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বসত বাড়ি। বর্ষা আসার আগে ভাঙন রোধ করা না গেলে ইটাপোতা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, শীবেরকুটি বাজার, বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্প, মোঘলহাট বাজার, মোঘলহাট রেলস্টেশন, লালমনিরহাট মোঘলহাট সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয়রা।

জরুরিভাবে সিসি ব্লক তৈরি করে ভাঙন রোধ করতে পাউবো আপদকালীন সময়ের জন্য একটি প্রকল্প চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। যা পরিকল্পনা বিভাগে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে পাউবোর দায়িত্বশীল একটি সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।  

নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কেউ কেউ রাস্তার পাশে মালামাল রাখছেন। আবার কেউ অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে তুলছেন বাড়ি। সব মিলে কান্নার রোল পড়েছে ধরলা পাড়ের মানুষের।

ঘরবাড়ি সরিয়ে রাস্তার পাশে আশ্রয় নেয়া আবদার আলী বাংলানিউজকে জানান, ধরলার কড়াল গ্রাসে পাঁচবার বসত বাড়ি সরাতে হয়েছে। গত বছর ভাঙনের কবলে পড়ে ভাড়ায় নেয়া চার শতাংশ জমিতে ঘর করে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনমজুরি করে সংসার চালিয়েছেন। তার সে বসত বাড়িও গত রাতে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
 
মোঘলহাট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বর্ষা না আসতে এমন ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ধরলার তীরবর্তী মানুষ। কয়েক দিনে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ইটাপোতা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পাউবোসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
 
লালমনিরহাট পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে জানান, ব্যাপারিটারী এলাকায় চলতি অর্থবছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় লাখ সিসি ব্লক দিয়ে আধা কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ওই বাঁধের প্রায় সাড়ে ৪শ’ মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধকল্পে এরই মধ্যে আপদকালীন সময়ের একটি প্রকল্প চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ এলেই দ্রুত কাজ করা হবে।      

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
বিএসকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।