ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আগামী নির্বাচনে খুশি মনে মানুষ নৌকায় উঠবে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
আগামী নির্বাচনে খুশি মনে মানুষ নৌকায় উঠবে না

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। জলজট থেকে মানুষকে রক্ষা করতে না পারলে আগামীতে মানুষ খুশি মনে নৌকায় উঠবে না।

এ মন্তব্য বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা’র।
 
রোববার (১৮ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।


 
বাবলা বলেন, গত ১১ থেকে ১৪ জুন বৃষ্টিপাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ডুবে গিয়েছিল। বাজেটে উন্নয়নের মহসড়কের কথা বলা হয়েছে। আমরাও বিশ্বাস করি দেশে উন্নয়নের গতি আছে। তবে আমার জানতে খুব ইচ্ছা করে, বছরের পর বছর কেনো ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে পারছি না। চট্টগ্রামের মানুষ নৌকার করে যাত্রা করছে। অনেকে উপহাস করে বলছেন তারা যেহেতু নৌকায় ভোট দিয়েছেন, তাই সরকার নাকি তাদের নৌকায় চড়াচ্ছেন। তাই জলজটের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়লেও তারা মুখ বুজে সব সহ্য করছেন। চট্টগ্রামবাসীর যে বোবা কান্না দেখলাম, তাতে মনে হয় আগামীতে তারা খুশি মনে আর নৌকায় উঠবে না।
 
নিজ নির্বাচনী এলাকার জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে বলেন, ডিএনডি বাঁধের ২২ লাখ মানুষকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই সংসদে কথা বলেছি, সভা, সমাবেশ করেছি। টানা তিন বছর মন্ত্রীর দফতরে দফতরে ঘুরেছি। শুধু আমি নয়, নারায়নগঞ্জ-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের এমপিও। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ৫৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও অর্থ ছাড় করা হয়নি। তাই কাজও শুরু করা হয়নি। ফলে এবারও বর্ষা মৌসুমের আগে দুই দিনের বৃষ্টিতে আমার নির্বাচনী এলাকার কদমতলী থানার অধিকাংশ এলাকা এখনও পানির নিচে রয়েছে।
 
তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমার এলাকার মানুষকে জলজট থেকে রক্ষা করতে পানিসম্পদ মন্ত্রীকে বলে চারটি খাল সংস্কারের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ এনেছি। কাজ শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমি এলাকার মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। আমাকে তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। বৃষ্টি হলেই আমি প্রস্তুত হয়ে যাই কদমতলী বাসীর কটু কথা শোনার জন্য। কিন্তু আমি কি করবো? আমার কি করার আছে। আমার এলাকার মানুষকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমি এই দফতর থেকে ওই দফতরে দৌড়াচ্ছি। একবার ওয়াসা,  একবার সিটি কর্পোরেশন, একবার পাউবো। সব দফতরে গিয়ে আমার একটাই তদবির একটাই আবেদন, আমার কদমতলী বাসীকে বাঁচান। তারা সহ্য করতে পারছে না। খুব কষ্টে আছে। এই রমজানে অনেকে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারছেন না। জলজট কদমতলী বাসীর জীবনে বড় অভিশাপ। শুধু ডিএনডি এলাকা নয়, চট্টগ্রামের মত সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট। এতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রতি বছর এ কাজে বিপুল অর্থ খরচ করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুম শুরু আগেই একদিনের বৃষ্টিতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়ে ঢাকাবাসী।
 
তিনি আরো বলেন, ঢাকা ওয়াসা বছরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ করেছে। আর ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনে বিগত ৫ বছরে পানি নিষ্কাশনে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। এরবাইরেও ড্রেনেজ উন্নয়নে ব্যাপক কাজ চলছে। তারপরেও সড়কে জমছে হাঁটু থেকে কোমর পানি। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে চট্টগ্রামবাসীর মতো ঢাকাবাসীও আগামীতে নৌকায় উঠার ব্যাপারে শতবার চিন্তা করবে।
 
বাজেটে সংবাদপত্রের কাঁচামালের ওপর ভ্যাট আরোপ করায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেটে গাধা, খচ্চর, শুকর, ছাগলের ওপর ভ্যাট অবহ্যতি দেওয়া হলেও এনবিআর এর খড়কে সংবাদপত্র শিল্প ধ্বংসের কবলে। কাগাজ আমদানি, ছাপার প্রেস, কালিসহ সংবাদপত্র শিল্পের অপরিহার্য বিভিন্ন পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কারণে হুমকিতে পড়েছে এ শিল্প। এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে এ শিল্পে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা ছাঁটাই কবলে পড়বেন। বাংলাদেশে যেভাবে সংবাদপত্র শিল্পের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তার নজির দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও নেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এসএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।