গেটের নিচের অংশের আট ইঞ্চির মতো ফাঁকা। তাতে লোহার গরাদ।
চোখ জোড়ায় স্থির দৃষ্টি। সে দৃষ্টি প্রখর। চোখে-মুখে দৃঢ়তা। সড়কে গাড়ির সারি ছাড়া অন্যকিছু ছিলো না তখন। কী দেখেছিলো শিশুটি! সে কি আসলেই কিছু দেখছিলো, নাকি দেখছিলো আর ভাবছিলো তার অসহায় বন্দি শৈশবের কথা!
পাশের পকেট গেট সামান্য খুলে বাইরে দেখার চেষ্টা করছে আরেক শিশু। বয়সে সে ৫-৬ বছরের হবে। পকেট গেটে সামান্য খুলেও বের হওয়ার সাহস পেলো না মনে হলো। হয়তো বাইরে পা মাড়ানো মানা। মানাই তো থাকবে, শহরে বিপদেরও তো শেষ নেই।
অনেক জেলা শহরের চেয়ে জমজমাট উপজেলা শহর শ্রীমঙ্গল। সড়কগুলোও বেশ ব্যস্ত থাকে সবসময়। টুপি পরা বড় শিশুটিও ছোটটিকে অনুসরণ করলো। ভেতরে থেকেই বাইরের সব দেখতে শুরু করলো গেটের মাঝের ফাঁক গলে।
দু’জনেরই বয়স হেসে খেলে বেড়ানোর, মন খুলে যা কিছু নতুন, যা কিছু বিস্ময় তাদের কাছে সব দেখার, স্বাদ নেওয়ার বয়স। অথচ লোহার দরাজের ঘেরাটোপে বাঁধা তাদের জীবন।
টানা কয়েকটি ক্লিক করার পরও নাম না জানা ছোট শিশুটির কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। গম্ভীর ভাবের সুন্দর মুখখানায় বিস্ময় অন্তহীন। তার গভীরে ঢোকা দায়।
এদের শৈশবের গল্পে না থাকবে বর্ষার কাদাপানিতে দাপিয়ে বেড়ানো, না থাকবে সত্যজিৎ রায়ের বিস্ময় চরিত্র অপুর জিজ্ঞাসু মনস্তত্ত্ব, মাকে লুকিয়ে দিদি দুর্গার সঙ্গে রেলগাড়ি দেখতে কাঁশবন ঠেলে ছুটে চলা, বৃষ্টিতে ভিজে মায়ের বকুনি খাওয়া, সুপারিপাতার টানা গাড়িতে চলে প্যান্ট ছেঁড়া, বাতাবি লেবুকে বল বানিয়ে ফুটবল ক্রিকেট খেলা কিংবা পলাপলি, ঝুমুর, গাদন, ঘুরচণ্ডী, গোল্লাছুট খেলা।
ইট-পাথরের ঢাকার মতো জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেও এই শিশুদের জীবনটা যেন আটকে গেছে আট ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চির লোহার গরাদের ফাঁকে। বিস্ময় চোখ সেখানে অনেক কিছু দেখে, কিন্তু ছুঁতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এএ/এইচএ