রমজানের শুরু থেকেই প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে এ কাজটি করছে। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসায় ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা দোকান বসাচ্ছেন খুব হিসেব নিকেষ কষে।
বিকেল থেকেই জিরো পয়েন্ট বাদে আশপাশ দিয়ে আসর বসান এসব দোকানি। বেচাবিক্রি করেন অনেক রাত পর্যন্ত। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ কাপড় ব্যবসায়ীরা। ভ্যানের ওপর দোকান বসিয়েই ব্যবসা করেন এরা।
শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা সংলগ্ন পার্করোড ও নবাববাড়ি রোডে একাধিক ভ্যানগাড়িকে মূল সড়কের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। ঘড়ির কাঁটা যতই সামনের দিকে এগোচ্ছিল, একে একে ভ্যান এসে লাইনে যোগ হচ্ছিল।
সাধারণ ভ্যানের চেয়ে এসব ভ্যান আকারে কিছুটা বড়। যতটুকু পারা যায় পণ্য সাজিয়ে রাখা হয়। তবে বেশির ভাগ পোশাক এলোমেলো ভাবেই থাকে। ক্রেতারা আসেন।
এলোমেলোভাবে রাখা কাপড়ের ভেতর থেকে টেনে টেনে পছন্দের পোশাকটি বের করেন। এরপর দরদাম শুরু করেন।
ঠিক তখনই বিক্রেতা ক্রেতার মুখ আটকে দেন। আদবের সঙ্গে ক্রেতাকে বলেন, স্যার, ম্যাডাম বা ভাই এখানে দামদর চলে না। এগুলো স্বল্প দামের পোশাক। সস্তায় বিক্রি করা হয়। দরদাম ছাড়াই আপনে পছন্দের পোশাক নিতে পারেন। গেঞ্জি মাত্র ১০০ টাকা ও টি-শার্ট ১৫০ টাকা।
ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা শহরের শেরপুর রোড, পার্করোড, কাঁঠালতলা, জলেশ্বরীতলা, নবাববাড়ী রোড়, মাটিডালী, চারমাথাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রি করেন। বছরের বারো মাস এ ব্যবসা হলেও ঈদে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে শহরে যানজট নিরসনে পুলিশ প্রশাসনের কঠোরতায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় এসব ব্যবসায়ী ভ্যান নিয়ে ঠাঁই গেড়ে বসতে পারছেন না। তাই বলে তাদের ব্যবসা কিন্তু থেমে নেই।
যে যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন সেখানে ভ্যান দাঁড় করিয়ে বিকিকিনি করছেন। অবশ্য অনেক সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সাপ-লুডু খেলতে হয়। পুলিশ দেখলেই ঝামেলা এড়াতে দ্রুত ভ্যান সরিয়ে অন্যত্র চলে যান তারা।
শাওন, হামিদুল, বাবলু, বিদ্যুৎসহ বেশ কয়েকজন দোকানি বাংলানিউজকে জানান, তাদের স্বল্প পূঁজি। তাই চাইলেই সবকিছু করা যায় না। অভিজ্ঞতা থাকলেও বড় ব্যবসা করার সুযোগ নাই। স্থায়ী কোনো ঠিক-ঠিকানাও নেই। কিন্তু বেঁচে তো থাকতে হবে। এজন্য কিছু করা ছাড়া সামনে কোনো বিকল্প নাই।
তারা আরো জানান, ভ্যানের ওপর বাহারি ডিজাইনের পোশাক উঠিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করেন। এসব পোশাক ঢাকার বিভিন্ন কমদামের মার্কেট বা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনে আনেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গেঞ্জি, টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট অন্যতম। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য ভাল ভাল পোশাক রয়েছে তাদের দোকানে।
প্রতি পিস গেঞ্জি ১০০টাকা, টি-শার্ট ১৫০টাকা ও প্যান্ট ৪০০-৪৫০টাকায় বিক্রি করা হয়। তাদের দোকানে দরদামের কোনো সুযোগ নেই। দাম বলেই তারা ক্রেতাদের ডাকেন। ক্রেতা সাধারণের দায়িত্ব পছন্দ করা। আর পছন্দ হলে নির্ধারিত দাম দিয়ে পোশাক নিয়ে যাবেন তিনি।
এসব পোশাকের সিংহভাগ ক্রেতা নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ। কিন্তু প্রতিবছর ঈদে চিত্রটা অনেক পাল্টে যায়। ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানে অনেক মধ্য ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষজনও এসব পোশাক কিনতে আসেন বলে জানান দোকানিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম