স্বপ্নের বিসিএস ক্যাডারের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে চাকরিতে যোগ দিয়ে হিসাব রক্ষণ (এজি) অফিসের ঘুষ ও হয়রানির শিকার হয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ৩৫তম বিসিএস ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা।
চাকরি জীবনের প্রথম বেতন তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে ৩৫তম বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের, যারা পেয়েছেন অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে হাতে এসেছে প্রথম মাসের বেতন।
৩৫তম বিসিএসের উত্তীর্ণ হয়ে গত ২ মে কর্মস্থলে যোগ দেন প্রায় দুই হাজারের মত কর্মকর্তা। নিয়মানুয়ায়ী ফিক্সেশনের কাজ শেষে পরের মাসের ১/২ তারিখের মধ্যে বেতন হওয়ার কথা।
কিন্তু চাকরির দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এজি অফিসে ঘুষ না দেওয়ায় অনেকেই ফিক্সেশনের কাজ শেষ করতে না পেরে বেতন তুলতে পারেননি। প্রথম মাসের বেতন, তাই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা!
হয়রানির শিকার একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হয়রানি হতে হচ্ছে। কেউ কেউ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহায়তায় বেতন তুললেও বাকিরা বঞ্চনার শিকার। ঈদকে সামনে রেখে হতাশা ভর করছে মেধাবী এই চাকরিজীবীদের।
অনেকেই ঘুষ দিয়ে ‘ম্যানেজ করে’ বেতন তুলতে পারলেও অধিকাংশই তুলতে পারেননি। তারা একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্বারস্থ হচ্ছেন।
এই কর্মকর্তারা ফেসবুকে তাদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপে ঘুষ লেনদেনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। তারা বলছেন, জীবনের প্রথম বেতনের সুযোগে ঘুষ নিচ্ছে এজি অফিসের কর্মচারীরা।
গাজীপুর সদর উপজেলায় যোগ দিয়েছেন এমন একজন কর্মকর্তা লিখেছেন, তাদের দুজনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে দাবি করা হয়। প্রথমে ৫০০ টাকা করে দিলেও পরে আরও ৫০০ টাকা দাবি করে এজি অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এক সপ্তাহ পরে খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের ফাইলে হাত পড়েনি। বাকি টাকা পরিশোধের পর ফিক্সেশন প্রস্তুত ও বেতন হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার এজি অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে একজন লিখেছেন, নাম এন্ট্রি করার সময় মিষ্টিমুখ করাতে বলেছে। টাকা ছাড়া নাম এন্ট্রি করেনি। বেতন-বিল করার সময় নেট নাই, বিদ্যুৎ থাকে না, হাতে অনেক কাজ, পরে করব ইত্যাদি বলে অযথা সময় নষ্ট করছে। মে মাসের বেতন পেলাম ১৩ তারিখে!
সাতক্ষীরা সদর এজি অফিস টাকা নিয়ে দুই সহকর্মীর বেতনের কাজ করে দিয়েছেন জানিয়ে একজন লিখেছেন, এজি অফিসের যে টেবিলে গিয়েছেন টাকা ছাড়া কেউ কথা বলে না। আমি কী করব তাও বুঝতে পারছি না?
শেরপুর সদর উপজেলা এজি অফিসের বিরুদ্ধে একজন লিখেছেন, তার অফিস সহকারীর কাছে এক হাজার টাকা নিয়ে কাজ বেতনের করেছে। পরে তিনি সেই টাকা অফিস সহকারীকে দিয়েছেন।
রাঙামাটির কাপ্তাই এজি অফিসের অভিযোগ নিয়ে একজন বেলেন, তার পিয়নের কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করে। পরে এক হাজার টাকায় কাজ হয়েছে।
নোয়াখালী সদর এজি অফিস নিয়ে একজন অভিযোগ করে লিখেছেন, বেতন-বোনাস ঈদের পর: অফিস সহকারীকে নোয়াখালী সদর এজি অফিস! আমি নাকি বিসিএস ক্যাডার অফিসার। খুব খারাপ লাগা কাজ করা শুরু করেছে। তারপরেও এক পয়সা দিব না, আমি ভাঙব কিন্তু মচকাবো না! যারা বেতন-বোনাস নিয়ে বাড়ি যাবেন অনুভূতি শেয়ার করবেন।
তিনি লিখেছেন, যাদের বেতন হয়নি তাদের একটি স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য বলেছে দুদক চেয়ারম্যান। সে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
নানা কাঠ-খড় পুড়িয়ে একজন লিখেছেন, অবশেষে সফল হলাম। খাদ্য, সংস্কৃতি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহাহিসাব নিরীক্ষকের কাছে ফোনে কথা বলে অমানবিকতার বিষয়টি তার নজরে এনেছেন। তিনি তার দফতর থেকে প্রতি জেলার এজি অফিসে ফোন দিয়ে ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, এ সপ্তাহের মধ্যে বেতন না হলে তার ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছেন। ২২ জুনের আগে বেতন-বোনাস না হলে তোলপাড় করে দিবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ