যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, ঈদ কাদের জন্য? তাহলে একবাক্যে সবাই বলে উঠবেন ‘শিশুদের’। কারণ ঈদের আনন্দ প্রধাণত এই সোনামনিদের ঘিরেই।
ঈদে সবার আগেই কেনা প্রয়োজন শিশুর পোশাক। ছোট্ট সোনামনিদের খুশি পরিবারকে পরিপূর্ণ করে তোলে। সত্যিকার অর্থে ঈদ আনন্দ হয়ে ওঠে সার্থক। মূলত তাদের পদচারণার মধ্যে দিয়েই বিকিকিনি শুরু হয় ব্যবসায়ীদের। মধ্য রমজান পোরুতে তাই রাজশাহীর বাজারে শুরু হয়েছে শিশুদের আনাগোনা। বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুরা এখন মার্কেটের বিপণী বিতানগুলোতে ভিড় করছে। তাদের কলকালিতে মুখরিত হয়ে উঠছে চারদিক। কেনাকাটাও চলছে হরদম।
শিশুদের আনন্দের কথা মাথায় রেখেই ঈদ উপলক্ষে রাজশাহীর শপিং সেন্টারগুলো এবারও সেজেছে রঙিন সাজে। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতেও রয়েছে বাহারি আয়োজন। এসব পোশাকে ডিজাইন ও কাটছাঁটের পাশাপাশি নামেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। এবার প্রচ- গরম আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে কাটছে রমজান মাসের দিনগুলো। সামনে একই অবহাওয়ায় আসছে ঈদও। তাই আরামদায়ক পোশাক হিসেবে হাতাসহ ও হাতা কাটা দুই ধরনের পোশাকই এসেছে রাজশাহীর বাজারে।
মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এবার বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে শিশুদের পোশাকেরও দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আর রাজশাহীর নিউমার্কেট, সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেট, জামাল সুপার মার্কেটসহ নিউমার্কেট থেকে সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট সড়ক পর্যন্ত গড়ে ওঠা মার্কেট ও শপিং সেন্টারগুলোর প্রতিটি দোকানেই বেড়েছে শিশুদের ভিড়।
বেতন-বোনাসের অপেক্ষায় থাকা অভিভাবকরা নিজেদের জন্য এখনও কেনাকাটা শুরু করেননি। বর্তমানে শিশুদের জন্যই কেনাকাটা করছেন প্রায় সবাই। শিশুদের ঈদের পোশাকে সুতির সঙ্গে সিল্ক, অ্যান্ডি সুতি, তসরের পোশাক তৈরি করা হয়েছে এবার। চোখ ধাঁধানো রঙিন সুতা দিয়ে হাতের কাজ এবং এমব্রয়ডারির কাজও রয়েছে পোশাকগুলোতে।
মেয়েশিশুদের পোশাকের মধ্যে আনারকলি জামা ও লেহেঙ্গা সবচেয়ে বেশি। নতুন রূপে ফিরেছে বাজিরাও মাস্তানওি। গরমের জন্য সুতি কাপড়েও এসেছে ভিন্নতা। সুতির জামাগুলোতে লেস, ফিতা, কারচুপি ও স্টোনের কাজ করে বেশ জমকালোভাবে তৈরি করা হয়েছে বাহারি ডিজাইনের পোশাক। তাছাড়া নিয়মিত ফ্রক ও স্কার্ট তো রয়েছেই। আর জিন্স প্যান্ট, নরমাল প্যান্ট, থ্রি-কোয়ার্টার সেট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, গেঞ্জি, শার্ট ইত্যাদি রয়েছে ছেলেশিশুদের জন্য।
এছাড়াও মেয়েশিশুদের পোশাকের মধ্যে রয়ছেে ক্রাফট টপ, ফ্লোর টাচ, কিরণ মালা, ময়ুরপঙ্খি। ছেলে শিশুদের কোটি সেট, মোদি সেট, পটল কুমার, রাজাবাবু, খোকাবাবু, পিকে প্যান্ট ধুমসে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মার্কেটের শোরুমগুলোতে।
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এসব অভিজাত দোকানে শিশুদের পোশাকের মূল্য সর্বনিম্ন ৫শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। মধ্যমসারীর দোকানেও ৩শ’ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে শিশুদের পোশাক। বিপণীবিতান ছাড়িয়ে রাস্তার ফুটপাতের দোকানে নামলে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের জন্য সর্বনি¤œ ২শ’ টাকা মূল্য থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২শ’ টাকার মধ্যে কেনাকাটা করা যাচ্ছে। মূলত ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ীই মিলছে পোশাক।
মহানগরীর ড্যাশ কালেকশনে গিয়ে দেখা যায়, এখানে শিশুদের ফ্রকের দাম ২শ’ ৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, টু-পিস এবং থ্রি-পিসের দাম ৮শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা, শার্টের দাম ২শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা, পাঞ্জাবি ৬শ’ থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকা, হাফপ্যান্ট ও ফুলপ্যান্ট ৩শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।
সেলসম্যান সাখাওয়াত হোসেন জানান, শিশুদের পোশাকে ভিন্নতা আনতে স্প্রে, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট এগুলো মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার হয়েছে এবার। এছাড়া রয়েছে এপলিক, অ্যামব্রয়ডারি, কারচুপি, আড়ি, লেস, কাতান ও হাতের ভরাট কাজ। শিশুদের নজর কাড়তে তাদের জামা-প্যান্টে প্রজাপতি, কার্টুন, নানা রঙের বাতি ও হালের ক্রেজ মটু-পাতলু ও ডোরেমন কার্টুন সিরিজের জনপ্রিয় চরিত্রের নকশা, এমনকি তারকা ক্রিকেটার, ফুটবলারের ছবিও ছাপা হয়েছে।
রাজশাহীর সপুরা সিল্কের ম্যানেজার সাইদুর রহমান জানান, এবার ঈদে তারা শিশুদের জন্য আবহাওয়া উপযোগী পোশাকের সমাহার ঘটিয়েছেন। পোশাকগুলোর নকশায় ও বুননেও এবার ভিন্নতা এসেছে। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাদের শোরুমে শিশুদের জন্য রকমারি ডিজাইনের আকর্ষণীয় পোশাক রয়েছে। এসব পোশাকে বৈচিত্রময় বিভিন্ন কাজ থাকায় শিশুরাও পছন্দ করছে। বেচা-কেনাও হচ্ছে ভালো। বেতন-বোনাস হলে ব্যবসা পুরোদমে জমে উঠবে বলেই তার প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময় : ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এসএস/জডেএম