ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সবুজ কমলায় রঙিন স্বপ্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
সবুজ কমলায় রঙিন স্বপ্ন সবুজ কমলায় রঙিন স্বপ্ন

বড়লেখা, মৌলভীবাজার: ফুল থেকে সবে গুটি বেঁধেছে। লকলকে গাছে গাঢ় সবুজ কমলা। ঠিক ছোট সবুজ বরইয়ের মতো। পাতার ফাঁকে ফাঁকে সবুজ গুটি। গান্ধী পোকায় কিছুটা ছেদ টেনেছে এবার। তাই ফলন কম তুলনামূলক। তবে হতাশ নন বাগান মালিক ফারুক। এতেই রঙিন স্বপ্ন বুনছেন তিনি।

সিলেটের কমলা স্বাদে মানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিন দিন। এই কমলার বড় একটি অংশের উৎপাদন হয় মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা জুড়ীতে।

আসাম সীমান্ত ঘেঁষে পশ্চিম জুড়ীর টিলাঞ্চলে ভালো কমলা উৎপাদন হয়।

থেমে নেই পাশের উপজেলা বড়লেখাও। উপজেলার পাখিয়ালী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বের গ্রাম ডিমাই। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ গ্রামটি। ৮শ থেকে ১ হাজার ফুট উচ্চতার টিলাগুলোতে জুমচাষ হয়। গোটা সিলেটের মতো এই গ্রামও ঘুমায় সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত। অন্য কাজে গিয়ে তাই ফাঁকা পাওয়া গেলো ডিমাই বাজার। সিএনজি অটোরিকশা চালকের কাছে জানা গেলো এখানে দেখার মতো আছে একটি ঝরনা। বাজার থেকে হাঁটতে হবে এক কিলোমিটারের কিছু বেশি পথ।
সবুজ কমলায় রঙিন স্বপ্ননতুন একটি ঝরনা দেখার লোভে। সকাল ৯টার রোদও সহ্য করা যাচ্ছিলো না প্রচণ্ড তাপে। একটু হাঁটতে গলদঘর্ম। কয়েকজনের কাছে শুনলেই বলেন সামনে। এভাবে দেখা এক জুমচাষির সঙ্গে। বললেন চলেন সঙ্গে। তার কাছেই জানা তার জুমক্ষেত আছে। কি কি চাষ হয় জিজ্ঞেস করতেই জানালেন কমলার কথা।

পরে ঝরনা বাদ দিয়ে বললাম আপনার সঙ্গেই যাবো। সেই হাঁটা শুরু। উঁচু নিচু পাহড়ি পথ বেয়ে নিয়ে উঠলেন এক টিলায়। সেখানে টং ঘরে পিঠের কীটনাশক, খাবার-দাবার রেখে নিয়ে গেলেন চূড়ায়। বাগানে দিনমজুর কাজ করছিলো আগাছা পরিষ্কারের। বর্ষায় পাহাড়ি লতা বড্ড দ্রুত বাড়ে। জুম ক্ষেতে পান, লেবু, কলা, সুপারির পাশাপাশি কমলা লাগিয়েছেন ফারুক। ফল দিচ্ছে কয়েকবছর। চারা একবার লাগাতে পারলে তেমন কোনো খরচ নেই। তাই ফলন হলে লাভ থাকে বেশ।
সবুজ কমলায় রঙিন স্বপ্নফারুক বলেন, আমার বাগানে ৩-৪শ গাছ আছে। এবার ফলন কম। গান্ধী পোকা ফুল থেকে গুটি বাঁধা শুরু হলে ফল নষ্ট করে দেয়। এরাই গাছের প্রধান শত্রু। এজন্য ফল এলে মাঝে-মধ্যেই কীটনাশক দিতে হয়।
 
মোট ১৪ হেক্টর জমিতে তার জুম। অন্য সব ফসলের পাশাপাশি কমলায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন ফারুক। গাছ রোপণের চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ফলন আসে। আগাছা পরিষ্কার ছাড়া পাহাড়ি মাটিতে তেমন কোনো পরিচর্যারও দরকার পড়ে না। ফুল আসে বৈশাখ মাসের দিকে আর ফল পাড়া শুরু হয় অগ্রহায়নে।

সিজনে প্রতি একশো কমলা বিক্রি হয় ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। বিক্রি করতে হয় বড়লেখা বাজারে। সেখান থেকে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সবেশেষ সিজনে বাগান থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বেচাকেনা করেছেন বলে জানান।
সবুজ কমলায় রঙিন স্বপ্নফারুক বলেন, গতবছর এতো ফল ধরেছিলো যে ডাল সব নুয়ে পড়েছিলো। দেখেন এখনও সেই বাঁকা ভাব আছে অনেক গাছে। কোনো সারও লাগে না। শুধু ভয় গান্ধী পোকা। বাবার কাছ থেকে জমি পেয়ে নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই বাগান করেছি। আরও বড় করার স্বপ্ন দেখি।

বড়লেখা সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিমল চৌধুরী বলেন, বড়লেখায় কমলা চাষ ক্রমে বাড়ছে। ফলন মোটামুটি। এবছর প্রায় দেড় থেকে ২শ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে কমলা।
 
দেশের কেমিক্যাল মুক্ত কমলার উৎপাদন বাড়লে বিদেশি আমদানি করা কমলার উপর নির্ভরতা অনেক কমবে বলেই মনে করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০১ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।