বাস থেকে নামতেই মোহনীয় এক পরিবেশে আচ্ছন্ন হতে হলো। ওপরে নীলাভ আকাশে ফাঁকে ফাঁকে তখন মেঘের আনাগোনা।
যে সড়কের কথা বলা হচ্ছে, সেটি ফুলবাড়ি থেকে পার্বতীপুর হয়ে সৈয়দপুরে চলে গেছে। গন্তব্য যেহেতু পার্বতীপুর বাস টার্মিনাল তাই বাস থেমে নেমে উল্টো পথেই হাঁটতে হচ্ছে। কিছু দূর এগুতেই সামনে এলো বাংলাদেশে রেলওয়ের কেন্দ্রীয় তেল ডিপো। কী সুন্দর সাজানো গোছানো। ডিপোতে ইয়া বড় বড় তেলের ট্যাংক। একেকটার গায়ে একেক কোম্পানির নাম লেখা। ভেতরে বাগানও রয়েছে সুবিন্যস্ত। তবে মূল ফটকে ‘ফটো তোলা নিষেধ’ নির্দেশনা দেখে সে ইচ্ছে আর হলো না।
ডিপো থেকে মিনিট তিনেক হাঁটলেই পার্বতীপুর বাস টার্মিনাল। চৌরাস্তার দক্ষিণ ও পশ্চিম রাস্তার কোণে টার্মিনাল। ওই দিকটায় বাজারের মতো কিছু ছোট ছোট দোকানি উন্মুক্ত বসার জায়গায় নানা দ্রব্যের পসরা সাজিয়েছেন। কেউ কলা, আনারস। কেউবা মাছ, কেউ আবার সবজি। সঙ্গে আছে পান-সুপারির দোকানও।
বাজারে শুকনা সুপারি বা কাঁচা সুপারির বাহারি উপস্থাপন সচরাচরই দেখা যায়। তবে এ যে পচা সুপারি। হ্যাঁ, প্রশ্ন আসতেই পারে, যে পচা সুপারি বাজারে বিক্রির জন্য? কিন্তু যাদের মাথায় এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তাদের জন্য আশ্চার্যকর হলেও সত্যি সুপারিগুলো পচাই। সঙ্গে অপরিচিত দুর্গন্ধও আছে। প্রথম দেখে অনেকেই আক থু বলে হয়তো দৌঁড়েও যেতে পারেন। কিংবা নাক চেপে তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করবেনই। কিন্তু খাওয়ার জন্য এ সুপারি পানিতে পচানোই হয়।
দেশে পান-সুপারি বা সুপারি অনেকেই খাবারে পর ড্রেজার্ট হিসেবে ব্যবহার করেন। অনেকে আবার দিনব্যাপী ইচ্ছার উদ্রেক হলেই মুখে পুরে দেন। এজন্য সঙ্গে থাকে পানের প্যাকের কিংবা সুপারির কৌটা। এটা চিরচেনা দৃশ্য।
কেউ পছন্দ করেন শুকনো শক্ত সুপারি, কেউবা কাঁচা সুপারি। আবার এ পচা সুপারিও অনেকের পছন্দ। কেননা, এ সুপারির কষ নেই, আবার খেতেও মজা বেশি। প্রথমে একটু গন্ধ নাকে এলেও কিছুক্ষণ পর থাকে না। এটা খেতে একদম নারকেল চিবোনোর মতো অনুভূতি।
দেশের উত্তরাঞ্চলে এ সুপারি বেশি বিক্রি হয়। তবে প্রায় সব অঞ্চলেই কিছু কিছু লোকে এটা খায়। পচা বলতে আক্ষরিক অর্থেই কিন্তু এটা পচা নয়। বাজারের যখন কাঁচা সুপারি শেষ হয়ে যায়, তখনই কেবল এ সুপারি পাওয়া যায়। এর দামও বেশি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈশাখ মাস থেকে কার্তিক, অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত এ সুপারি বাজারে চলে। কেননা, বৈশাখ মাসেই কাঁচা সুপারি শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে পৌষ-মাঘ মাসের দিকে ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে পানিতে চুবিয়ে রাখেন। তিন-চার মাস কখনো কখনো ছয়-সাত মাসও পানিতেই রাখা হয়। এতে সুপারির ওপরের ছোবলা পচে যায়, আর ভেতরের কষ বের হয়ে যায়। তবে এর গুণগত মানের কোনো হেরফের হয় না। খেতেও অনেক মজা।
পার্বতীপুরের সরকার পাড়ার ব্যবসায়ী দীপ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, একটা কাঁচা সুপারি আড়াই থেকে সাড়ে তিন টাকায় কেনা হয়। এক্ষেত্রে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন বাজার অথবা স্থানীয়ভাবেও কেনা হয়। এরপর তা পচিয়ে বাজারে বিক্রি করা হয় চার থেকে সাড়ে চার টাকায়। এক বছর পানিতে ভিজিয়ে রাখলেও নষ্ট হয় না। প্রচলিত অর্থে একে ‘মজা সুপারি’ বলা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৬ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
ইইউডি/আরবি